অনলাইন ডেস্ক:
চলমান ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকে কোনোভাবে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করার চেষ্টা হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যেই দলটির কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে ধর্ষণবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের আধাডজন নেতা এমনটা জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, ধর্ষণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরি করতে করণীয় নিয়ে ভাবছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও আরো বেশি তৎপর করতে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ওই নেতাদের মতে, ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি। এটি প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরিই প্রধান কাজ। এই জনসচেতনতা তৈরিতে দল-মত-নির্বিশেষে সব কর্মসূচিকে স্বাগত জানানো হবে। কিন্তু ধর্ষণবিরোধী প্রতিবাদের নামে সরকার পতনের আন্দোলনের কোনো ষড়যন্ত্র হলে তা কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, নারী নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়ও আলোচনা হয়। সেখানে নারীর কল্যাণে কর্মসূচি গ্রহণের প্রস্তাব দেন দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি। দলের সভাপতি শেখ হাসিনাও বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন।
সূত্রগুলো জানায়, চলমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ ধর্ষণবিরোধী সচেতনতা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। এরই মধ্যেই সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে মানববন্ধন ও মিছিলের কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে এ ধরনের কর্মসূচির ব্যাপকতাও বাড়ানো হবে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে পরিস্থিতির ওপর কঠোর নজর রাখা হচ্ছে। ধর্ষণবিরোধী প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্য কোনো সরকারবিরোধী গোষ্ঠী যেন যুক্ত হতে না পারে বা উসকানি দিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে না পারে সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘যে ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলো কমিয়ে এনে শূন্যের কোঠায় নিয়ে যেতে সরকার অবশ্যই সচেষ্ট। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অহর্নিশ পরিশ্রম করছেন। সরকারের নজরদারিরও কোনো কমতি নেই। ধর্ষণ আদিম যুগ থেকেই আছে। এমন নয় যে এটি ২০২০ সালে শুরু হয়েছে।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। ফলে মেয়েরা এসব ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে এবং গণমাধ্যমে এগুলো ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। আজ থেকে কত বছর আগে নোয়াখালীর প্রেক্ষাপটে শহীদুল্লা কায়সার তাঁর ‘সংশপ্তক’ উপন্যাসে হুরমতির কথা লিখেছিলেন? তখন কিন্তু বিষয়গুলো জনসমক্ষে তেমন প্রকাশ পেত না।
মতিয়া চৌধুরী আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময় একটি ধর্ষণের ঘটনাও দেখাতে পারবেন না যে ধর্ষককে আইনের আওতায় আনা হয়নি। অথচ বিএনপি আমলে আলোচিত মাহিমা, ফাহিমা, পূর্ণিমা, হনুফা, রজুফা ধর্ষণ মামলাগুলোর একটিরও বিচার হয়নি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ চৌধুরী তো বেমালুম ধর্ষণের ঘটনাগুলো অস্বীকার করে বলেছিলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু বর্তমান সরকার ধর্ষণের ঘটনাগুলোতে দলীয় পরিচয় বিবেচনা না করে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে।’ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সহিংস করার অপচেষ্টা করছে বিএনপি। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে সজাগ রয়েছে। আন্দোলনের নামে যেকোনো ধরনের অস্থিরতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টির অপপ্রয়াস জনস্বার্থে সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে।’ তিনি গতকাল শনিবার বিকেলে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘ধর্ষণ কমাতে জনসচেতনতা তৈরি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এমন আবহ তৈরি করতে হবে যেন প্রতিটি নির্যাতিত নারী মেডিক্যাল চেকআপ, পুলিশি সহায়তা নির্ভয়ে চাইতে পারে। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে। যতই সংসদে আইন প্রণয়ন হোক, আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ভূমিকা রাখতে হবে।’ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। সরকারপ্রধান যখন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, তখন এ ধরনের আন্দোলন করার নৈতিক অধিকার কারো থাকা উচিত না। এই আন্দোলনকারীরা করোনা মহামারির দীর্ঘ সময়ে কোনো মানবিক কর্মসূচি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। এখন আন্দোলনের নামে তারা মূলত ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পাঁয়তারা করছে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘দল-মত নির্বিশেষে ধর্ষণের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। এটা শুধু সরকারের কাজ নয়।’ ধর্ষণ ইস্যুতে আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের মতো সামাজিক অস্থিরতা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়। ধর্ষকদের কোনো দলই আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার কথা নয়। ধর্ষণের ঘটনায় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে তো ধর্ষকরা মনে করবে তাদের পার পাওয়া সহজ হবে। যারা এখন সরকার পতনের আন্দোলনের কথা বলছে তারা সব রাজনৈতিক ইস্যুতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন তারা ধর্ষণের মতো একটি সামাজিক ইস্যুতে ভর করে ষড়যন্ত্র করছে।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন খুবই জরুরি। নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে যেন না দেখা হয় সে ধরনের জনসচেতনতা আমাদের তৈরি করতে হবে।’