অনলাইন ডেস্ক:
দক্ষিণ কোরিয়া তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে গুরুত্ব দিয়েছে বাংলাদেশকেও। দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার ওই কৌশল প্রকাশ করে। সেখানে দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কের প্রসঙ্গ এসেছে। তবে এ অঞ্চলে সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে ভারতের প্রসঙ্গ।
দক্ষিণ কোরিয়া তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলপত্রে বলেছে, ‘পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও দক্ষিণ এশীয় অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহায়তাসহ বর্ধিত অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা বিশ্বাসযোগ্য ও পারস্পরিক লাভজনক অর্থনৈতিক অংশীদারি অনুসরণ করব। ’
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নির্ধারণ করেছে। চীন মনে করে, তাকে ঠেকানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল সাজিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ অন্য দেশগুলোর ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের দিকে দৃষ্টি রাখার পাশাপাশি নিজের কৌশল নির্ধারণে কাজ করছে।
এদিকে বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-গুন সম্প্রতি এ দেশের সঙ্গে কোরিয়ার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি উন্নয়ন সহযোগিতা পাওয়া দেশগুলোর তৃতীয় শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) খাতে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে কোরিয়ার বিনিয়োগ পাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশে পঞ্চম বৃহত্তম বিনিয়োগকারী।
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ কোরিয়া তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলপত্রে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল দেখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সেখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাধীনতা, শান্তি ও সমৃদ্ধিকে। এ ছাড়া সহযোগিতার নীতি হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে সবাইকে নিয়ে চলা, বিশ্বাস ও পারস্পরিক সহযোগিতাকে।
কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া কোনো দেশকে লক্ষ্য করে বা কোনো দেশকে বাদ দিয়ে তার কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেনি। দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, ‘আমরা আমাদের সহযোগিতার কৌশল ও নীতির সঙ্গে সংগতি আছে এমন দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। আমাদের অভিন্ন স্বার্থের জন্য একটি অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ার লক্ষ্য অর্জনে আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ও এর বাইরের দেশগুলোর সঙ্গেও কাজ করতে প্রস্তুত আছি। ’
দক্ষিণ কোরিয়া তার ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনে চীনকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে ঘোষণা করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, আন্তর্জাতিক রীতিনীতির আলোকে পারস্পরিক সম্মান ও সাড়াদানের ভিত্তিতে অভিন্ন স্বার্থে চীনের সঙ্গে আরো পরিপক্ব সম্পর্ক গড়তে চায়।
কৌশলপত্রে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়েছে, বিশ্বের জনগোষ্ঠীর ২৪ শতাংশ এই অঞ্চলে বসবাস করে। ভৌগোলিকভাবে এই অঞ্চলের অবস্থান পূর্ব এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়ার মধ্যে। কোরিয়া প্রজাতন্ত্র (দক্ষিণ কোরিয়া) দক্ষিণ এশিয়ায় তার শীর্ষ অংশীদারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে।
সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় প্রসঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার কৌশলপত্রে বলা হয়েছে—প্রথমত, অভিন্ন মূল্যবোধের শীর্ষ আঞ্চলিক অংশীদার হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া ভারতের সঙ্গে তার বিশেষ কৌশলগত অংশীদারিকে এগিয়ে নেবে। ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর দেশ। তথ্য-প্রযুক্তি ও মহাকাশ প্রযুক্তিতে ভারতের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ব্যাপক।
দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আমরা দক্ষিণ কোরিয়া-ভারত সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি (সেপা) উন্নীতকরণের মাধ্যমে জোরালো অর্থনৈতিক সহযোগিতার ভিত্তি আরো মজবুত করব। এ ছাড়া আমরা ভারতের সঙ্গে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে বিনিময়ের মাধ্যমে কৌশলগত যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করব।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, সার্ক ও আইওআরএর মতো উপ-আঞ্চলিক কাঠামোগুলোর মাধ্যমে সহযোগিতা কর্মসূচি নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে এই অঞ্চলের উন্মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক কাঠামো বিনির্মাণে দক্ষিণ কোরিয়া ভূমিকা রাখবে। উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়া ২০১৮ সালে ভারত মহাসাগরীয় দেশগুলোর জোট আইওআরএতে ‘ডায়ালগ পার্টনার’ এবং ২০০৬ সালে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্কে পর্যবেক্ষক হয়েছে।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন