মুক্তিযুদ্ধে পকিস্তান হানাদার বাহিনীর সহযোগী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার বা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির আইনজীবী।
সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে তারা একথা বলেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিলে ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে শেখ হাসিনার সরকার। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এতে বলা হয়, ‘যেহেতু সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রহিয়াছে যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং এর অঙ্গ-সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল। যেহেতু সরকার বিশ্বাস করে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গ-সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত রয়েছে, সেহেতু সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ধারা ১৮ (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সব অঙ্গ-সংগঠনকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং উক্ত আইনের তফশিল-২ এ বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সব অঙ্গ-সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।’
নিষিদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে শিশির মনির বলেন, ‘৫ আগস্ট তৎকালীন সরকারের পতন হয় এবং জামায়াতে ইসলামির নেতৃবৃন্দকে সেনা প্রধানসহ মহামান্য রাষ্ট্রপতির দপ্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরবর্তীতে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করার ক্ষেত্রেও জামায়াতে ইসলামি গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পলন করে।
কার্যত জামায়তে ইসলামির সঙ্গে বর্তমান সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।’
নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী শিশির মনির।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ আইনজীবী বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে সকল প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হয়েছে। আজ (সোমবার) সরকারি ছুটির দিন।
তাদের (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) দেয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা আশা করছি আগামীকাল (মঙ্গলবার) অথবা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তারা (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে অতীতে জারি করা (নিষিদ্ধের) প্রজ্ঞাপনটি বাতিল ঘোষণা করবে। তারা (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) বিষয়টি আমাদের নিশ্চিত করেছেন।’
জোমায়ত-শিবির নিষিদ্ধের যৌক্তিক বা আইনি ভিত্তি ছিল না দাবি করে শিশির মনির বলেন, ‘শুধুমাত্র একটি গণঅভ্যুত্থানের কর্মকাণ্ডকে ভিন্নদিকে প্রবাহিত করার জন্যই এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল বলে আমরা মনে করি। বর্তমান সরকার, প্রশাসনও তাই মনে করে।’
নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার হয়ে যাওয়ার পর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের মামলাটি আপিল বিভাগে পুনরুজ্জীবিত করা হবে বলে জানান শিশির মনির।
তিনি বলেন, ‘নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহারের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপিল বিভাগে আবেদন দায়ের করে নিবন্ধন মামলাটি পুনরায় শুনানি করার জন্য আবেদন করবো। আমরা আশা করি বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচারের স্বার্থে সুপ্রিম কোর্ট ন্যায় এবং নীতির পক্ষ অবলম্বন করবেন। এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির নিবন্ধন আইনগতভাবে ফিরিয়ে দিবেন, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।’ সংবাদ সম্মেলনে শিশির মনিরের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আসাদ উদ্দিন, মুজাহিদ মুম্না ও যায়েদ বিন আমজাদ।
এক রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরবর্তীতে হাইকোর্ট রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামায়াতে ইসলামী। গত বছরের ১৯ নভেম্বর সে আপিল খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।