অনলাইন ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার কঠোর সমালোচনা করে এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আইন প্রয়োগে কঠোর হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যারা ব্যবসা করছে, তারা দু-পয়সা বেশি আয়ের জন্য খাদ্যে ভেজাল দেয় বা পচা-বাসি খাবার পরিবেশন করে থাকে। এভাবে নিজের লাভের জন্য মানুষের ক্ষতি আর করবেন না।’
গতকাল বৃহস্পতিবার ‘জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান।
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে খাদ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন প্রান্তে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বত্তৃদ্ধতা করেন। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১০০টি খাদ্যশিল্পে ‘সেফ ফুড প্ল্যান’ যে নেওয়া হচ্ছে, এটি সারা দেশেই বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন এবং একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত এটা নিয়ে যেতে হবে। আর দেশে কেন্দ্রীয়ভাবে ফুড টেস্টিং ল্যাব প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা বিভাগীয় পর্যায়েও করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে একটি অনুরোধ করব—নিরাপদ খাদ্যের জন্য কেবল ল্যাবরেটরি টেস্ট করলেই হবে না, সেই সঙ্গে আরেকটি কাজ করতে হবে—সুষম খাদ্য কিভাবে গ্রহণ করতে হবে তা প্রচার করতে হবে।’ তিনি বলেন, খাদ্যটা কিভাবে নিলে সেটা সুষম হবে, সেটা যেমন মাথায় রাখতে হবে, তেমনি প্রচারেরও ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুষম খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্তভাবে জরুরি। জনগণের, বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু ও গর্ভবতী নারীরা পুষ্টির জন্য কিভাবে এই সুষম খাবার গ্রহণ করবে, সে বিষয়ে তাদের সচেতন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন তিনি।
খাদ্যের সঙ্গে সঙ্গে যেন পুষ্টির নিশ্চয়তা থাকে, সে জন্য তাঁর সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অতিদরিদ্র জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় দেশের ২২০টি উপজেলায় ছয় ধরনের অণুপুষ্টিসমৃদ্ধ ‘পুষ্টিচাল’ বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১০০টি উপজেলায় পুষ্টিচাল বিতরণ করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এই কর্মসূচি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া হেলদি মার্কেট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট গ্রেডিং করে গ্রিন জোন প্রতিষ্ঠা, নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যা যা করা প্রয়োজন তার সব কিছুই করা হবে।
সরকারের ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’ প্রণয়নের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেজাল ও দূষণমুক্ত নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিতকরণে পিওর ফুড অর্ডিন্যান্স, ১৯৫৯ রহিত করে নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ প্রণয়ন করেছি।’ তিনি আরো বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইনের অধীনে ২০১৫ সালে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি সমন্বয়কারী কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে এরই মধ্যে তিনটি বিধিমালা, সাতটি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন থেকে ভোগ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে খাদ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইউম সরকার, কর্তৃপক্ষের সদস্য রেজাউল করিম, শাহনওয়াজ দিলরুবা খান, মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ, ড. আব্দুল আলীম ও কর্তৃপক্ষের সচিব আব্দুল নাসের খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।