Friday , 22 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

দুদকের দৃষ্টি আকর্ষণ,, নিমাই চাঁদ দেবনাথ বাবুর এক কলমের খোঁচায় চলে গেল সরকারের ১৬.৫৫ একর খাস জমি

স্টাফ রিপোর্টারঃ নোয়াখালী সদর উপজেলার ১১নং নেয়াজপুর ইউনিয়নের জাহানাবাদ মৌজার সি এস ১৮৬ দাগের খাস ১৬.৫৫ একর জমি সদর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসার নিমাই চাঁদ দেবনাথের এক কলমের খোঁচায় অত্যান্ত সু-কৌশলে ব্যক্তি মালিকানা খতিয়ান সৃজন করে দিয়েছেন বলে তথ্য প্রমাণে জানা যায়।

তথ্য সূত্রে জানা যায় ১৯৫৫ সালের পূর্ব বঙ্গীয় প্রজাসত্ব বিধিমালা ৪২ (এ) বিধিমতে রুজুকৃত মিস কেইস নং-৭১৪/২০, মৌজা-জাহানাবাদ, জে.এল নং-১১৫, উপজেলা-সদর, জেলা-নোয়াখালী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বাহাদুরের নামে বিভিন্ন ব্যক্তি নামে মাঠ জরিপ রেকর্ড হওয়া ১৬.৫৫ একর রেকর্ড হওয়া খাস ভূমির জন্য সদর উপজেলার মৃধার হাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস কর্তৃক সহকারী ভূমি কর্মকর্তা বাদী হইয়া ৬ জনের বিরুদ্ধে ৪২ (এ) বিধিমতে মিস কেইস রুজু করেন। বিভিন্ন ধার্য তারিখে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানীর পর বিজ্ঞ অফিসার মোঃ সামছুল আলম (উপ-সচিব), জোনাল সেটেমেন্ট অফিসার, নোয়াখালী জোন তার রায়ে বলেন, নালিশী ১৮৬ নং দাগের ১৬.৫৫ একর ভূমি জেলা জরিপী ০০ খতিয়ানে সরকারের নামে রেকর্ড ছিল। পরবর্তীতে সরকারের নামে এম আর আর ১নং খতিয়ানে উক্ত ১৮৬ দাগের ১.৩৩ একর ভূমি রেকর্ড প্রতিয়মান হয়। অবশিষ্ট ভূমি বিভিন্ন বাটা দাগ সৃষ্টি হয়ে ব্যক্তিমালিকানা রেকর্ড হয় বলে পক্ষগণ দাবী করেন। বাটা দাগের কোনো নকশা পক্ষগণ উপস্থাপন করতে পারেননি। ব্যক্তিমালানা রেকর্ডীয় বাটা দাগগুলো অস্তিÍত্ববিহীন এবং এম আর আর রেকর্ডে ১৮৬ দাগের ব্যক্তি মালিকানা রেকর্ড নেই।

প্রতিপক্ষগণ সাবেক ১৮৬ দাগের ভূমির জন্য কোনো ভূমিকর পরিশোধ করেননি, তবে করেছেন অস্তিত্ববিহীন বাটা দাগের জন্য। তিনি তার রায়ে আরও উল্লেখ করেন, অস্তিত্ববিহীন বাটা দাগের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার এই আদালতের নেই। বরং ইহা বিজ্ঞ আদালতের বিচার্জ্য বিষয়। অস্তিত্ববিহীন বাটা দাগের এম আর আর রেকর্ডের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আপত্তি অফিসার ১৭৬ ও ১২২ নং আপত্তি মামলার একতরফা শুনানির মাধ্যমে নালিশী সাবেক ১৮৬ দাগের ভূমি প্রতিপক্ষগণের নামে রেকর্ড সম্পূর্ণ তঞ্চকপূর্ণভাবে করেছেন। সেই জন্য বাদীপক্ষের নামীয় রেকর্ড পূর্ণ বহালের দাবী গ্রহণযোগ্য বলে রায় দেন এবং তঞ্চকপূর্ব রেকর্ড বাতিলের জন্য বলেন।

তথ্যে আরো জানা যায়, স্মারক নং-৩১.৪২.৭৫৮৭.০০০.১৬.০০১.২০.৪১৪/১, তারিখ-২৬ শ্রাবণ ১৪২৭ বাংলা, ১০/০৮/২০২০ইং সহকারী কমিশনার ভূমি, নোয়াখালী সদর, জাহানাবাদ মৌজার সি এস ১৮৬ দাগের খাল শ্রেণির ভূমি পুনরায় ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত করার জন্য জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার নোয়াখালী বরাবরে স্মারক নং-৩১.৪২.৭৫৮৭.০০০১৬.০০১.২০ লেখেন। তাতে ১৫.২২ একর ভূমি তঞ্চকমূলকভাবে বিভিন্ন বাটা দাগ কেটে ৫. ৬. ১৪৪. ১৬৫. ১৬৭. ১৬৮. ১৬৯. ১৭০.১৭১.১৭২.১৭৩.১৭৪.১৭৫.১৭৬.১৭৭.১৭৮.১৭৯.১৮০.১৮১.১৮২.১৮৩.১৮৪.১৮৫.১৮৬.১৮৭.১৯২.১৯৯.২০৪.২০৯.২৩৭.২৩৯.৩০৯.৩৮৫ নং খতিয়ানে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে এম আর আর রেকর্ড চূড়ান্ত হয়। এবং নোয়াখালী সদর উপজেলার ১৪৩ নং জাহানাবাদ মৌজার ১৮৬ দাগে ব্যক্তি মালিকানা রেকর্ডভুক্ত সৃজিত এম.আর.আর খতিয়ানের ১৫.২২ একর সরকারি খাস খতিয়ানে আনয়নের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রেরণ করেন।

পরবর্তীতে কমিশনার ভূমি নোয়াখালী সদর স্মারক নং-২৭, তারিখ-১০/০৮/২০২০ইং ফারুক হোসেন নামীয় ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মৃধার হাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে চিঠি দেন। জাহানাবাদ মৌজার সি এস ১৮৬ দাগের খাল শ্রেণির খাস খতিয়ানভুক্ত করার জন্য প্রতিবেদন পাঠান। প্রতিবেদন পাঠানোর পর কানুনগো মিলন কান্তি চাকমা সদর উপজেলা ভূমি অফিস তার ১০/০৮/২০২০ ইং তারিখে প্রতিবেদনে লিখেন অত্র অফিসে রেডর্ক পরীক্ষান্তে দেখা যায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন সঠিক আছে এবং পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে ও এম আর আর খতিয়ানের ভূমি ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত করা যেতে পারে।

তথ্য মতে আরো জনা যায় জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার নোয়াখালী দপ্তর থেকে মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য স্মারক নং-৩১.০৩.৭৫০০.০৩০.৬৫.০০৪.১৯-৪৪২, তারিখ-৩১/০৮/২০২০ইং উপজেলা ভূমি অফিস নোয়াখালী সদরের ১০/০৮/২০২০ইং এর স্মারক নং-৩১.৪২.৭৫৮৭.০০০১৬.০০১২০-৪১৪ উপর্যুক্ত বিষয় ও নোয়াখালী সদর উপজেলাধীন ১১৫নং জাহানাবাদ মৌজার সি এস ১৮৬ নং দাগের খাস শ্রেণি ভূমি পুনরায় ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত গ্রহণের জন্য বলেন।

কিন্তু সব আইনকানুন অমান্য করে ১নং খাস খতিয়ানের ১৫.২২ জমি নোয়াখালী সদর উপজেলার সেটেলমেন্ট অফিসের দায়িত্বরত অফিসার নিমাই চাঁদ দেবনাথ উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা, কানুন গো, সেটেলমেন্ট অফিসার (উপ-সচিব) সব কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট, মতামত, আদেশ উপেক্ষা করে ভুয়া তঞ্চকপূর্ণ লাখ লাখ টাকা অর্থের বিনিময়ে (প্রতিটি খতিয়ানে ৫-১২ হাজার) সরকারকে বিবাদী না করে স্মারক নং ৩১.০৩.৭৫৮৭.০৩০.২০.০০১.১২-০৬, তারিখ-২৩/০১/২০২২ইং ৩১/০৮/২০২২ ইং তারিখের স্মারক নং-৩১.০৩.৭৫০০.০৩০.৬৫.০০৪.১৯-৪৪২ স্মারক আদেশ দেখিয়ে সমস্ত সরকারি নথীপত্র গোপন করে নিমাই চাঁদ দেবনাথ সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার (অঃ দাঃ), নোয়াখালী সদর মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিল প্রসঙ্গে ৩১/০৮/২০২০ ইং ৩১.০৩.৭৫০০.০৩০.৬৫.০০৪.১৯-৪৪২ নং স্মারক আদেশ ০৩/০১/২০২২ ও ০৪/০১/২০২২ইং শুনানির দিন ধার্য্য করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দখল করা দালাল শ্রেণির মালিকদের হাজির করে সরকার পক্ষকে না জানিয়ে খতিয়ান দেওয়ার জন্য আদেশ দেন। তিনি রায়ে উল্লেখ করেন, সাবেক নকশা ১৮৬ দাগের ভূমি খাল শ্রেণিভুক্ত দেখা গেলেও এম.আর.আর রেকর্ড এর পূর্বে উক্ত ভূমি পয়াস্তি হয়। সে কারণে এম আর আর রেকর্ড এর পূর্বে কবলিয়ত ও মালিকানা মোতাবেক সাবেক ১৮৬ দাগ হতে বাটা দাগ সৃজন করে প্রতিবেদনে উল্লেখিত এম আর আর খতিয়ান ১৮৬ সালের ব্যক্তি মালিকানা রেকর্ড হয় বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু ডি এস নকশা অধ্যবদি কোনো বাটা দাগের অস্তিস্ত নাই। তিনি আরো উল্লেখ করেন কিছু জমি এম আর আর মালিকের বিরুদ্ধে ৩য় পক্ষ ৪৪০, ১৯৭৯ দেওয়ানী মোকদ্দমা করে এবং ১৬/০৪/১৯৮৬ ইং সালে রায় প্রাপ্ত হন। কিন্তু জমির মূল মালিক বাংলাদেশ সরকারকে পক্ষগণ বিবাদী করেননি তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। প্রতিবেদনে কয়েক এম আর আর খতিয়ান বাংলা ১৪২৫ সাল পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করেন বলে জানান। সূত্রে আরো জানায় এম আর আর খতিয়ানে জোর করে খাজনা পরিশোধ করা তৎকালীন জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম স্মারক নং-০৫. ৪২. ৭৫০০. ০২২. ১৮. ০০১.২০.২৯২ স্মারক ১১/০৮/২০২০ইং ৫১১৯০১ হতে ৫১২০০০ নাম্বার ক্রমিক পর্যন্ত ১০০টি জোড়া পাতার সম্বলিত দাখিলা বইয়ের ৫১১৯২৬, ৫১১৯২৭ ও ৫১১৯৩০ সহ (ঐ এম আর আর খতিয়ানে খাজনা নেওয়া হয়েছে) ১০০টি দাখিলা বাতিল ঘোষণা করেছিলেন তঞ্চকতার মাধ্যমে জোরপূর্বক দুষ্কৃতিকারীরা কেটে নেওয়ার জন্য।

গত ফেব্রুয়ারী ২০২১ইং মহামান্য হাইকোর্টে জৈনক শামছুন নাহার বেগম ২৫৮৯/২১ মোকদ্দমা করেন। সে মোকদ্দমায় সরকারকে বিবাদী করা হয়। বিবাদী করার পর মহামান্য আদালত এক রুল জারি করেন এবং ৪ সাপ্তাহের মাধ্যমে উক্ত রুলের জবাব দেওয়ার জন্য আদেশ দেন।

নোয়াখালী বারের একজন বিজ্ঞ আইনজীবির সাথে এই বিষয়ে কথা বলে জানা যায় সরকারের স্বার্থরক্ষার জন্য সব দপ্তরের বিভিন্ন প্রতিবেদন কাগজপত্রের সাথে সেটেলমেন্ট অফিসার নিমাই চাঁদ দেবনাথ বাবুর প্রতিবেদনে কোনো মিল নেই। তিনি সরকারের স্বার্থরক্ষার জন্য দৃষ্টি দেননি।

১১নং নেয়াজপুর ইউনিয়নের জাহানাবাদ মৌজার ১৮৬ দাগের বর্তমানে খতিয়ান নেওয়া কিছু ভুক্তভোগীর সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হলে তারা জানান নিমাই চাঁদ দেবনাথ, অফিস ও এলাকার কিছু দালালের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা দেওয়া ছাড়াও ৪২টি খতিয়ান বন্টন করার সময় জমি ভেদে ৫ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে।

এই বিষয়ে নিমাই চাঁদ দেবনাথের সদর উপজেলা কার্যালয়ে কয়েকবার যাওয়ার পরেও তাকে না পেয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হয়েছেন এই প্রতিবেদক। শুধুমাত্র অফিসে থাকা একমাত্র ব্যক্তি আদিল বলেন স্যার, বিভিন্ন উপজেলা অফিসে দায়িত্বে থাকার জন্য রীতিমত অফিসে উপস্থিত হতে পারেন না। আপনারা এসেছেন বলে জানাবো।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply