Friday , 22 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
ছয় দফা ‘বাঙালির মুক্তির সনদ’-প্রধানমন্ত্রী
--ফাইল ছবি

ছয় দফা ‘বাঙালির মুক্তির সনদ’-প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক:

ঐতিহাসিক ছয় দফাকে ‘বাঙালির মুক্তির সনদ’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই ছয় দফার মাধ্যমেই বাঙালির স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। তিনি জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করেই বাংলাদেশকে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলায় তাঁর অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা’ শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠানে পূর্বে ধারণকৃত ভাষণে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ছয় দফার ভিত্তিতেই সত্তরের নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হই এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করি। এই ছয় দফার ভেতরেই এক দফা নিহিত ছিল। সেটা অন্তত আমরা পরিবারের সদস্যরা জানতাম। জাতির পিতা সব সময় বলতেন, ছয় দফা মানেই এক দফা। অর্থাৎ স্বাধীনতা। আজকে আমরা সেই স্বাধীন জাতি।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ছয় দফার ভিত্তিতেই সত্তরের নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচন হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়। যেটা পাকিস্তানিরা কোনো দিনই আশা করেনি।

জাতির পিতা মে মাসে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ছয় দফা বাস্তবায়ন এবং জাতির পিতার মুক্তির দাবিতে ৭ জুন আহৃত হরতালে তাঁর মা বেগম ফজিলাতুন নেছার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, এই হরতাল সফল করার জন্য আমার মা বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের চক্ষু বাঁচিয়ে আমাদের ছাত্রদের সঙ্গে, সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে একটা হরতাল সফল করার জন্য অনেক কাজ করেছেন।

মনু মিয়া, আবুল হোসেন, সবুজ, শামসুল হকসহ ১১ জন সেই হরতালে আত্মাহুতি দেন এবং রক্তের অক্ষরে ছয় দফার নাম তাঁরা লিখে যান—বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এরপর জাতির পিতা অসহযোগ আন্দোলন দেন। তারপর সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ—এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। যে ভাষণ আজ বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভাষণ বাঙালি জাতিকে মুক্তির চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। অসহযোগ আন্দোলন থেকে সশস্ত্র বিপ্লব এবং এর মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন আমরা করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই আজকের এই দিনটি আমাদের জন্য এ জন্যই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি এবং জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোনের প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছয় দফার দাবি আদায়ের এই ৭ জুনই আত্মাহুতিদানকারীরা রক্তের অক্ষরে এই দাবির কথা লিখে গিয়েছিলেন বলেই ছয় দফার ভিত্তিতেই নির্বাচন, আমাদের যুদ্ধে বিজয় এবং আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদ এবং অধ্যাপক নাজমা শাহিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডা. নুজহাত চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই যে চিন্তা-চেতনাগুলো তাঁর মধ্যে (জাতির পিতা) লালিত ছিল, তার পুরোটাই প্রতিফলিত হয়েছিল ছয় দফা প্রণয়নের মাধ্যমে। আরো সুযোগ এসে গেল ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যখন দেখা গেল এই অঞ্চলের মানুষ সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীন। সেই সময় তিনি এই ছয় দফার দাবিটি উত্থাপন করেন।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের সব বিরোধী দল মিলে লাহোরে একটা সম্মেলন ডেকেছিল। সেই সম্মেলনে জাতির পিতা এই ছয় দফা দাবি উত্থাপন করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই দাবিটি তাঁকে তুলতে দেওয়া হয়নি। এমনকি জাতির পিতা দাবিটি এজেন্ডাভুক্ত করার চেষ্টা করেন। সেটাও তারা করেনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় আমাদের বঙ্গসন্তান কয়েকজন রাজনীতিবিদও এটি গ্রহণ করেনি। তখন জাতির পিতা লাহোরেই এটি প্রেসে দিয়ে দেন এবং প্রেস কনফারেন্সও করেন। এরপর জাতির পিতা ঢাকায় ফিরে এসে প্রেস কনফারেন্স করেন এবং ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। তখন ছিল ফেব্রুয়ারি মাস। এই ছয় দফা দাবিকে জাতির পিতা নাম দিয়েছিলেন বাংলাদেশের জনগণের বাঁচার দাবি হিসেবে।

১০ বছর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ১৯ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে জাতির পিতাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং ছয় দফা গৃহীত হয়। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর জাতির পিতা প্রদত্ত নীতিনির্ধারণী ভাষণের চুম্বক অংশ উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী আরো উল্লেখ করেন যে জাতির পিতা বলেন, ‘ছয় দফা প্রশ্নে কোনো আপস নাই। রাজনীতিতেও কোনো সংক্ষিপ্ত পথ নাই। নির্দিষ্ট আদর্শ এবং সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের ঐক্যেই আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ৩৫ দিনে দেশের আনাচে-কানাচে সব জায়গায় সফর করেন এই ছয় দফাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। জাতির পিতা একদিকে যেমন দলকে সংগঠিত করেন, তেমনি ছয় দফা দাবির প্রতি জনগণের সমর্থন আদায় করেন এবং একই সঙ্গে ছয় দফার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলেন। জাতির পিতা সারা দেশে জনসভা চালাতে থাকেন এবং ৮ মে নারায়ণগঞ্জে বিশাল জনসভা শেষে ফেরার পর গ্রেপ্তার হন—বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বাঙালি জাতিকে যেভাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের যে কর্মসূচি তিনি হাতে নিয়েছিলেন তাঁর দুর্ভাগ্য, তিনি সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। কেননা ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট তাঁকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর পর মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম, আজকে সেই আদর্শ আবার ফিরে এসেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে, রক্ত কখনো বৃথা যায় না—এটাই প্রমাণিত সত্য। আজ জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই; কিন্তু তাঁর আদর্শ রয়েছে। সেই আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশ আজ মর্যাদা নিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র: বাসস।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply