ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ
ঠাকুরগাঁও শহরের শহীদ মোহাম্মদ আলী সড়কের দুইটি বিপণিবিতানের মাঝের ফাঁকা সরু গলি থেকে গৃহবধু সান্তনা রায় ওরফে মিলি চক্রবর্তীর (৪৯) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, গত ১০ জুলাই ঠাকুরগাঁও সদর থানায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) নির্মল কুমার রায় বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মৃত গৃহবধু সান্তনা রায় ওরফে মিলি চক্রবর্তী ঠাকুরগাঁও শহরের তাঁতিপাড়া এলাকার সমির কুমার রায়ের স্ত্রী।
মামলায় বলা হয়, গত ৮ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশের জাতীয় সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে জানানো হয় ঠাকুরগাঁও ঠাকুরগাঁও শহরের শহীদ মোহাম্মদ আলী সড়কের দুইটি বিপণিবিতানের মাঝের ফাঁকা সরু গলিতে এক গৃহবধুর লাশ পরে রয়েছে। খবর পেয়ে তৎক্ষণাত ঘটনাস্থলে এসে এক গৃহবধুর লাশ সেখান থেকে উদ্ধার করে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় গৃহবধুর পরিচয় নিশ্চিত করা হয়।
সুরতহাল রিপোর্ট করার সময় গৃহবধুর ডান হাতের কুনই হতে আঙ্গুল পর্যন্ত, বাম হাতের নিচের অংশ, দুই হাতের নক, তালু, আঙ্গুল, পায়ের তালু আঙ্গুল ও বাম হাতের কবজির উপরে সুতা বাধা স্বাভাবিক পাওয়া যায়। তবে মাথার চুল খোপা বাঁদা, ভুরুর চুল, চোখের পাতার লোক আংশিক পোড়া ছিল। এছাড়াও কোমড়ের নিচ অংশ হতে পায়ের তালুর উপরের অংশের বিভিন্ন জায়গায় পোড়ানো ছিল। কপালের চামড়া, জিহব্বা, ঠোট, থুতনি, কান, গলা, বুক, পেট, তল পেট, ডান হাতের বাহু হইতে কুনই পর্যন্ত ও বাম হাতের কুনই হতে কবজি পর্যন্ত এবং যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথ ঝলসানো পোড়া অবস্থায় পাওয়া যায়।
মৃত গৃহবধু সান্তনা রায় ওরফে মিলি চক্রবর্তীর নাক দিয়ে রক্ত ও জিহব্বা বাহিরে দাঁত দিয়ে কামড়ানো অবস্থায় ছিল। মৃতের শরীরে বস্ত্রের ডান হাতের বাহুন জামার কিছু অংশ এবং দুই পায়ের হাটুর নিচে পায়জামার কিছু অংশ পোড়া অবস্থায় দেখা গেলেও পোষাকের বাকি অংশ পুড়িয়া ছাই হওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়।
মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে ময়নাতদন্তের জন্য গৃহবধুর লাশ ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জনের মাধ্যমে বিভাগীয় প্রধান ফরেনসিক বিভাগ দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মৃতদেহের আশপাশে পরে থাকা পোড়া অবস্থায় কেরোসিনের পট, দিয়াশালাই, জুতা, ভেজাইনাল সোয়াব, ভিকটিমের রক্তের সোয়াব, ভিকটিমের বাক্কাল সোয়াব, ভিকটিমের শরীরের ঘামের সোয়াব ও আনুষাঙ্গিক দ্রব্যাদি ক্রাইমসিন টিম সিআইডি’র মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় এবং সেগুলো জব্দ করা হয়।
মামলায় বলা হয়, গৃহবধু সান্তনা রায় ওরফে মিলি চক্রবর্তীর মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য মামলার বাদী ওই গৃহবধুর স্বামী, ছেলে, ভাইসহ আত্মীয় স্বজন ও এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং ঘটনাস্থলের স্থিরচিত্র ক্যামেরায় ধারণ করেন। এছাড়াও গোপনে ও প্রকাশ্যে বিষয়টি তিনি ব্যাপকভাবে তদন্ত করেন।
প্রাথমিক তদন্তের জিজ্ঞাসাবাদে মৃত গৃহবধুর স্বামী ও তার ছেলে জানায়, গত ৭ জুলাই রাত ১০টার দিকে খাওয়া শেষ করে বাড়ির লোকজন ঘুড়িয়ে পড়ে। পরদিন ৮ জুলাই সকাল ৮ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে বাড়ীর লোকজন গৃহবধু গৃহবধু সান্তনা রায় ওরফে মিলি চক্রবর্তীর মরদেহ তাঁতিপাড়াস্থ বাটা শোরুম এবং নির্মাণাধীন ভবনের মাঝে সরু গলিতে পড়ে আছে।
মামলায় আরও বলা হয়, গৃহবধু সান্তনা রায় ওরফে মিলি চক্রবর্তীকে কে বা কাহারা হত্যা করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য তার মরদেহ তাঁতিপাড়াস্থ বাটা শোরুম এবং নির্মাণাধীন ভবনের মাঝে সরু গলিতে ফেলে রাখে এবং প্রাথমিকভাবে এমন তথ্য পাওয়ার পর মৃহের আত্মীয় স্বজনদেরকে অভিযোগ দেয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু তারা অভিযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
তবে ঘটনার দিন অর্থাৎ ৮ জুলাই নিহতের স্বামী সমীর কুমার রায় বলেছিলেন, রাতে একসাথে খাওয়া করে ঘুড়িয়ে পড়ি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মিলি বিছানায় নেই। পরে খোঁজাখুজি বাড়ির পাশের গলিতে তার লাশ দেখতে পাই। কিভাবে এমনটা হলো কিছুই বলতে পারছি না। তবে তিনি দাবি করে বলেন, মিলি চক্রবর্তী দীর্ঘদিন ধরে মানষিক রোগে ভুগছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, গৃহবধু সান্তনা রায় ওরফে মিলি চক্রবর্তী খুব ভালো একজন মানুষ ছিলেন, তিনি স্বাভাবিক ছিলেন। কখনও তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করেননি। তার মৃত্যুটি কেউ মেনে নিতে পারছে না। তাই এই মৃত্যুর মূল রহস্য উদঘাটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ ভুমিকা রাখবে বলে স্থানীয় আশাবাদি।
মামলার বাদী সদর থানায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) নির্মল কুমার রায় বলেন, গৃহবধু সান্তনা রায় ওরফে মিলি চক্রবর্তীর লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে। মনে হয়েছে কে বা কাহারা তাকে হত্যা করেছে এবং ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য লাশ ঐ দুই বিপণিবিতানের মাঝখানের সরু গলিতে ফেলে রেখেছে। তাই সত্য ঘটনা উদঘাটনের জন্যই মামলাটি করেছি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, গৃহবধু সান্তনা রায় ওরফে মিলি চক্রবর্তীর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে আমরা কাজ করছি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এখনও আমরা পাইনি, সেটি পেলে অনেকগুলো বিষয় পরিস্কার হয়ে যাবে। আশা করি খুব অল্পসমের মধ্যে মিলির মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন হবে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।