আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে বসবেন আগামী ২০ জানুয়ারি। কিন্তু এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন তিনি। গতকাল সোমবার কভিড-১৯ সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে বসেছিলেন জো বাইডেন। সঙ্গে ছিলেন নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। এ ছাড়া বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কাজ করতে বাইডেন-কমলার পক্ষ থেকে ক্রান্তিকালীন ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। খোলা হয়েছে টুইটার পেজও।
অন্যদিকে এখনো পরাজয় মেনে নেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। উল্টো নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা ছক কষে যাচ্ছেন তিনি।
গতকাল ডেলাওয়ারের উইলমিংটন শহরে কভিড-১৯ সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাইডেন ও কমলা। এরপর এ বিষয়ে গণমাধ্যমে ব্রিফ করার কথা তাঁদের। ‘বিল্ডব্যাকবেটার’ নামে তাঁরা যে ওয়েবসাইট খুলেছেন, সেখানে চারটি বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো—করোনা মহামারি মোকাবেলা, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, বর্ণবৈষম্য রোধ এবং জলবায়ু পরিবর্তন।
করোনা মহামারিতে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত দুই লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এক কোটি ছাড়িয়েছে শনাক্তের সংখ্যা। এ অবস্থায় গতকাল একটি টাস্কফোর্সের নাম ঘোষণা করার কথা বাইডেনের। গত রবিবার তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘সোমবার আমি বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী ও গবেষকের নাম ঘোষণা করব। তাঁরা আপাতত করোনা মোকাবেলায় আমার এবং কমলা হ্যারিসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করবেন। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর এই টাস্কফোর্স পুরোদমে কাজ শুরু করবে।’
প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে আবার যুক্তরাষ্ট্রের নাম লেখানোর ঘোষণাও দিয়েছেন বাইডেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নির্বাহী আদেশে সই করেছিলেন। শোনা যাচ্ছে, দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনই বাইডেন এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ট্রাম্পের ওই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দেবেন।
সব গোষ্ঠী প্রতিনিধিত্ব করতে পারে—এমন একটি মন্ত্রিসভা গঠনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন বাইডেন। তবে সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন তাঁর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
জন এফ কেনেডির পর জো বাইডেনই দ্বিতীয় ক্যাথলিক, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। গত রবিবার সকালে নিজ শহর উইলমিংটনের একটি গির্জায় যান তিনি। এরপর যান ছেলে বিউ বাইডেনের সমাধিতে। ২০১৫ সালে মস্তিষ্কের ক্যান্সারে মৃত্যু হয় তাঁর। বাইডেন এরপর যান প্রথম স্ত্রী এবং মেয়ের সমাধিতে। ১৯৭২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁদের।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকালও সময় কাটিয়েছেন ওয়াশিংটনে গলফ কোর্সে। তিনি এখনো পরাজয় মেনে নেননি। তাঁর আইনজীবী রুডি গিউলিয়ানি জানিয়েছেন, নির্বাচনে কারচুপির ‘যথেষ্ট প্রমাণ’ তাঁদের হাতে রয়েছে। এ কারণে তাঁরা বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মামলা করবেন। তবে কারচুপির কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দেননি ট্রাম্পের এই আইনজীবী। গত রবিবার ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, ‘প্রথম মামলাটি হবে পেনসিলভানিয়ায়। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নামে এই মামলা করা হবে।’ তিনি আরো জানান, দ্বিতীয় মামলাটি হবে মিশিগান কিংবা জর্জিয়ায়।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন মেলানিয়া ট্রাম্পও। রবিবার টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ অবশ্যই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিদার। এ ছাড়া প্রত্যেকটি বৈধ ভোটই গণনা করা উচিত; অবৈধ ভোট নয়।’
গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৭৯টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন বাইডেন। ট্রাম্পের ছিল ২১৪টি। আরিজোনা ও জর্জিয়াতেও এগিয়ে আছেন বাইডেন। এই দুই অঙ্গরাজ্যে জিতলে বাইডেনের ইলেকটোরাল ভোট হবে ৩০৬টি। গত নির্বাচনে ট্রাম্পও ৩০৬টি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন।
এরই মধ্যে বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দুই রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনি ও লিসা মুরকোসকি। ডেমোক্র্যাট নেতারা বলছেন, রিপাবলিক নেতাদের উচিত ট্রাম্পকে বোঝানো, যাতে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
রমনি বলেন, ট্রাম্পকে শেষমেশ পরিণতি মেনে নিতেই হবে। ‘তিনি হয়তো এর চেয়ে সুন্দর পরিবেশে বিদায় নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই পরিবেশের যোগ্য নন।’
অনেক সিনেটর আবার ট্রাম্পকে উল্টো বুদ্ধিও দিচ্ছেন। সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, ‘বাইডেন জিতলে আমরা অবশ্যই তাঁর পাশে আছি। কিন্তু ট্রাম্প এখনো হারেননি।’ ট্রাম্পের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি এখনো হারেননি। লড়াই চালিয়ে যান।’
সূত্র : এএফপি।