রংপুর প্রতিনিধি
ডিসেম্বর ০২, ২০২০
মিথ্যা অভিযোগ এনে ১২ বছরের আঁখিমনির ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে রংপুর নগরীর আদর্শপাড়া এলাকায়। লোহা গরম করে তার গোপনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাকা দিয়েছেন দন্ত চিকিৎসক দম্পতি। শুধু তাই নয়, শিশুটির মাকে ডেকে এনে সাদা স্ট্যাম্পে সই নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে মেয়েকে দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় এলাকাবাসী ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করে দেয়। তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য রেফার্ড করলেও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে শিশুটিকে ভর্তি নেয়নি। এত কিছু ঘটলেও এ বিষয়ে কিছুই জানে বলে দাবি করেছে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতোয়ালি থানা।
আঁখিমনির মা শিরিনা খাতুন জানায়, প্রতিবেশী ডালিম চন্দ্র রায়ের মাধ্যমে তার মেয়ে দুই বছর ধরে রংপুর নগরীর আর্দশপাড়া মহল্লার দন্ত চিকিৎসক কান্তা বেগম এবং রেজাউল বারী দম্পতির বাসায় কাজ করতো। গত ২৮ নভেম্বর শনিবার ডালিম চন্দ্র তাকে নিয়ে ওই বাসায় যায়। সেখানে গেলে তারা জানায়, তার মেয়ে টাকা চুরি করেছে। তাই তারা তাকে আর বাসায় রাখবে না। তার মেয়ে জানায় সে টাকা চুরি করেনি। তবুও বাড়ির লোকজন তাকে শারীরিক নির্যাতন করেছে। এরপর কান্তা ও বারী দম্পতি ৩০০ টাকার একটি সাদা স্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষর নিয়ে মেয়েকে দিয়ে দেয়। মেয়েকে নিয়ে তিনি গ্রামে ফিরে আসেন। এখানে আসার পর মেয়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখতে পেয়ে গ্রামবাসীকে ডেকে বিস্তারিত জানান।
গ্রামের নুরউদ্দিন আলী বলেন, বিষয়টি জানার পর আমরা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানাই। এরপর কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশ এসে শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডা. সাবির হোসেন সরকার জানান, শিশুটির সারা শরীরে ও তার গোপনাঙ্গে মারাত্মক ক্ষত হয়েছে। সে কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে দন্ত চিকিৎসক কান্তা জানান, মেয়েটি টাকা চুরি করেছে। ওর মাকে ডেকে আনলে মেয়েটির মা তাকে মেরেছে। আমরা মারিনি বা নির্যাতন করিনি।
আঁখিমনির অভিযোগ, ‘ওই দাঁতের ডাক্তার, ডাক্তারের স্বামী রেজাউল বারী, তার মা খালেদা বেগম তাকে নির্যাতন করেছে।’
সোমবার বিকালে গুরতর অসুস্থ শিশু আঁখিমনিকে নিয়ে তার মা রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তির জন্য নিয়ে ভর্তি না করে উল্টো নানান ধরনের হুমকি দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। বাধ্য হয়ে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যায় তার মা শিরিনা বেগম।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মফিজুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। যেহেতু ঘটনাস্থল রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের অধীনে তাই থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয় জানতে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতোয়ালি থানার ওসি তদন্ত রাজিবুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তারা বিষয়টি জানেন না। পরে খবর পেয়ে তারা ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে মামলা নেবেন। একইসঙ্গে দায়ীদের গ্রেফতার করার পদক্ষেপ নেবেন।