চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:
এক সময়কার গ্রামীণ জনপদের নারী মানেই গৃহস্থালীর এক অনন্য গৃহবধূ। বাড়ীর সমস্ত কাজ একাই শেষ করতে হয়েছে তাদের। সংসারের কাজ সামলিয়ে গ্রাম্যভাবে কিছুটা ছাগল মুরগি লালন পালন করার নজির রয়েছে আগে থেকেই। কিন্তু এখন সেই নারী গ্রামীণ জনপদের হলেও এখন আর শুধু গৃহস্থালী নেই। কালের বিবর্তনে পাল্টেগেছে তারাও। পুরুষদের পাশাপাশি সাবলম্বী হতে কোরবানী ঈদকে লক্ষ্য রেখেই বাড়ী বাড়ী শুরু করেছে গরু মোটাতাজাকরণের কাজ। ঈদুল আজহা আর মাত্র ৩দিন বাকী রয়েছে। এর মধ্যেও মাঠ থেকে পুষ্টিকর ঘাসসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য খাইয়ে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছে ওই সকল নারী উদ্যোক্তারা।
গত কয়েকদিন ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন পশুহাট বিশাল জমজমাট থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা তুলনামুলক কম ছিল। কোরবানীর আর মাত্র তিনদিন বাকী থাকায় পুরোপুরি জমে উঠেছে সকল পশু হাট।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় পশু উৎপাদনে সুনাম আগে থেকেই রয়েছে। তাই ঈদকে সামনে রেখে জেলার পশু ক্রেতারা হাটের পাশাপাশি গ্রামীণ জনপদের বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে পশু কেনার প্রচলনও আগে থেকেই রয়েছে। সেই সূত্র ধরে শহরের ক্রেতারা গরু রাখার জায়গার অভাব, এছাড়াও হাট থেকে কিছুটা দাম কম পাওয়ার আশায় অনেকেই ছুটে আসে গ্রামে। আর ওই সকল গ্রামীণ নারীরা বাড়ীতে বসেই বিক্রি করছে মায়ের নিপুণ হাতের যত্নে গড়া গরুকে। প্রতিবছরই কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে বারোমাসই বাড়ীতে লালন পালন করে সাবলম্বী হচ্ছে চুয়াডাঙ্গার গ্রামীণ জনপদের নারীরা। শুধু পেশাদার গৃহবধূরাই নয়, কিছুটা সাবলম্বী হতে মৌসুমী নারীরাও জড়িয়েছে গরু লালন পালন করার কাজে। এতে করে সবাই সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ ঘর বাড়ীসহ সংসারের অভাব কাটিয়ে আস্তে আস্তে সাবলম্বী হয়ে উঠছে তারা। এভাবে প্রায় ৪০ হাজারের মত গ্রামীণ জনপদের নারীরা জড়িয়ে পড়েছে এ পেশায়। যা চুয়াডাঙ্গা জেলায় মাংসের চাহিদা মিটিয়েও ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে চাহিদা মেটাচ্ছে তারা। শুধু তাই-ই নয় নারীদের অদম্য চেষ্টায় চুয়াডাঙ্গায় প্রাণীখাতেও বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। যা বাংলাদেশের জন্য এক নজির টানা যাবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার এ জেলায় গরুর হাটের সংখ্যা ৬টি । আর খামার রয়েছে ১১ হাজার ১১৫টি। এবার কোরবানি উপলক্ষে এ জেলায় ৩০ হাজার গরু হাটে যাবে আর ছাগল ভেড়া মিলে মোট ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৭২টি । এখন প্রতিটা খামারে গরু লালন পালন করা হচ্ছে । আর এ জেলায় প্রতিবার কোরবানি ঈদকে ঘিরে বাড়িতে বাড়িতে গরু লালন পালন করে থাকে প্রায় ৪০ হাজার গ্রামীণ জনপদের নারী। এ থেকে তারা অনেক সাবলম্বী হচ্ছে সেইসাথে আর্থিকভাবে উন্নতি ঘটছে তাদের । প্রতিবারই চুয়াডাঙ্গার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তি জেলার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয় এ নারীরা । আশা করি এবারও সবকূল ঠিক থাকবে।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পিতম্বপুর গ্রামের বেবি নাজনিন নামের এক নারী পশুপালনকারি বলেন, ঈদ আসলে আমরা যারা মেয়েরা আছি তারা দিন রাত পরিশ্রম করে গরু মোটাতাজা করি । এতে আমরা আর্থিক ভাবে লাভবান হই । গরু লালন পালন করে যে টাকাটা পাই সেটা আমাদের সাংসারিক নানা রকম প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারি । এটা এখন আমাদের বর্তমান পেশা ।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা হাজরাহাটি গ্রামের এক গরু লালন পালনকারি লাবনি খাতুন বলেন, আমি ৫ বছর ধরে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবার গরু লালন পালন করি । এবার আমার দুইটা গরু ছিল বিক্রি করেছি এবং দাম হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা । এ টাকা দিয়ে আমি সংসার খরচ ও ছেলে মেয়েদের পড়শোনার খরচ সব কিছুই আগের থেকে ভালো করতে পারি । এ কাজ করে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়েছি ।
এক গৃহবধূ রওশন আরা বলেন , ছেলেরা শুধু মাঠ থেকে ঘাস এনে দেয় আর বাকি কাজ গরু লালন পালন থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ আমাদের করতে হয় । এখন প্রতিটা বাড়ি বাড়ি মেয়েরা গরু লালন পালন করে বছর শেষে যে লাভের মুনাফা পায় সেই টাকা দিয়ে সব নারীরা জীবনে ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টা করি । তবে যদি সরকার আমাদের মত ছোটখাটো উদোক্তাদের প্রতি নজর দিলে আমরা আরো সামনের দিকে আগাতে পারবো এবং আামদের নারীদের এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে ।
এ বিষয় কথা হয় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণী সম্পদের কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম মোস্তফার সাথে। তিনি বলেন, আসন্ন কোরবানি ঈদ আসার আগ মুহূর্তে জেলার যেসব মেয়ে ও গৃহবধূরা আছে তারা গরু মোটাতাজা করে তা বাজারে বিক্রি করে এ থেকে বেশ লাভবান হয় এবং তারা আর্থিকভাবে সফলতার মুখ দেখে । আশা করি সামনে নারীদের এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে । এতে বোঝা যাচ্ছে পুরুষের সাথে সাথে নারীরাও এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পিছিয়েপড়া নারীরা এখন গরু লালন পালন করে নিজেরাই সাবলম্বী হতে শুরু করেছে।