জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক কখনোই সম্ভব নয়। সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা এমনটা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের ওই কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে হয়তো বিরোধিতার পারদ ওঠানামা করতে পারে, কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বন্ধুত্ব একটি অবাস্তব আলোচনা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশীদ বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক গড়ে ওঠার কোনো ভিত্তি নেই, এটা অলীক।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, বিএনপি রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করতে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের কথা ছড়াচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই প্রচারণা চলছে। এর লক্ষ্য দুইটি—প্রথমত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের ভোট যেন নৌকায় না পড়ে। দ্বিতীয়ত, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে এতকাল রাজনীতি করে বিএনপির যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে সেটার পরিবর্তন ঘটিয়ে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য আদর্শগত, নীতিগত। আর বিএনপির জামায়াতপ্রীতি, রাজাকারপ্রীতি সবাই জানে। জামায়াতকে রক্ষা করার দায়িত্ব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা ভালোভাবেই পালন করছেন। তাঁদের আসল চেহারা মানুষ চিনে ফেলেছে। এখন সেটা ঢাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাঁদের আর নতুন রূপ ধারণ করার সুযোগ নেই।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, রাজধানীতে জামায়াতের কর্মসূচি পালনে বাধা না দেওয়ার বিষয়টি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির তাৎক্ষণিক একটি প্রতিক্রিয়া। বিশেষ রাজনৈতিক সমীকরণ থেকে এ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো যে নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করতে পারছে তা দেখাতে পেরেছে সরকার।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। তাদের মামলাটি এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন। দল হিসেবে জামায়াতকে এখনো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি আদালত। ফলে তারা দু-একটি কর্মসূচি পালন করলেই এ দিয়ে তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছে বলার কোনো সুযোগ নেই।’
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা খুব ভালোভাবেই জানেন যে জামায়াতে ইসলামীকে কোনো রকমের সুযোগ দেওয়া হবে আত্মঘাতী। ফলে রাজনীতিতে জামায়াত সুবিধা পাবে এমন কোনো পথ তৈরি করে দেবে না আওয়ামী লীগ। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ রক্ষায় যতটুকু না দিলেই নয় তার বেশি ছাড় দেওয়া হবে না।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘জামায়াত বাংলাদেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না। এমন একটি অপশক্তির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্যের কোনো প্রশ্নই আসে না। আমরা খুব ভালো করেই জানি, আমাদের আমলে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের আইনানুগ বিচার সম্পন্ন হয়েছে। জামায়াত ন্যূনতম সুযোগ পেলে প্রতিহিংসার লেলিহান শিখায় আমাদের ওপর চরম আঘাত হানবে। তাদের প্রশ্রয় দেওয়ার অর্থ হচ্ছে আমাদের জীবন হুমকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া।’