অনলাইন ডেস্ক:
ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী মনিরুল ইসলাম এবং নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনে একই দলের প্রার্থী আলহাজ আনোয়ার হোসেন হেলাল বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছেন। এদিকে প্রহসনমূলক নির্বাচন আখ্যা দিয়ে ফল বাতিল এবং ফের ভোটের দাবিতে আজ রবিবার নওগাঁর আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলায় আধাবেলা হরতালের ডাক দিয়েছে জেলা বিএনপি। অন্যদিকে ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ফের ভোটের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী সালাহ্ উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি ভোটে অনিয়ম ও কারচুপির প্রতিবাদে ওই নির্বাচনী এলাকায় আজ রবিবার দুপুরে মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছেন।
ঢাকায় কাজী মনিরুল ইসলাম পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৬৪২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী সালাহ্ উদ্দিন আহম্মেদ পেয়েছেন দুই হাজার ৯২৬ ভোট। নওগাঁয় নৌকার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হেলাল পেয়েছেন এক লাখ পাঁচ হাজার ৫২১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী আলহাজ শেখ রেজাউল ইসলাম রেজু পেয়েছেন চার হাজার ৬০৫ ভোট।
এদিকে ঢাকা-৫ আসনে মাত্র ১০.৪৩ শতাংশ ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সেখানে চার লাখ ৭১ হাজার ৭১ জনের মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৪৯ হাজার ১৪১ জন। এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা নির্বাচনে ভোটারদের কম অনুপস্থিতির বিষয়ে বলেন, এই খণ্ড নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ কম থাকে। এ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য সরকার পরিবর্তনের সুযোগ নেই। দুই-আড়াই বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন, সে জন্য হয়তো প্রার্থী বা ভোটারদের মধ্য তেমন আগ্রহ থাকে না। পাশাপাশি করোনার একটি বিষয় তো রয়েছেই। এ জন্য মানুষ আতঙ্কিত। এর মধ্যেও নির্বাচনের ট্রেন্ড ভালো। গতকাল শনিবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কোথাও কোনো অসুবিধার সৃষ্টি হয়নি। আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি।’ সিইসি আরো বলেন, ‘আগেই আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে ইভিএম ব্যবহারের। আমরা ব্যালটের পরিবর্তে ইভিএমে ভোটগ্রহণে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তা ছাড়া ভোটারদের মধ্যেও ইভিএম নিয়ে অনাগ্রহ এখন আর নেই। ইভিএমে তাদের অনীহা নেই। আগ্রহ আছে।’ ঢাকা-৫ আসনে ভোটারদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে, আইডি কার্ড কেড়ে নেওয়া হযেছে—এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইডি কার্ড কেড়ে নেওয়ার কোনো রিপোর্ট আমাদের কাছে নেই। বাইরে কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেছে, এমন তথ্যও নেই।’
এদিকে গতকাল বিকেলে যাত্রাবাড়ীতে প্রধান নির্বাচন অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি প্রার্থী সালাহ্ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘নির্বাচনের প্রথম দিন থেকে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা আমাকে নানাভাবে হয়রানি করছে। মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেও আমাকে বাধা দেওয়া হয়েছে। যখনই গণসংযোগে গিয়েছি, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছি। আর তখনই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার নেতাকর্মীদেরও বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের দুই মহিলা এজেন্টকে অপদস্থ করে বের করে দেওয়া হয়। প্রায় ৯৫ শতাংশ কেন্দ্রেই এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। প্রিসাইডিং অফিসার, নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং অফিসারকে বারবার অবহিত করলেও তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেননি।’
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন, যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান ভাণ্ডারীসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হলে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব কেন্দ্রের বাইরেই নৌকা সমর্থকদের মহড়া। বুথগুলোতে ধানের শীষ এজেন্টদের দেখা মেলেনি। কয়েকটি কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের পুলিশের সামনেই আওয়ামী লীগের কর্মীরা বের করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
এদিকে দনিয়ার বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৪ নম্বর কেন্দ্রে ৪০০ ভোটারের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো ভোট পড়েনি। দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত সারুলিয়ার দারুচ্ছুন্নাহ ফাজিল মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে ২২৫ ভোট কাস্ট হতে দেখা গেছে। কদমতলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ৪ নম্বর কক্ষে ৪০১টি ভোটের মধ্যে পড়েছে ছয়টি। দুপুর ২টার দিকে সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুই হাজার ৩৭৬ ভোটারের মধ্যে ১০৫টি ভোট পড়েছে বলে জানানো হয়।
এ ছাড়া নির্বাচনী কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্ট আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ঢিলেঢালা দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। ডগাইর দারুচ্ছুন্নাত ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা নারী ভোটার আয়শা আক্তার বলেন, ‘কেউ তো ভোট দিতে আসছে না। এমন জানলে তো আসতাম না। আগে যেমন ভোট একটা উৎসব ছিল, সেটা নেই।’
এদিকে নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনকে প্রহসনমূলক আখ্যা দিয়ে ভোট বর্জন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বিএনপির দলীয় প্রার্থী শেখ রেজাউল ইসলাম রেজু। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দ্বিতীয় দফায় আত্রাইয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এই বর্জনের ঘোষণা দেন।
এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট হচ্ছে না—এমন অভিযোগ তুলে আত্রাই বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ধানের শীষের প্রার্থী রেজু। তিনি বলেন, ভোটের শুরু থেকেই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। নির্বাচন কমিশনকে বারবার বলার পরও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।