অনলাইন ডেস্ক:
ঢাকা, সিলেট ও কুমিল্লার তিনটি আসনের উপনির্বাচনে তৃণমূলে দীর্ঘদিন ধরে দলের রাজনীতি করছেন, এমন নেতাদের মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এসব আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্য ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশাজীবী নেতারা মনোনয়ন চাইলেও শেষ পর্যন্ত তাঁদের কেউই মনোনয়ন পাননি। ঢাকা-১৪ আসনে আগা খান মিন্টু, সিলেট-৩ আসনে হাবিবুর রহমান এবং কুমিল্লা-৫ আসনে আবুল হাসেম খানকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।
গতকাল শনিবার সকালে দলটির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। এতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্যাহ, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও মুহম্মদ ফারুক খান।
বৈঠকের সূত্রগুলো জানায়, তিন আসনে দলের মনোনয়নপ্রার্থী ছিলেন ৯৪ জন। কিন্তু বৈঠকে শুধু গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনকে নিয়ে আলোচনা হয়। প্রয়াত সংসদ সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করলেও দীর্ঘদিন ধরে দল করছেন, এমন নেতাদের সমর্থন দেন মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা। দলের নেতাদের মূল্যায়ন হলে সংগঠন শক্তিশালী হয় বলেও আলোচনা হয়।
সূত্র মতে, ঢাকা-১৪ আসনে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঢাকার আদি বাসিন্দা ও দলের প্রবীণ নেতা হিসেবে শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান মিন্টুর প্রতি সমর্থন জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আগা খান মিন্টু স্বাধীনতার আগে মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ১৯৯৩ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার ছিলেন।
সিলেট-৩ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমানকে বেছে নেন মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা। হাবিবুর রহমান আওয়ামী পরিবারের সন্তান। তিনি দীর্ঘদিন লন্ডনপ্রবাসী হলেও রাজনীতিতে সক্রিয়। লন্ডনে ও সিলেটে নিয়মিত দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতেন, নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। প্রার্থী হওয়ার আগে তিনি যুক্তরাজ্যের পাসপোর্ট সারেন্ডার করে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়েছেন। এসব বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয় এবং শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা তাঁকেই প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেন।
সূত্রগুলো জানায়, কুমিল্লা-৫ আসনে বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসেম খানকে প্রার্থী মনোনীত করার ক্ষেত্রে তাঁর দীর্ঘদিন ধরে দল করার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এর আগে তিনি বুড়িচং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলেও দলের একটি অংশের বিরোধিতার কারণে নির্বাচিত হতে পারেননি। এ বিষয়টিও মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ওঠে। পরে বোর্ডের সদস্যরা দলের পুরনো এই নেতাকে মূল্যায়ন করার পক্ষে সায় দেন।
আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লা-৫ আসনে আবুল হাসেম খানকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণার পর বুড়িচং উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিল করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারাও। হাসেম খানকে শুভেচ্ছা এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অন্যতম সাজ্জাদ হোসেন। এ ছাড়া মাহতাব হোসেন, আবদুল জলিলসহ বেশ কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা হাসেম খানকে অভিনন্দন জানিয়ে তাঁর সঙ্গে থাকার কথা জানিয়েছেন।
সিলেট অফিস জানায়, সিলেটের মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রলীগের একসময়ের নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হন। প্রবাসী এই নেতা ২০১৪ ও ২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন না পেলেও ২০১৪ সালের পর থেকে তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে নিয়মিত ছিলেন। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হলে তিনি কার্যকরী সদস্য হন।
হাবিবুর রহমান হাবিব বলেছেন, ‘যাঁরা মনোনয়ন চেয়েছিলেন তাঁরা সবাই যোগ্য। তাঁরা সবাই আমার নেতা। তাঁদের সবাইকে নিয়েই আমি কাজ করতে চাই।’ প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ কয়েসকে স্মরণ করে তাঁর জন্য সবার কাছে দোয়া চান এই নেতা।