অনলাইন ডেস্ক:
ক্ষমতার চেয়ার এবং কারাগার খুব কাছাকাছি থাকে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রবিবার দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন ২০টি ফায়ার স্টেশন ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জ কারা কমপ্লেক্স এলাকায় মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
২০০৭ সালের এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিজের কারাবন্দি হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি। আমাদের ক্ষমতার চেয়ার এবং কারাগার খুব পাশাপাশি থাকে। ২০০৭-এ যেটা হয়েছে…সবার আগে আমাকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কাজেই সেটা আমরা জানি, রাজনীতি করতে গেলে এটা করতেই হবে। সেজন্য আমরা কারাগারগুলোর উন্নতিও করে যাচ্ছি।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাজীবনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার জীবনের অনেকটা সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে অত্যন্ত মানবেতরভাবে। কাজেই কারাগারের সঙ্গে সব সময় আমাদের একটা সম্পর্ক। ছোটবেলা থেকেই কারাগারে যাই এবং সেখানকার ভালোমন্দ অনেক কিছু জানারও সুযোগ হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই ব্যবস্থাগুলো নিয়েছি।’
কেরানীগঞ্জে মহিলা কারাগারটি যথেষ্ট উন্নতমানের করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কারারক্ষীদের কোনো পোশাক ছিল না, কোনো ট্রেনিং ছিল না, তাদের নিরাপত্তারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি তাদের থাকারও ভালো ব্যবস্থা ছিল না। নতুন কারাগারে সেই ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়েছে।’
প্রত্যেক জেলার কারাগারগুলোকে উন্নত করার পাশাপাশি মহামারিকালে বিচার অব্যাহত রাখতে ভার্চুয়াল কোর্টের ব্যবস্থা করার কথাও বলেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘যেহেতু ডিজিটাল বাংলাদেশ আর এখন এই করোনার সময় কোর্ট চালানো মুশকিল। আমরা এ জন্য ভার্চুয়াল কোর্টের ব্যবস্থা করেছি। কেরানীগঞ্জের কারাগারে এরই মধ্যে কোর্টরুম তৈরি করা হয়েছে।’ এভাবে জেলা কারাগারগুলোতেও কোর্টরুম চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, উচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা ও আধুনিক সুবিধাসংবলিত এই কারাগারে শুধু নারী বন্দিদের রাখা হবে। বর্তমানে সব নারী বন্দিকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। গাজীপুরের কাশিমপুরে দেশের প্রথম মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণের পর দেশে এটি দ্বিতীয় মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার। এতে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত—উভয় ধরনের বন্দি রাখা হবে।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী নতুন ২০টি ফায়ার স্টেশন, ছয়টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জ কারা কমপ্লেক্স এলাকায় মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার ও কেরানীগঞ্জে একটি এলপিজি স্টেশন উদ্বোধন করেন।
ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগুনে জীবন ও সম্পদের অনেক ক্ষতি হয়। আমাদের সরকার গঠনের আগে এত ফায়ার স্টেশন ছিল না। আমরা দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। পৃথক বার্ন ইনস্টিটিউট করেছি, মানুষের জীবন যেন নিরাপদ হয় সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
যেসব ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে নওগাঁর রাণীনগর, রাজশাহীর মোহনপুর, পাবনার সাঁথিয়া ও আটঘরিয়া, শরীয়তপুরের জাজিরা, বগুড়ার আদমদীঘি ও শাজাহানপুর, জয়পুরহাট, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও কলারোয়া, বরিশালের হিজলা, পিরোজপুরের ইন্দুরকানি, মৌলভীবাজারের রাজনগর, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ, নেত্রকোনার বারহাট্টা, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এবং চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত ড্যাশ ৮-৪০০ মডেলের নতুন প্লেন ধ্রুবতারার উদ্বোধন করেন।