উখিয়া, কক্সবাজার, প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের উখিয়ার সোনাইছড়ি গ্রামের ছোট্ট মাঠটিতে শখের বসেই ফুটবল খেলতেন সাহেদা আক্তার রিপা। সেই রিপাই এখন দেশের কোটি মানুষের কাছে পরিচিত নাম। পাঠক নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন কে এই রিপা?
দুইদিন আগে রাজধানীর কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার যে মুকুট পরেছে বাংলাদেশ, সেই সাফল্যের অন্যতম কারিগর এই সাহেদা আক্তার রিপা।পাঁচ গোল করে জিতে পেয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার, হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও। গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে রিপার বন্দনা।উখিয়া উপজেলার জালিয়া পালং ইউপির সোনাইছড়ি গ্রামের একটি মাটির ঘরে স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে বাস করতেন জামাল আহমেদ। ছেলে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করেন। বলতে গেলে ছেলের একার আয়েই টানাটানির সংসার ছিল রিপাদের। সেই বাড়িতে এখন দালান উঠেছে। মাটির ঘর থেকে জামালদের পরিবারের দালানে ওঠার পুরো কৃতিত্ব তার ফুটবলার কন্যা সাহেদা আক্তার রিপার।‘
২০১৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলাম। চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম আমরা। প্রধানমন্ত্রী আমাদের ১০ লাখ টাকা করে পুরস্কার দিয়েছিলেন। ওই টাকা দিয়ে আমি বাড়িতে একতলা দালান করেছি। এই তো এ বছর অক্টোবরে আমরা মাটির ঘর ছেড়ে দালানে উঠেছি’- বলছিলেন সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা খেলোয়াড়।উখিয়ার সোনাইছড়ি থেকে কীভাবে দক্ষিণ এশিয়ার শিখরে উঠলেন ১৭ বছর বয়সী এই কিশোরী? গল্পটা তার কাছ থেকেই শুনুন, ‘আমাদের বাড়ির সামনে ছোট্ট একটি মাঠ আছে। সেখানেই আমরা খেলাধুলা করতাম। আমি ফুটবল খেলতাম। এরপর ২০১৬ সালে বিকেএসপিতে পরীক্ষা দিয়ে টিকে যাই। পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে আমি বিকেএসপিতে ভর্তি হই। বাফুফে ক্যাম্পে আছি ২০১৮ সাল থেকে। আমি এই টুর্নামেন্টের আগে দুটি সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছি এবং একটি অনূর্ধ্ব-১৬ এর বাছাই টুর্নামেন্ট খেলেছি।’
বাংলাদেশের এই যে শিরোপা জয় সেখানে আপনার ভূমিকা ছিল অনেক। ৫টি গোল করেছেন, সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। কেমন অনুভূতি আপনার?‘অনুভূতি অবশ্যই ভালো। আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি, সেজন্য অনেক খুশি। আমার বাবা-মা এবং পরিবারের অন্যরাও অনেক খুশি হয়েছেন’- জবাব রিপার।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাবা-মা কি বলেছেন? ‘তারা বলেছেন বাড়িতে গেলে আমাকে গিফট দেবে। কারণ, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দুবার কথা বলেছি। তারা অনেক আনন্দ করেছেন’- রিপার চোখেমুখেও আনন্দ।আগামীর স্বপ্নের কথা জানাতে গিয়ে সাহেদ আক্তার রিপা বলেন, ‘আমার এখনও জাতীয় দলে খেলা হয়নি। জাতীয় দলে সুযোগ করে নিতে চাই এবং সুযোগ পেলে জাতীয় দলের জার্সিতে গোল করে দেশকে জেতাতে চাই।’দেশের অনেকের খেলাই ভালো লাগে সাহেদ আক্তার রিপার। তবে তাকে বেশি মুগ্ধ করে মিডফিল্ডার মনিকা চাকমার খেলা। রিপা বলেন, ‘মনিকার খেলা আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।ভালো লাগার কথা,এমন অনুভুতি এলাকাবাসীরও।