সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার পাঠলাই নদীতে চুনাপাথর ও কয়লাবাহী নৌকা থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র নাম ভাঙ্গিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছে একটি প্রভাবশালী চাদাবাজ চক্র রিফাত গং, এতে প্রতিনিয়তই বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন বিআইডব্লিউটিএর প্রকৃত ইজারাদার কতৃপক্ষ, ব্যবসায়ীকভাবে হচ্ছেন বদনামী।
আর এসব চাঁদাবাজদের এহেন কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নৌ পরিবহনের মাঝি ও শ্রমিকেরা। প্রতিদিন নৌ পরিবহনের মাঝিদের কাছ থেকে অবৈধভাবে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চাঁদাবাজ চক্রটি, প্রকৃত ইজারাদার ব্যাবসায়ীকভাবে হচ্ছে প্রচুর পরিমানে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত ।
২৪/১০/২০২২ তারিখ রোজ সোমবার স্বরজমীনে তদন্ত সাপেক্ষে পাওয়া যায়,
তাহিরপুর উপজেলার ১নং উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের পাঠলাই নদী দিয়ে চলাচলকারী মালবাহী চলতি নৌকা থেকে দিনে-দুপুরে এবং রাতের আদারে জোরপূর্বক চাঁদাবাজি করছে রিফাত গং চক্রটি। চাঁদা দিতে রাজি না হলে নৌকায় থাকা শ্রমিকদের লাঞ্ছিত এবং মারধর করে চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা, এমন অভিযোগ নৌ পরিবহন শ্রমিকদের এবং একই অভিযোগ বিআইডব্লিউটিএর প্রকৃত ইজারদারগণের। আর এসব উপরি চাদাবাজদের চাঁদাবাজির ফলে ব্যবসা পরিচালনায় ক্ষতিগ্রস্তসহ নিরাপদভাবে কয়লা ও চুনাপাথর পরিবহনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে এবং প্রকৃত বিআইডব্লিউটিএর ইজারদার হচ্ছে বিড়ম্বনার শিকার।
প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন নৌ- পরিবহন শ্রমিকের, তারা জানান, বিআইডব্লিউটিএ এর নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত হারে ইজারাদারের নিযুক্ত কর্মীরা টোল আদায় করেন । আমরা নৌ-শ্রমিক এব মালিকরাও তাদের আচরণে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। ইজারাদার কতৃপক্ষ তাদের নির্ধারিত সরকারি রেটে টোল আদায় করেন, এটা উনাদের ব্যবসায়ীক সততা।
কিন্তু অতিদুঃখের বিষয় বিআইডব্লিউটিএর জেটি পার হবার পর আবার একপক্ষ নৌকায় উঠে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে পূনরায় চাদা দাবী করে, নৌশ্রমিকদের কাছে। চাদা না দিলে, নেমে আসে শারিরীক নির্যাতন।
নৌযান মাঝিদের হয়রানি ও চাঁদাবাজী বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এইরুটে চলাচলকারী নৌ পরিবহন মাঝি ও শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীগণ।
বিআইডব্লিউটিএর প্রকৃত ইজারাদার ও এদের এহেন কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ। এ বিষয়ে তাহিরপুর থানায় মৌখিক অভিযোগও করেন ইজারাদার কতৃপক্ষ।
পাতলাই নদীর বিআইডব্লিউটিএর ইজারাদার কতৃক দায়িত্ব প্রাপ্ত পরিচালক অলিউডর রহমান জানান, আমরা বিআইডব্লিউটিএর নীতিমালা কতৃক সরকারি নির্ধারিত হারে প্রতিটি নৌকা থেকে টোল আদায় করা হয় এবং নৌ শ্রমিকদের কাছে টোল আদায়ের রিসিট দেওয়া হয় । আমরা সার্বিকভাবে নৌ পরিবহন-শ্রমিক, মাঝি এবং ব্যবসায়ীদের কে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।
কিন্তুু ইদানিং আমাদের বিআইডব্লিউটিএর ইজারদারের নাম ভাঙ্গিয়ে একটি পক্ষ বেপরোয়া ভাবে চাদা আদায় করছে, চাদা না দিলে শারিরীক ভাবে লাঞ্চিত করছে নৌ-শ্রমিকদের এবং ব্যবসায়ীদের কে। রাতের বেলায় বেশি উৎপাদ করে চক্রটি।
গত কয়েকদিন পূর্বের ঘটনা, আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে একটি নৌকায় চাদা দাবী করে রিফাত গং চক্রটি। তৎক্ষনাৎ ভুক্তভোগী আমাকে কল দিয়ে জানান বিষয়টি। ভুক্তভোগী মোবাইল ফোনে আমাকে জানান, রিফাত নামের এক ব্যক্তি চার/পাচ জনকে সঙ্গে নিয়ে নৌকায় উঠে এসে বিআইডব্লিউটিএর নামে চাদা দাবী করে এবং ভুক্তভোগী তাদেরকে বলে, টোল দিয়ে আসছি, বলে আমাদের দেওয়া রিসিট দেখায়। চাদাবাজরা রিসিটটি জোরপূর্বক ছিনায়ে নিয়া যায়। এ বিষয়ে আমার কাছে ভুক্তভোগীর কল রেকর্ড আছে। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আপনারাও রেকর্ড টি শুনেছেন।
গতকাল ২৩/১০/২০২২ তারিখ রাতের ঘটনা, রিফাত গংয়ের কর্মী সামাদ নামের একজন চাদাবাজ আমাদের বিআইডব্লিউটিএর ইজারদার কতৃক নিযুক্ত কর্মী জিলানী কে মোবাইল ফোনে খুব খারাপ ভাষায় গালাগালি করে এবং নদীতে চাঁদাবাজি করবে এবং চাঁদাবাজি চালিয়ে যাবে বলে হুমকি দেয়। সামাদ কতৃক আমার কর্মী জিলানীকে কিভাবে হুমকি দামকী দিয়েছে, বাজারে এসে জিলানীকে মারধর করবে, তা আপনারাও কল রেকর্ডে শুনেছেন। সামাদ কতৃক মোবাইল ফোনে হুমকির বিষয়টি আমরা তাহিরপুর থানা কতৃপক্ষ কে জানাবো এবং এ বিষয়ে রিফাত গংয়ের বিরুদ্ধে অতিদ্রুত প্রাননাশের হুমকি এবং চাঁদাবাজি আইনের আওতায় মামলা দায়ের করবো বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন তাহিরপুর পাঠলাই নদীর বিআইডব্লিউটিএর প্রকৃত ইজারদার কতৃপক্ষ পরিচালক অলিউডর রহমান অলি।
ইজারাদার কতৃপক্ষ পরিচালক অলিউডর রহমান অলি আমাদের প্রতিবেদকের কাছে প্রমাণস্বরূপ রিফাত গংয়ের মোবাইল ফোনে হুমকির রেকর্ডের কপি এবং ভুক্তভোগীর ভিডিও ক্লিপ রেকর্ড কপি তুলে দেন।
বিআইডব্লিউটিএর ইজারদারের নাম ভাঙ্গিয়ে চাদা আদায়কারী রিফাত গংদের সন্ধানে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, রিফাত পূর্ণ নাম আবুল হাসনাত রিফাত, তিনি সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তরং শ্রীপুর নুয়াবন গ্রামের সামসু মিয়ার পুত্র আবুল হাসনাত রিফাত।
ইজারাদার কতৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, রিফাত গংয়ের নেতৃত্বে, ইজারাদারের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি সঙ্গে জড়িত আছেন তরং গ্রামের নাজিম তালুকদারের পুত্র সামাদ, তরং গ্রামের গোলে রব্বানীর পুত্র চালাতুন, মালিকের পুত্র কাইকুল, ইসলাম উদ্দিনের পুত্র মামুন, শিগরামপুর গ্রামের মজু মিয়ার পুত্র জাকির প্রমুখ।
বিআইডব্লিউটিএর নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজির বিষয়ে আবুল হাসনাত রিফাতের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি বিআইডব্লিউটিএর ইজারদারদের সঙ্গে অংশীদার ছিলাম, এখন আর তাদের সাথে আমি নাই। আমি নদীতে কোন ধরনের চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত না, চাদাবাজদের কে আমি ঘৃনা করি।
তিনি আরোও জানান, আমি আমার পারিবারিক ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। নদীতে কে কি করে আমার জানা নেই।
পাটলাই নদীতে ইজারাদারের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজির বিষয়ে তাহিরপুর থানা ট্যাকেরঘাট ফাড়ি ইনচার্জ খায়রুল আলম এর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পাটলাই নদীতে ইজারাদারদের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজির বিষয়টি ইজারাদার কতৃপক্ষ মোবাইল ফোনে মৌখিকভাবে আমাকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ইজারাদার কতৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনানুগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। আমি বর্তমানে ছুটিতে আছি।