দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাঙালি জাতিকে আরো ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান, তিনি বলেন, আমরা জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ অতিবাহিত করছি।
এর আগে সংসদে শোক প্রস্তাব গ্রহণের পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী রাষ্ট্রপতির আগমণের ঘোষণা দিলে সশস্ত্র বাহিনীর একটি বাদক দল বিউগলে ‘ফ্যানফেয়ার’ বাজিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানকে সম্ভাষণ জানান।
অধিবেশন কক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রবেশে পর নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সংগীত বাজানো হয়, সংসদে রাষ্ট্রপতির জন্য স্পিকারের ডান পাশে লাল রঙের গদি সম্বলিত চেয়ার রাখা হয়, স্পিকারের অনুরোধের পর রাষ্ট্রপতি তার লিখিত ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন, এ সময় তার মূল বক্তব্য পঠিত বলে গণ্য করার জন্য স্পিকারকে অনুরোধ জানান আবদুল হামিদ
বর্তমান সরকারের বিভিন্ন অর্থনৈতিক উদ্যোগের কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, সরকার ঘোষিত এক লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার কৃষি, গার্মেন্টসসহ ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের সরাসরি উপকারভোগী প্রায় ৭ কোটি ৩২ লাখ ব্যক্তি ও প্রায় ২ লাখ প্রতিষ্ঠান, সরকার কর্তৃক কৃষি উৎপাদনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিগত অর্থবছরে মোট ১৫ হাজার ১৭২ দশমিক ৭৯ কোটি টাকা ভর্তুকি এবং ৩৯ হাজার কোটি টাকা সরল সুদে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে, বিশেষ প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার বীজ, সার এবং কীটনাশক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’-স্লোগান নিয়ে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র আওতায় ৫০ লাখ ১০ হাজারের অধিক নিম্নআয়ের পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল এবং ২৪ টাকা দরে ৫ কেজি আটা বিতরণ করছে, খোলা বাজারে খাদ্য বিক্রয় (ওএমএস) চালু আছে, এ ছাড়া সরকার টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডাল সরবরাহ করছে।
তিনি আরো বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত রয়েছে এবং বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ১৪ লাখ মেট্রিক টন, যা সন্তোষজনক, এ ছাড়া এবারে দেশব্যাপী আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজনমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্লান প্রণয়ন করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’-এর আওতায় ৬৪টি জেলায় প্রায় ৫ হাজার ২৬৩ কিলোমিটার নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখননের কাজ চলছে, ফলে ১০৯টি ছোটো নদী, ৫৩৩টি খাল ও ২৬টি জলাশয় পুনরুজ্জীবিত হবে, এ ছাড়া প্রধান প্রধান নদীসমূহে ড্রেজিং ও নদী ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য প্রদান, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারকরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শ্রমবাজার সম্প্রসারণে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে ৬টি মেট্রোরেল সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম উড়াল মেট্রো ট্রেন চালু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি, ২০৩০ সালের মধ্যে ৬টি এমআরটি’র মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে, তিনি আরো বলেন, সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ শ্লোগান বাস্তবায়ন করা হয়েছে, বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ১০০ ভাগে উন্নীত হয়েছে।
সরকারের যুগোপযোগী ও নারীবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বাংলার নারীরা দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করছে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ২০২২ সালে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা অর্জনের মাধ্যমে নারীরা দেশের জন্য এক অনন্যসাধারণ গৌরব বয়ে এনেছে, তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার এবং তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে এক কোটি ১০ লাখ গ্রামীণ নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে ক্ষমতায়ন করা হয়েছে, সকল নারী উদ্যোক্তাকে ই-কমার্সে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ‘লালসবুজ ডটকম’ এবং ‘ইজয়িতা’ চালু করা হয়েছে,
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’; এ লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৫২৫টি পরিবারের প্রায় ৩৫ লাখ গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে,
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাদায়ক অধ্যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বর্বর হত্যাকাণ্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে শাহাদত বরণ করেছিলেন তাঁর সহধর্মিণী মহীয়সী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, আমি পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন