অনলাইন ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সংসদে বলেছনে, বিশ্বব্যাপী এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জনগণের দুর্ভোগ কমাতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘জনগণের দুর্ভোগ কমাতে যা যা করা দরকার আমরা তা করব এবং আওয়ামী লীগ সরকার তা করছে। ’ বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি মুজিবুল হক চুন্নুর আনা একটি প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন।
চুন্নু শিরোনামে প্রস্তাবটি তুলে ধরেন, সংসদের মতামত হচ্ছে কভিড-১৯, বৈশ্বিক অস্থিরতা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জ্বালানি সংকট, দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান উধ্বগতি এসব সমস্যা মোকাবেলায় সরকারের নেওয়া স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই ব্যবস্থা।
সংসদে আলোচনার মাধ্যমে জাতিকে জানাতে হবে।
সংসদ নেতা বছরব্যাপী কভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগগুলি সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশ যাতে খাদ্য সংকটে না পড়ে সে জন্য সরকার এ সব পদক্ষেপ নিচ্ছে। শেখ হাসিনা খাদ্য সামগ্রী উৎপাদনে প্রতি ইঞ্চি জমি ব্যবহার করার আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমদানি পণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ অতিরিক্ত ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিয়মিতভাবে বিস্তৃতভাবে বিশ্লেষণ করছি,’ যোগ করে তিনি বলেন, ‘সরকার গবেষকদের বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করছে না, বরং আমরা নিজেরাই বিশ্লেষণ করছি এবং জনগণের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেই নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছি। ’
দেশের সার্বিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সংসদে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাই হোক, আমি এইটুকু বলতে চাই যে, ইতোমধ্যে কিন্তু প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমাদের নজরদারি আছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে কি রিটার্ণ আসবে এমন প্রশ্নের জবাবে সংসদে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি এখানে একটা কথা বলতে পারি। আমরা এই পর্যন্ত যত প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি অর্থাৎ আমাদের অর্থনৈতিক গতিশীলতা আনতে সেটাকে আমরা সব সময় নজরে রাখি এবং এটাই আমাদের উন্নয়ন। এক্ষেত্রে কোনো প্রজেক্টে আমাদের রিটার্ণ আসবে আমরা কিন্তু সেটার উপর আগে নজর দেই।
তিনি বলেন, আমরা একটা বিশাল প্রস্তাব পেলাম আর ওখান থেকে মোটা কমিশন খাবো সেজন্য প্রজেক্টটা নিলাম সেটা কিন্তু আমরা করি না, করি নাই। এটা কিন্তু জিয়ার আমলে করা হয়েছে, জেনারেল এরশাদের আমলে করা হয়েছে,খালেদা জিয়ার আমলে করা হয়েছে। এর বহু প্রমাণ আমাদের আছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দুর্নীতি হচ্ছে বলে যারা অভিযোগ তোলেন তাদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে দুর্নীতির কথা যারা বলেন এই দুর্নীতির কারনেই তো সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্লান্টের টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মানের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘২৬শে জুন থেকে ২৫শে আগষ্ট পর্যন্ত ৬০ দিনে পদ্মা ব্রিজের টোল বাবদ সর্বমোট আদায় হয়েছে ১শ’ ৩৮ কোটি ৮৪ লক্ষ ৩ হাজার ৮৫০ টাকা। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণ অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য খুব সহজে বাজারে চলে আসছে এবং ওই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ছে। ’ যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও পূরণ করা হয়েছে সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্য যে আজকে করোনা এবং তারপরে এই ইউক্রেনের যুদ্ধ। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ এবং স্যাংশানের কারনে আজকে আমাদেরকে বিপদে পড়তে হয়েছে। আর আমরা না। যেখানে উন্নত দেশগুলো বিপদে,তারাই যেখানে সাশ্রয়ী হচ্ছে। তারা বিদ্যুৎ সীমিত করছে।
করোনা ভাইরাস মহামারি ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তার ফলে স্যাংশান ও পাল্টা স্যাংশানের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এইটুকু বলবো যে, আমরা আমাদের দেশের মানুষের কল্যাণটাই আমাদের কাছে সব থেকে বড়। মানুষের কষ্ট হলে সেটা অন্তত আমার মনে ব্যথা লাগে কারণ আমার বাবা তো এদেশের মানুষের জন্যই তার জীবনটা উৎসর্গ করেছেন। কাজেই আমি মনে করি যে আপনাদেরও সকলের সহযোগিতা দরকার। খালি কতগুলো অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। এটাই আমার কথা।
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন