দেশে মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের বেশি এখন তরুণ, যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। সংখ্যার হিসাবে তা চার কোটি ৭৪ লাখ। জনশুমারি ও গৃহগণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উঠে আসা এসব তথ্য বিশ্লেষণে খাত বিশ্লেষকরা বলছেন, তরুণ কর্মক্ষম শক্তিকে কাজে লাগানোই দেশের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড (তারুণ্যশক্তির লভ্যাংশ) একটি দেশে থাকে সর্বোচ্চ ১০ বছর।
এই সময়ে সঠিক পরিকল্পনা ও দক্ষতার মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন করা না গেলে এই তারুণ্যশক্তি হয়ে উঠবে দেশের জন্য বোঝা।
আজ ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘জেন্ডারসমতাই শক্তি : নারী ও কন্যাশিশুর মুক্ত উচ্চারণে হোক পৃথিবীর অবারিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন’। জনশুমারি ও গৃহগণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে কর্মক্ষম মানুষ ৬২ শতাংশ, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে; সংখ্যায় যা ১০ কোটি ৫০ লাখ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারের চাহিদা মাথায় রেখে তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। কেননা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতির এ সুবিধা বেশিদিন থাকে না।
এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান বাজারব্যবস্থা সামনে রেখে দেশে তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে।
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছে। এতে অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সামনে রেখে তারুণ্যকে চাকরির বাজারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।
জনশুমারি ও গৃহগণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১। এর মধ্যে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ১০.১০ শতাংশ।
২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৯.১৭ শতাংশ। আর ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী ৯.১৭ শতাংশ। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের তরুণ হিসেবে ধরা হয় দেশে। সে হিসাবে তারুণ্যের হার ২৭.৯৬ শতাংশ, সংখ্যায় যা পৌনে পাঁচ কোটি। এ ছাড়া দেশে প্রবীণ বা ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক কম; মোট জনগোষ্ঠীর ১১.৬৬ শতাংশ, সংখ্যায় এক কোটি ৯৮ লাখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (আইএসআরটি) অধ্যাপক সৈয়দ শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সরকারকে এখন তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগানোর জন্য প্রযুক্তিগত শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। বিশেষ করে দক্ষ মানবসম্পদের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি সারা বিশ্বে জনশক্তি রপ্তানি করে তাদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘একসময় আমরা বলতাম পরিবার পরিকল্পনার কথা। এখন আমাদের ভাবতে হবে পপুলেশন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। জনসংখ্যার সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারলেই দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা যাবে।’
দেশে পুরুষ আট কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার ২০৩ জন, যা মোট জনসংখ্যার ৪৯.৫১ শতাংশ। নারী ৫০.৪৩ শতাংশ, আট কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ১২০ জন। পুরুষের চেয়ে নারী ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৯১৭ জন বেশি। মোট জনসংখ্যার মধ্যে গ্রামে বসবাস ১১ কোটি ৬১ লাখের। শহরে বসবাস পাঁচ কোটি ৩৮ লাখ মানুষের।
সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর জন্য প্রথমেই করতে হবে দক্ষতার উন্নয়ন। আর শুধু দক্ষতার উন্নয়ন করলেই হবে না, এর সঙ্গে শিল্পনীতি ও বাণিজ্যনীতির সমন্বয় করতে হবে। এসব বিষয়ের সমন্বয় এখন হচ্ছে না। আগামী দিনে এর সমন্বয় জরুরি, যাতে শিক্ষিত তরুণরা শিক্ষাজীবন শেষে বেকার হয়ে না থাকে। তবে বিষয়টি অনেকটা চ্যালেঞ্জিং।’