রাজধানী ঢাকার বাজারগুলোতে ডিমের দাম দুই সপ্তাহ ধরে লাফিয়ে বাড়ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ডিম এখন ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত বছর এই সময়ে প্রথমবারের মতো ডিমের ডজন ১৬০ টাকায় ওঠে। খামারি বা উৎপাদন পর্যায় থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা বাজারে একযোগে দাম বেড়েছে।
রাজধানীর উত্তর বাড্ডার ব্যবসায়ী গোলাম রহমান বলেন, ‘দাম বাড়ার কারণে এখন আমাদেরই প্রতি পিস ডিম পাইকারিতে কিনতে হচ্ছে প্রায় ১৩ টাকা ৫০ পয়সা করে। ৭০ টাকার নিচে বিক্রি করলে লাভ হয় না তেমন। ব্যবসায় টাকা খাটিয়ে কিছু লাভ না করলে তো দোকান চালানো যাবে না।’ দাম বাড়ায় বিক্রিও কমে গেছে বলে তিনি জানান।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে প্রতি হালি ডিমের দাম প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর একই সময়ের তুলনায় প্রতি হালি ডিম ২৫ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
ঢাকার অন্যতম বৃহৎ ডিম সমিতি তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আমান উল্লাহ গতকাল বলেন, মাছ ও মাংসের দাম বাড়তি থাকার কারণে বাজারে ডিমের চাহিদা বেড়েছে। তার ওপর টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ডিমের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর বিরূপ প্রভাবে ডিমের দাম বেড়ে গেছে। আজ (গতকাল) পাইকারিতে ১০০ ডিম বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩৩০ টাকা দরে। এতে প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ছে ১৩ টাকা ৩০ পয়সা করে।
বাজারে দীর্ঘদিন ধরে মাছ ও মাংসের দাম বাড়তি থাকার কারণে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ ডিমের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। সেই ডিমের দামও বেড়ে যাওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছে।
গত বছর ডিমের দামে নৈরাজ্যের কারণে তদারকির মাধ্যমে মূল্য সহনীয় করা হয়েছিল। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গতকাল বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের ডিমের বর্তমান উৎপাদন খরচ না জানালে তো আমরা অভিযানে নামতে পারছি না। কারণ অভিযানে নামতে গেলে আমাদের ডিমের উৎপাদন খরচ সম্পর্কে জানতে হবে। যেহেতু নতুন করে ডিমের বাজার অস্থির হচ্ছে, তাই আমরা শিগগিরই অভিযানে নামব।’
তিনি বলেন, ‘ভোক্তার স্বার্থে ভোজ্য তেল ও কাঁচা মরিচ থেকে শুরু করে অনেক পণ্যের কারসাজি রোধে আমরা অভিযান চালিয়েছি। ডিমের বিষয়টি দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরও আছে। তাদেরও উদ্যোগ নিতে হবে।’
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়াই এর কারণ।
টিসিবির মূল্যতালিকা অনুযায়ী, দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১৭ থেকে ২৩ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১২ শতাংশের মতো বেড়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্রয়লার হাউসের এক ব্যবসায়ী বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির বাজারে তেমন পরিবর্তন নেই। আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা।