জবি প্রতিনিধি :
ঢাকার অন্যতম বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার কাজে দিনরাত যারা কাজ করেন তাদের দেখার মতো যেন কেউ নেই। নেই নিজস্ব কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা, হাজিরা ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রহরীদের নেই কোনো চিকিৎসা ভাতা, লোকবল সংকটে নিরাপত্তায় টানাটানি, নেই নির্দিষ্ট কোনো ড্রেসকোড। চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তাই প্রশ্ন নিরাপত্তা প্রহরীদের নিরাপত্তা দিবে কে?
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে ৩২ জন নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেয়া হয়। এখান থেকে ১০ জন নিরাপত্তা প্রহরী বিভিন্ন বিভাগে অফিস সহকারী (এমএলএসএস) হিসেবে কাজ করছেন। বাকি ২২ জন নিরাপত্তা প্রহরীর ১০ জনের চাকরী স্থায়ী হলেও বাকিরা দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে কাজ করছেন। ২২ জন নিরাপত্তা প্রহরীর মধ্যে প্রতিমাসে ৪ জনকে পাঠানো হয় কেরানীগঞ্জের ক্যাম্পাস প্রকল্পের নিরাপত্তা কাজে, বাকি মাত্র ১৮ জন দিয়ে দৈনিক তিন শিফটে চলছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকসহ মোট গেট রয়েছে ৫টি। প্রতি ৮ ঘন্টায় ৬ জন করে ২৪ ঘন্টায় মোট ১৮ জন নিরাপত্তাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন নিরাপত্তা প্রহরীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি ৮ ঘন্টায় মাত্র ৬ জন নিরাপত্তা কর্মীদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়। তারা বলেন, অনেক সময় দেখা যায় রাতের বেলায় পুরো বিজ্ঞান ভবন ও ব্যাংক সংলগ্ন গেইটের দায়িত্বে থাকেন মাত্র একজন নিরাপত্তা প্রহরী। কাজেই ওদিকে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তাদের খোঁজ পেতে পেতে অনেক সময় লেগে যায়। এছাড়াও একজন ব্যাক্তির একই সাথে ৩-৪ টি ভবনের দায়িত্বে পড়ে, খেয়াল রাখতে হয় যা অনেকক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। আবার অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে আমাদেরই সে ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হয়।
দীর্ঘদিন যাবত হাজিরা ভিত্তিতে চাকরি করার পরেও চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় নিরাপত্তা প্রহরীদের মধ্যে একপ্রকার ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। নিরাপত্তা প্রহরীরা বলেন, আমরা এতদিন ধরে চাকরি করে যাচ্ছি আমাদের এখনো স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয়নি, চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় আমাদের চাকরির কোনো নিরাপত্তা নেই, আর্থিক নিরাপত্তা নেই। অস্থায়ীভাবে চাকরিরত অবস্থায় আমার কিছু হয়ে গেলে আমার পরিবারের কী হবে? আরেক নিরাপত্তা প্রহরী জানান, লোকবল সংকট থাকায় আমরা আমাদের পরিবারকে সময় দিতে পারি না, প্রয়োজন হলেও অনেক সময় ছুটি পাইনা আবার ছুটি নিলেও চিন্তা থাকে যে একদিনের বেতন কেটে নেয়া হবে। অপরদিকে কেরানিগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ একরের ক্যাম্পাস প্রকল্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন মাত্র ৪ জন। ৪ জন মানুষ নিয়ে এই বিশাল জায়গার নিরাপত্তা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাদের। দ্রুত চাকরি স্থায়ীকরণ, লোকবল সংকটের দ্রুত সমাধানে নিরাপত্তা কাজে আরও লোকবল নিয়োগ চান নিরাপত্তার কাজে রাত-দিন খেটে যাওয়া এই মানুষগুলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান জানান, লোকবল সংকট, চাকরি স্থায়ীকরণ এসব বিষয়গুলো নিয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি, ফাইল রেডি করেও পাঠিয়েছি এখনো কিছু জানানো হয়নি। লোকবল সংকটের কারণে আমি নিজেও ভুক্তভোগী যেহেতু আমি এই শাখার দায়িত্বে আছি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, পদ বাড়ানো তো আমাদের এখতিয়ারে নেই। এটা সরকার ও ইউজিসির বিষয়। আমরা সবসময় পদ বাড়ানোর বিষয়ে ইউজিসিতে বলে আসছি। পদ বাড়ানো হলে সিনিয়রিটির ভিত্তিতে স্থায়ী করা হবে।