অনলাইন ডেস্কঃ
দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে থাকা তৃণমূলকে চাঙ্গা করতেই ফের ভোটের মাঠে নেমেছে বিএনপি। প্রায় এক যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির এখন অস্তিত্ব রক্ষাই চ্যালেঞ্জ। সংসদীয় পাঁচ আসনের উপনির্বাচনের ভোট ঘিরে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট আসনগুলোয় নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
প্রায় দেড় বছর পর গত দুই দিন ধরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় আবারও সরব হয়ে উঠেছে। ব্যানার, পোস্টারসহ মিছিল-স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে নয়াপল্টন। গতকাল বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে দলীয় প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার ঘিরে কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এ সময় উত্তেজিত দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সামান্য হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকেই তৃণমূল নেতা-কর্মীরা হতাশায় ভেঙে পড়েন। মামলায় জর্জরিত থাকা নেতা-কর্মীরা ছিলেন দিক-নির্দেশনাহীন।
এরপর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ কয়েকটি সিটি করপোরেশনের ভোটকে ঘিরে কিছু দিন সরব ছিল বিএনপি। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত মার্চ থেকে প্রায় পাঁচ মাস বিএনপির রাজনীতি একরকম বন্ধই ছিল। জাতীয় সংসদের পাঁচ উপনির্বাচনকে ঘিরে আবারও চাঙ্গা হয় বিএনপির রাজনীতি। বিএনপির হাইকমান্ড সূত্র জানায়, পাঁচ উপনির্বাচনে ফলাফল কী হতে পারে তা দলের নেতা-কর্মীরা আন্দাজ করতে পারছেন। তারপরও সব উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ নির্বাচনে যাচ্ছে দলটি। এ ছাড়া ভোট কারচুপি হলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মুখোশ উন্মোচন করার সিদ্ধান্তও বিএনপির। দীর্ঘদিন ধরে প্রাণঘাতী করোনায় সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত ছিল। ভোটকে ঘিরে মাঠের রাজনীতিতে গতিশীলতা ফিরে আসবে বলেও মনে করেন বিএনপি নেতারা।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি একটি উদারপন্থি রাজনৈতিক দল। ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলেও বিশ্বাস করি আমরা। কিন্তু এ মুহূর্তে দেশে ভোটের কোনো পরিবেশ নেই। গত সংসদ নির্বাচনের আগের রাতেই ভোট হয়ে যায়। নানা প্রতিকূলতা জেনেও আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে আসন্ন পাঁচ উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সামনে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও আমরা অংশ নেব। বিএনপি জানায়, ফলাফল যাই হোক শেষ পর্যন্ত তারা ভোটে লড়বে। বিনা চ্যালেঞ্জে তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দেবে না। রাজধানীর দুটি আসনের ভোটকে ঘিরে গণমাধ্যম, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সজাগ থাকবে। সরকারি দল ভোট কারচুপি করলে সেটাও রাজনীতির ইস্যু হিসেবে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। আবার দলের প্রার্থী জিতে গেলে তা-ও কাজে লাগাবে দলটি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিনা চ্যালেঞ্জে কোনো নির্বাচনই আমরা ছেড়ে দিতে চাই না। আমরা জানি, ফলাফল কী হবে। তারপরও নির্বাচনে থাকতে চাই। এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মুখোশ বারবার উন্মোচন করতে চাই। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় নেতা-কর্মীরা এলাকায় স্বাভাবিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারেন না। নির্বাচন উপলক্ষে তারা কিছুটা হলেও এসব কর্মকান্ড স্বাভাবিকভাবে চালাতে পারেন। এটাও একটা ইতিবাচক দিক।
২৮ প্রার্থীর সাক্ষাৎকার : জাতীয় সংসদের পাঁচ আসনের উপনির্বাচন ঘিরে ২৮ প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ড। গতকাল বিকাল ৫টায় ভার্চুয়ালে চার আসনের প্রার্থীরা পার্লামেন্টারি বোর্ডের সামনে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সাক্ষাৎকার দেন। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয় থেকে সব ভার্চুয়ালে এ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্য হিসেবে নিজ নিজ বাসা থেকে এতে অংশ নেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালে যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া যুক্ত হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ২৮ প্রার্থীর সাক্ষাৎকার পর্ব চলে। সংশ্লিষ্ট জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা ভার্চুয়ালে যুক্ত হন। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হতে পারে। এ সময় গুলশান এলাকা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা স্লোগানে মুখরিত করেন।
শুরুতেই ঢাকা-৫ আসনের ছয় প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। প্রার্থীরা হলেন- নবী উল্লাহ নবী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, আকবর হোসেন নান্টু, মো. জুম্মন মিয়া ও আনোয়ার হোসেন সরদার। এরপর ঢাকা-১৮ আসনের ৯ প্রার্থীরা সাক্ষাৎকার দেন। তারা হলেন- মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, বাহাউদ্দিন সাদী, আবু মো. ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, আক্তার হোসেন, আব্বাস উদ্দিন, মোস্তফা জামান ও ইসমাইল হোসেন। এরপর সিরাজগঞ্জ-১ আসনে চার প্রার্থী সাক্ষাৎকার দেন। তারা হলেন- টি এম তাহজিবুল ইসলাম তুষার, রবিউল হাসান, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা ও সেলিম রেজা। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি নেত্রী কনক চাঁপা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেও শেষ পর্যন্ত তিনি তা জমা দেননি। এ কারণে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে চারজনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সর্বশেষ নওগাঁ-৬ আসনে ৯ প্রার্থী সাক্ষাৎকার দেন। তারা হলেন- আনোয়ার হোসেন, মাহমুদুল আরেফিন স্বপন, আতিকুর রহমান রতন মোল্লা, এস এম আল ফারুক জেমস, আবু জাহিদ মো. রফিকুল আলম, শেখ আবদুস শুকুর, শেখ মো. রেজাউল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ও ইছহাক আলী।
বিএনপির দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মারামারি : এদিকে সাক্ষাৎকারকে ঘিরে গুলশান কার্যালয়ের সামনে গতকাল দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, গতকাল বিকাল ৫টার দিকে চার উপনির্বাচনে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার চলাকালীন বাইরে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অবস্থান প্রণ। সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর ব্যানার ও পোস্টার নিয়ে কর্মী-সমর্থকরা স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন গুলশান কার্যালয়ের আশপাশের এলাকা। একপর্যায়ে ঢাকা-১৮ আসনের দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে হাতাহাতি ও পরে মারামারির ঘটনা ঘটে। ওই আসনের প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের সমর্থকরা আরেক প্রার্থী কফিল উদ্দিন আহম্মেদ সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় বলে কফিল সমর্থকরা অভিযোগ করেন। তবে পাল্টা অভিযোগ করেছেন জাহাঙ্গীর সমর্থকরাও। এ ঘটনায় দুপক্ষের কয়েকজন কর্মী আহত হন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এর মধ্যে দুজনের মাথা ফেটে যায়। একজনের মাথা থেঁতলে দেওয়া হয় এবং রক্ত ঝড়তে দেখা যায়। তার গায়ের পাঞ্জাবিও ছিঁড়ে ফেলা হয়।