Friday , 22 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
জামায়াতকে রাজনৈতিক সুবিধা দেবে না আ. লীগ

জামায়াতকে রাজনৈতিক সুবিধা দেবে না আ. লীগ

অনলাইন ডেস্ক:

জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক কখনোই সম্ভব নয়। সে পথ বন্ধ হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা এমনটা জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের ওই কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে হয়তো বিরোধিতার পারদ ওঠানামা করতে পারে, কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বন্ধুত্ব একটি অবাস্তব আলোচনা।

দলের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে এ দেশে জামায়াতের নেতাকর্মীদের কাছে প্রধানতম শত্রুতে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগ।এক দশক পর গত ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে প্রকাশ্যে সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে জামায়াতে ইসলামী। গত ১০ বছরে দলটির কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগই যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। রাজধানীতে সমাবেশের পরই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে বলে অভিযোগ আলোচনায় আসে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক হারুন অর রশীদের মতে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের সখ্য হলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শ তো আর থাকে না। ফলে এটা কখনোই সম্ভব নয়। জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নৈকট্য চিন্তারও বাইরে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশীদ বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক গড়ে ওঠার কোনো ভিত্তি নেই, এটা অলীক।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল এক বিবৃতিতে জামায়াতের সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতেই বিএনপি নেতারা সব সময় অপপ্রচার চালান এবং সরকারি দলের লোকদের ওপর দোষ চাপিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার উপলক্ষ খোঁজেন।বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য আন্দোলন করেছেন। বিএনপির শাসনামলে পাকিস্তানি দর্শনের রাজনীতি বাংলাদেশে জোরদার হয় এবং জামায়াতে ইসলামীর ক্ষমতায়নপ্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই সঙ্গে বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে ফুলেফেঁপে বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের সচেতন মানুষমাত্রই জানে জামায়াতে ইসলামী হলো বিএনপির বি-টিম।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, বিএনপি রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করতে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের কথা ছড়াচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই প্রচারণা চলছে। এর লক্ষ্য দুইটি—প্রথমত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের ভোট যেন নৌকায় না পড়ে। দ্বিতীয়ত, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে এতকাল রাজনীতি করে বিএনপির যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে সেটার পরিবর্তন ঘটিয়ে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য আদর্শগত, নীতিগত। আর বিএনপির জামায়াতপ্রীতি, রাজাকারপ্রীতি সবাই জানে। জামায়াতকে রক্ষা করার দায়িত্ব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা ভালোভাবেই পালন করছেন। তাঁদের আসল চেহারা মানুষ চিনে ফেলেছে। এখন সেটা ঢাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাঁদের আর নতুন রূপ ধারণ করার সুযোগ নেই।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, রাজধানীতে জামায়াতের কর্মসূচি পালনে বাধা না দেওয়ার বিষয়টি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির তাৎক্ষণিক একটি প্রতিক্রিয়া। বিশেষ রাজনৈতিক সমীকরণ থেকে এ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো যে নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করতে পারছে তা দেখাতে পেরেছে সরকার।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। তাদের মামলাটি এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন। দল হিসেবে জামায়াতকে এখনো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি আদালত। ফলে তারা দু-একটি কর্মসূচি পালন করলেই এ দিয়ে তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছে বলার কোনো সুযোগ নেই।’

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা খুব ভালোভাবেই জানেন যে জামায়াতে ইসলামীকে কোনো রকমের সুযোগ দেওয়া হবে আত্মঘাতী। ফলে রাজনীতিতে জামায়াত সুবিধা পাবে এমন কোনো পথ তৈরি করে দেবে না আওয়ামী লীগ। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ রক্ষায় যতটুকু না দিলেই নয় তার বেশি ছাড় দেওয়া হবে না।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘জামায়াত বাংলাদেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না। এমন একটি অপশক্তির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্যের কোনো প্রশ্নই আসে না। আমরা খুব ভালো করেই জানি, আমাদের আমলে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের আইনানুগ বিচার সম্পন্ন হয়েছে। জামায়াত ন্যূনতম সুযোগ পেলে প্রতিহিংসার লেলিহান শিখায় আমাদের ওপর চরম আঘাত হানবে। তাদের প্রশ্রয় দেওয়ার অর্থ হচ্ছে আমাদের জীবন হুমকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া।’

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply