আজ ৩১ অক্টোবর ২০২১, জাতীয় দৈনিক সকালবেলা এবং The Daily Morning Times এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক, মহাসচিব, বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ, ইংরেজী সংবাদ পাঠক, বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা এবং লায়ন এ্যাডভোকেট সৈয়দ এনামুল হকের ‘শোকাবহ অক্টোবর’ মাসের ৩১তম দিন। গত ২৭ অক্টোবর ২১ তাঁর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা হয়। ২০২০ সালে ২৭ অক্টোবর তিনি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমাদের সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। দেখতে দেখতে একটি বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু মনে হচ্ছে, এই তো সেদিন স্যারের সাথে কথা হল, স্যার আমাদের ডেকে উপদেশ দিলেন, সংবাদ সংক্রান্ত কত কথা বললেন। সেসব কথা আজ স্মৃতি হয়ে হৃদয়ে গেঁথে আছে। একটা চির সত্য কথা যে, এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে। কিন্তু তার কর্মময় জীবনে যতটুকু আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন তা আমাদেরকে উৎসাহ ও প্রেরণা জোগাবে চিরকাল। স্মৃতির পাতায় আজ সেসব কথা মনে পড়ে।
স্যার সৈয়দ এনামুল হক ছিলেন সাংবাদিক গড়ার সুদক্ষ একজন কারিগর। স্যারের হাত দিয়ে অনেক সাংবাদিক তৈরী হয়েছে। সেসব সাংবাদিক আজ বিভিন্ন নামী দামি পত্রিকায় কাজ করছেন। অনেকে হয়েছে সম্পাদক। স্যারের স্বহস্তে গড়া দৈনিক সকালবেলা’র বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ের প্রতিটি স্থানেই রয়েছে তাঁর হাতের স্পর্শ, পদচিহ্ন। কিভাবে সংবাদ লিখতে হয়, তা তিনি হাতে-কলমে শিখিয়ে দিয়েছেন। বলতেন, যেকোন সংবাদের শিরোনাম এবং ভূমিকাটাই হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুইটা বিষয় হচ্ছে সংবাদের ভিত্তি। এটা যদি আকর্ষণীয় না হয়, তাহলে মানুষ তোমার লিখিত সংবাদ পড়া তো দুরের কথা, ছুঁয়েও দেখবে না। আজ স্যারের সেসব উপদেশমূলক বাণীর কথা মনে হলে নির্বাক হয়ে যাই। স্যার সৈয়দ এনামুল হক ছিলেন সততার একজন সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। সময়ানুবর্তিতা ছিলো তাঁর চরিত্রের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য। অন্যায়ের বিপক্ষে তিনি ছিলেন সাহসী, নির্ভীক, আপোসহীন একজন কলমযোদ্ধা। হলুদ সাংবাদিকতাকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করতেন তিনি। হারিয়ে গেছেন কিংবদন্তিতুল্য একজন সম্পাদক। আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি আমাদের সবার প্রিয় স্যারকে, যিনি ছিলেন আমাদের উৎসাহ-অনুপ্রেরণার একমাত্র বাতিঘর। সবসয়ম মনে পড়ে স্যার এর কথা, আমাদের সামনে দিয়ে মনে হয় তিনি তাঁর কক্ষে প্রবেশ করছেন। এই বুঝি বেঁজে উঠবে কলিং বেল। স্যার অফিসে এসে সবাইকে তাঁর কক্ষে ডাকলেন। কিছু জরুরী কাজ সবাইকে ভাগ করে দিলেন। একজনকে বাইরে পাঠালেন। সেদিন তিনি ছিলেন খুব গম্ভীর এবং বিমর্ষ। তাঁর মুখাবয়বে ছিলো চিন্তার বলিরেখা। স্যার যাকে যে কাজ দিয়েছিলেন সেসব কাজ শেষ হয়েছে কিনা তা দেখতে আসেন নিউজ কক্ষে। তখন আমরা সবাই দাঁড়িয়ে গেলে স্যার বললেন, তোমরা কাজ কর। তিনি চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখছেন, এই দেখাই যে শেষ দেখা তা আমরা বুঝতে পারিনি। যখন তিনি অফিস থেকে বেরিয়ে যান তখন এক নজর নিউজ কক্ষের দিকে তাকালেন এবং বললেন, তোমরা মন দিয়ে কাজ করবে। একা একা হেঁটে বেরিয়ে চলে গেলেন। এই যাওয়াই তাঁর শেষ যাওয়া। আজ সম্পাদক মহোদয়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহপাক স্যারকে জান্নাতবাসী করুন-আমিন।