জামালপুর প্রতিনিধিঃ
একজন নারী রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ২৫০ শয্যার জামালপুর জেনারেল
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বহিরাগতদের হামলা, তিনটি কক্ষ ভাংচুর ও একজন
মেডিক্যাল অফিসারকে মারধর এবং বহিরাগত ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সংঘর্ষের
সময় পুলিশের হাতে একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নির্যাতনের ঘটনায় সাত সদস্যের
একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অন্যদিকে চিকিৎসককের ওপর হামলার ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতা
চিকিৎসক পরিষদ রোববার থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ব্যতীত বহির্বিভাগ ও
বাইরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী দেখা থেকে বিরত থাকার ঘোষণা
দিয়েছেন। ফলে জেলায় চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
শনিবার ( ২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জামালপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জেলা
প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, শেখ
হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের এক
জরুরি বৈঠকে হাসপাতালে হামলার ঘটনা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত
অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠক চলাকালে শুক্রবারের হামলার ঘটনা নিয়ে আলোচনা,
পর্যালোচনা, সিসিটিভি ফুটেজ প্রদর্শন ও বিশ্লেষণ এবং ভুক্তভোগী চিকিৎসক ও
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভিযোগ শোনা হয়। তবে হামলার ঘটনার সাথে জড়িত
বহিরাগতদের পক্ষের কেউ জরুরি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।
বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগ জামালপুরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ কবীর উদ্দিন,
শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ জামালপুরের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. শ্যামল কুমার
সাহা, পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন, সিভিল সার্জন প্রণয় কান্তি দাস,
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক
ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ছানোয়ার হোসেন, সদর
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, ইন্টার্ন
চিকিৎসক রিয়াদ মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।
বৈঠকে হামলার ঘটনা খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসনের উপসচিব পদমর্যাদার একজনকে
সভাপতি করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ওই তদন্ত কমিটি আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে সার্বিক বিষয় তদন্ত করে তাদের
প্রতিবেদন তৈরি করবেন। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতেই ঘটনার সাথে
জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও
সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
জামালপুর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, হাসপাতালে হামলার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করা
হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলাও দায়ের করবো। একই সাথে শনিবার অনুষ্ঠিত জরুরি
বৈঠকে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দু’জন চিকিৎসককে নির্যাতন করার প্রতিবাদে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া
পর্যন্ত চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকা প্রসঙ্গে সহকারী পরিচালক
বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম যাতে স্বাভাবিক হয়ে আসে তা নিয়ে
চিকিৎসকদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।
হাসপাতালের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বহিরাগতরা যেভাবে হামলা করেছিল সময়মত
পুলিশ ঘটনাস্থলে না পৌছলে বড় ধরনের ঘটনা ঘটত।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম খান জানান,
রোগীর স্বজন ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে এবং চিকিৎসকদের
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
এ ঘটনায় হাসপাতালের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ করা হলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।