অনলাইন ডেস্ক:
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জয়পুরহাট জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির নওগাঁর মো. রেজাউল করিম মন্টুসহ তিনজনকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ রায় দেন।
মামলার বাকি দুই দণ্ডিত হলেন মো. নজরুল ইসলাম, মো. শহিদ মণ্ডল। এদের মধ্যে নজরুল ইসলাম পলাতক।
চূড়ান্ত শুনানির পর গত ২৬ এপ্রিল মামলাটির রায় অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল। গত রবিবার মামলাটি কার্যতালিকায় উঠলে ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলায় ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, আবুল কালাম আযাদ ও তাপস কুমার বল। আর আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান ও গাজী এম এইচ তামিম।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রসিকিউটর হায়দার আলী সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘আসামিদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আসামিরা যদি রায়ের বিরুদ্ধে আপিলও করেন, সেখানেও মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকবে বলে আশা করি। রায়ে প্রসিকিউশন সন্তুষ্ট। ’
অন্যদিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ে সংক্ষুব্ধ আসামিপক্ষের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম। তিনি বলেন, ‘যথাযথ বিচার হয়নি। রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করলে তারা খালাস পাবেন। ’
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নওগাঁর মো. রেজাউল করিম মন্টু, মো. নজরুল ইসলাম, মো. শহিদ মণ্ডল ও মো. ইসহাকের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। চার আসামির মধ্যে মো. ইসহাক তদন্ত চলার সময়ই গ্রেপ্তার অবস্থায় মারা যান। অন্য তিন আসামির মধ্যে নজরুল ইসলাম পলাতক।
এক বছর তদন্তের পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তদন্তের সময় ৩১ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। মামলাটি তদন্ত করেন তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন।
তদন্ত প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রসিকিউশন ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর মামলাটি আদালতে দাখিল করে। শুনানি নিয়ে আদালত ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। সাতজনকে হত্যাসহ অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগে সম্পদ ধ্বংসের অপরাধে আসামিদের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ গঠন করা হয়।
আসামিদের মধ্যে রেজাউল করিম মন্টু ১৯৮৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী জয়পুরহাট জেলার আমির ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মন্টু তখন থেকেই জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয়।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে রেজাউল করিম মন্টু নিজ বাড়িতে চলে আসেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে আত্মগোপনে গিয়েছিলেন মন্টু। মামলার বাকি আসামিরাও জামায়াতের সমর্থক বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
দেশ স্বাধীনের পর আসামি রেজাউল করিম মন্টু জয়পুরহাট সদরে বসবাস করতেন। পলাতক নজরুল ইসলাম থাকতেন ঢাকার তেজগাঁও এলাকায়। শহীদ মণ্ডলের বাড়ি নওগাঁর বদলগাছী থানার চাঁপাডাল গ্রামে।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন