বোয়ালমারী ( ফরিদপুর) প্রতিনিধি : না ফেরার দেশে চলে গেলেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত বামন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. ফজলুল হক চান মিয়া (৮৫)। তিনি সোমবার (১৪.০৯.২০) রাত ২টায় বার্ধক্যজনিত কারণে ফরিদপুর ডায়াবেটিকস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান (ইন্না….রাজিউন)। তার বাড়ি উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কুমরাইল গ্রামে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে ১ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। দুপুর ১২ টায় রূপাপাত ময়রার মাঠে মরহুমের প্রথম জানাজা ও নিজ গ্রাম কুমরাইল গ্রামে জোহরবাদ দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।উল্লেখ্য মো. ফজলুল হক চান মিয়া ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সততা ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে রূপাপাত বামন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। স্কুলটির প্রাক্তন ছাত্র ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক আছাদুজ্জামান বলেন, ‘চান মিয়া স্যার ছিলেন প্রচার বিমুখ একজন শিক্ষক। তিনি দীর্ঘদিন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন। উনার সময় স্কুলে অংক এবং ইংরেজির প্রায় সকল স্যার প্রাইভেট পড়াতেন কিন্তু তিনি এই কাজটির ঘোর বিরোধী ছিলেন। তার বক্তব্য ছিল স্কুলে যদি ঠিকমতো পাঠদান করানো হয় তাহলে প্রাইভেট পড়ার দরকার হয় না। স্যারের তৎপরতার কারণেই শেষের দিকে শিক্ষকরা স্কুলের রুমে আর প্রাইভেট পড়াতে পারতেন না। যে সকল স্যারেরা প্রাইভেট পড়াতেন শেষ পর্যন্ত তারা নিজেদের বাড়ি অথবা অন্য কোন স্থানে প্রাইভেট পড়াতেন। স্কুলের অন্যান্য ইংরেজি শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি চান মিয়া স্যারের ইংরেজি ছিল খুবই উঁচু মানের। উনার কাছেই ইংরেজি প্রাইভেট পড়বো, এটা ছিল আমার এক ধরনের স্বপ্ন। আমি কয়েকবার স্যারের কাছে গিয়েছি প্রাইভেট পড়বো বলে কিন্তু তিনি রাজি হয়নি। তিনি বলেছিলেন, তোমার যদি কোন সমস্যা হয়, তুমি সকালবেলা আমার বাড়িতে চলে এসো, আমি তোমাকে পড়াবো। এভাবে আমি মাঝে মাঝে সকালবেলা স্যারের বাড়িতে চলে যেতাম, গিয়ে দেখতাম স্যার বাসায় নেই। খুব ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠতেন এবং নিরহংকারী এই লোকটি নিজে বাড়ির আশেপাশে কৃষি কাজের সাথে জড়িত থাকতেন। সকালবেলা কাজ সেরে এসে আমাকে পড়াতেন অনেকবার টাকা দিতে গিয়েছি স্যার নেননি। স্যারের এই ঋণ কখনও শোধ করা যাবে না। স্যারের কথা আমার মনে ছিল, তাই স্যারের ছেলে সেলিম ছিল কমার্সের ছাত্র আমি একসময় সেলিমকে হিসাববিজ্ঞান পড়িয়েছি। সেলিমকে আমি বলতাম, স্যার আমার কাছ থেকে কোন দিন শিক্ষার বিনিময়ে টাকা নেননি আমিও তোর কাছ থেকে টাকা নিতে পারব না। তারপরেও সেলিম আমাকে মাঝে মাঝে টাকা দিত। অনেক স্মৃতি রয়েছে স্যারের সাথে এবং তার পরিবারের সাথে। আমি একসময় ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে পড়তাম শুরুর দিকে স্যারের ফরিদপুরের বাড়িতে থাকতাম। সেলিম আমার ছাত্র হলেও তার সাথে রয়েছে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এই মুহূর্তে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। চাঁন মিয়া স্যারদের মৃত্যু হয় না। তিনি অমর হয়ে থাকবেন অসংখ্য ছাত্র ছাত্রীদের স্মৃতির মাঝে। বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে আজীবন।