মাদারীপুর প্রতিনিধি: মাদারীপুরের ডিজিটাল এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসকের গাফলতির ফলে রুনা আক্তার নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নিহতের স্বজনরা জানায়, মাদারীপুরের ডাসার থানার আটিপাড়া গ্রামের রুনা আক্তার (২৫) প্রসব বেদনা উঠলে তাকে পরিবারের লোকজন শুক্রবার সকাল ৮.৩০ এর দিকে মাদারীপুরের ডিজিটাল এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করেন। সকাল ১০ টায় দিকে অত্র হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফারজানা আফিয়া মেঘলা ও ডা. ফয়সাল কবির রুনা আক্তারকে সিজার করান। তাৎক্ষনিকভাবে রক্তের প্রয়োজন পড়লে রোগীর স্বামী রমজান মাল (৩৫) কে রক্তদাতা যোগার করার জন্য অন্যত্র পাঠিয়ে দেন। এ সময় রমজান মাল রক্তদাতা খুজে আনার আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ফোন দিয়ে বলেন রোগীর অবস্থা বেশি ভালো নয় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে নিয়ে যেতে হবে, প্রসূতির স্বামী না আসার আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই প্রসূতিকে একটি এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেন, এবং প্রসূতির স্বামী আসা মাত্রই তাকে ঠেলেঠুলে এ্যাম্বুলেন্সে করে প্রসূতিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের উদ্দেশ্য পাঠিয়ে দেন কোন প্রকার ছাড়পত্র ছাড়াই। প্রসূতিকে ফরিদপুর নেওয়া হলে পরে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা আগে প্রসূতি মারা গেছেন। পরে নিহতের পরিবার মরদেহ নিয়ে পুনরায় ডিজিটাল এ্যাপোলে হাসপাতালে নিয়ে আসেন এবং পরিবারের লোকজন গণমাধ্যম কর্মী ও পুলিশ কে জানালে সন্ধ্যায় পুলিশ এসে তদন্ত শুরু করে। নিহতের স্বামী রমজান মাল বলেন, “আমার রক্তদাতা আনার কথা বললে আমি রক্তদাতা আনতে যাই, আমি রক্তদাতার কাছে পৌছানোর আগেই মাত্র ৫ মিনিটেই তারা সিজার করে ফেলেন, পরে আমাকে ফোন করে হাসপাতালে ফিরে আসতে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, আমি আসার আগেই তারা আমার স্ত্রীকে ফরিদপুরের উদ্দেশ্য এ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে দেন, আমি বুঝতে পারছিলাম না ওই অবস্থায় কি করবো, কোনো কাগজপত্রই দেয় নি প্রথমে হাসপাতাল থেকে, পরে ফরিদপুর নিয়ে গেলে গেলে জানতে পারি আমার স্ত্রী ঘন্টা দুয়েক আগেই মারা গেছে। আমার স্ত্রীকে নিয়ে মাদারীপুর ফিরে আসলে তারা আমাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। আমি কোনো টাকাপয়সা নেই নি, যারা আমার স্ত্রীকে ভুল চিকিৎসায় মেরে ফেলেছেন আমি সকল দোষীদের বিচার চাই, আমার মতো অন্য কাউকে যেন আর এভাবে স্বজন হারাতে না হয়”। তবে অত্র হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান মনির ভুল চিকিৎসার কথা অস্বীকার করে বলেন,তিনি বলেন রোগীর রক্তচাপ বেশি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেলে প্রেরন করি, ওখানে গিয়ে রোগী মারা গেছেন, আমাদের চিকিৎসার কোনো প্রকার গাফলতি ছিলো না। আর টাকা নেওয়ার ব্যাপারে বলেন ‘রোগী গরীব হওয়ায় দাফন-কাফনের জন্যে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছিল।’ এ ব্যাপারে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান মিয়া জানান, ‘নিহতের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ দিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’জানতে চাইলে সিভিল সার্জন শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি নিহতের স্বজনরা লিখিত অভিযোগ করে, তাহলে তদন্ত করে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’