অনলাইন ডেস্ক: আমরা সবাই সোচ্চার, বিশ্ব হবে সমতার এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস-২০২০ উপলক্ষে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর যৌথ উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার, ০৬ অক্টোবর,২০২০, সকাল ১১টায় এক অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগীতায় বিজয়ী কন্যাশিশুদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি। সভাপতিত্ব করেন জনাব পারভীন আকতার মহাপরিচালক (গ্রেড-১), মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনাব নাছিমা আক্তার জলি, সম্পাদক, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম। অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন শাহিন আক্তার ডলি,নির্বাহী পরিচালক, নারীমৈত্রী ও সহ সভাপতি, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম, ড. আবুল হোসেন, প্রকল্প পরিচালক, নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টোরাল প্রোগ্রাম, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, জনাব মোহিবুজ্জামান, যুগ্ম সচিব,মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জনাব ফরিদা পারভীন, অতিরিক্ত সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জনাব চেমন আরা তৈয়ব, চেয়ারম্যান, জাতীয় মহিলা সংস্থা এবং সাবেক সংসদ সদস্য।
ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি বলেন, কন্যাশিশুদের জীবনের শুরুটা যদি ভালো হয় তাহলে পরিবার সমাজ দেশ ভালো থাকবে। কন্যাশিশুদের উন্নয়নের মাধ্যমেই সবার বৈষম্য দূর করা যায়। শুধু তাই নয় দারিদ্রতা বিমোচনেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমান সরকার দীর্ঘমেয়াদী নারী-শিশুদের সুরক্ষার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গ্রহণ করা হয়েছে, কারিকুলামও পরিবর্তন করে নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরিতে চেষ্টা করা হচ্ছে। নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, যেটা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৩০ সালের নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্য বিবাহ শূণ্যে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে শিশুদেরকে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। এখানে পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। সবাই একসাথে সহযোগিতা করলে নারী ও শিশু নির্যাতন একদিন অবশ্যই বন্ধ করা যাবে। তাই আসুন সবাই একসাথে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ করি।
নাছিমা আক্তার জলি বলেন, করোনা মহামারী পরিস্থিতির কারণে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও কেন্দ্রীয়ভাবে প্রায় ১৫০০ শিশুর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বণার্ঢ্য র্যালীর আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা আশাবাদী একদিন আলো আসবেই। ‘জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম’ কন্যাশিশু তথা নারীর অবস্থা ও অবস্থানের ইতিবাচক পরিবর্তনে কর্মরত সমমনা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের কাজের সমন্বয় এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম। এ বছরের শুরুতে কোভিড-১৯ আমাদের কার্যক্রমকে কিছুটা স্মিমিত করে দিলেও, পরবর্তীতে মহামারীকালে যাতে বাল্যবিয়ে না হয় সেজন্য কাজ করছি। আমরা সকলেই জানি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭৪ সালে প্রথম শিশু নীতিমাল তৈরি হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস-এর সূচনা হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর দিনটিকে জাতিসংঘ কন্যাশিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন। এই অর্জনের পিছনে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সরকারী ও বেসরকারী নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমাদের দেশে কন্যাশিশুদের অবস্থা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভালো নয়। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কন্যাশিশুদের প্রতি বিভিন্নমুখী বঞ্চনা ও বৈষম্য বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন প্রচলিত মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানো।
মোহাম্মদ মোহিবুজ্জামান বলেন, আমি সবাইকে বলব হতাশ না হয়ে, উদ্বিগ্ন না হয়ে সচেতন হই এবং একে অপরকে সহায়তা করি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করছেন সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে আমরা এই পরিসস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে পারব।
ড. আবুল হোসেন বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। এখানে বিভিন্ন সংগঠন থাকলেও সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক। নারী ও শিশুর প্রতি সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সহিংসতা আমাদেরকে বিব্রত করছে। মানুষের মানসিক জগতের পরিবর্তন করতে না পারলে এসব ঘটনার কোনো সমাধান হবে না। তাই স্থানীয় পর্যায়ে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।
শাহীন আক্তার ডলি বলেন, আমাদের সমাজে কন্যাশিশুদের বোঝা মনে করা হয়। কিন্তু কন্যাশিশুরা আজ প্রমাণ করে দিয়েছে তারা বোঝা নয়, সুযোগ পেলে তারাও সমাজের জন্য অবদান রাখতে পারে। বর্তমান সরকার কন্যাশিশুর সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করেছে। শুধু সরকারের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। বেসরকারি উদ্যোগকে আরো জোড়ালো করে তুলতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই কন্যাশিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
চেমন আরা তৈয়ব বলেন, কন্যাশিশুরা জন্মের পরপরই প্রথমে পরিবারেই অবহেলিত হয়। পরিবারে কন্যাশিশুরা যেন মর্যাদা পায় সে বিষয়ে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। শৈশব হচ্ছে পরিপূর্ণ মানুষ হবার মূল ভিত্তি। তাই কন্যাশিশুরা যাতে একটি সুস্থ, সুন্দর শৈশব পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
ফরিদা পারভীন বলেন, অভিভাকদের উচিত শিশুদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া, পারিবারিক সিদ্ধান্তে শিশুদের অংশগ্রহণ বাড়ানো। মতামত দিতে দিতেই তারা নিজেদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একদিন আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে।
পারভীন আকতার বলেন, সঠিক পরিচর্যা ও যত্ন, নির্মল পরিবেশ এবং সম্মিলিত প্রতিবাদ কন্যাশিশুর সম্ভাবনা বিকশিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমান মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রানলয়ের আওতায় বাস্তাবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পসমূহ আপাত দৃষ্টিতে দুঃস্থ ও নারী সমাজের গৃহীত ব্যবস্থা হলেও এর প্রতিটি প্রকারান্তরে আগামী কন্যাশিশুর জন্য একটি সুরক্ষা কর্মসূচি হিসেবে কাজ করছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে কন্যাশিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটছে। এতসব অগ্রগতির পরেও বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যেগুলো কন্যাশিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্থ করছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।