অনলাইন ডেস্ক:
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ও সরকারের মন্ত্রী দাবি করেছেন, রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানের কবরে জিয়াউর রহমানের লাশ নেই। এ বিষয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা পুরোপুরি সত্য। প্রয়োজনে কবরের লাশের ডিএনএ পরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। গতকাল পৃথক কয়েকটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতারা এমন বক্তব্য দেন।
জিয়াউর রহমানের লাশ নিয়ে চলমান বিতর্ক প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সব প্রশ্নের মতো জিয়ার লাশ নিয়েও বিএনপি মহাসচিব কোনো প্রশ্নেরই জবাব দেন না। প্রশ্ন করলে মূল প্রসঙ্গ এড়িয়ে সামঞ্জস্যহীন জবাব দেন। জিয়ার লাশ নাকি জেনারেল এরশাদ কাঁধে বহন করেছেন, এ ধরনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা করেছেন ফখরুল সাহেব। এরশাদ কফিন বহন করেছেন; কিন্তু ভেতরে জিয়ার লাশ আছে কি না, তা তো তিনি কখনো বলেননি।
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে তাঁর লাশ রাঙ্গুনিয়া পাহাড়ে নিয়ে গিয়েছিল কে? মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব জিয়ার লাশ নিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা করছেন।’ তিনি গতকাল নিজের সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন।
বিএনপির নেতাদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী শিষ্টাচারবহির্ভূত কোনো কাজ করেননি। তিনি সত্য কথা বলেছেন। কথাটি হচ্ছে, জিয়ার যে কফিন আনা হয়েছিল, সেখানে কোনো ডেডবডি ছিল না। আপনারা বললেই হলো, সেখানে ডেডবডি ছিল। এটা আপনারা প্রমাণ করেন। প্রমাণ করেন সেটি কাউকে দেখানো হয়েছিল, সেনাবাহিনীকে দেখানো হয়েছিল। এটা তো শিষ্টাচারের কোনো বিষয় হলো না। আপনারা অনেক মিথ্যাচার করেছেন। এ ধরনের কথা আপনারা আরো অনেক বলেছেন।’ তিনি গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত ‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত সকল শহীদের স্মরণে’ এক শোকসভায় এসব কথা বলেন।
আলোচনাসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বাবু সুজিত রায় নন্দী, আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ফাল্গুনী হামিদ, সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার মিরা ও যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘আজকে জিয়াউর রহমানের লাশ নিয়ে একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওখানে জিয়াউর রহমানের লাশ নেই। একটা দেশের সরকারপ্রধান যখন বলেন, তিনি কি তথ্য না জেনে বলতে পারেন? আমি মনে করি না। তার ওপর তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি তথ্য না জেনে এই কথা বলেননি। তিনি কখনো ফালতু কথা বলার মানুষ না।’
বিএনপির নেতাদের উদ্দেশে ডিএনএ টেস্টের আহ্বান জানিয়ে শাজাহান খান বলেন, ‘যদি আজকে প্রমাণ করতে চান প্রমাণ করেন। ডিএনএ টেস্ট করেন। এই কথাটা আজকের না, এই কথাটা যখন জিয়াউর রহমানকে এখানে দাফন করা হয়, এখানে কবর দেওয়া হয়, তখনকার। তখন কিন্তু এই প্রশ্নটা এসেছিল যে তাহলে এই লাশটা কার? কে দেখেছে এই লাশ? তাঁর ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী—কেউ তাঁর লাশ দেখেননি। কোনো মানুষ দেখেনি। তাহলে এই লাশটা কার? এ নিয়ে বিতর্ক উত্থাপিত হয়েছিল, তাঁকে যখন এখানে কবর দেওয়া হয়েছিল, তখনই এই প্রশ্ন এসেছিল।’ রবিবার সন্ধ্যায় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আশুলিয়া প্রেস ক্লাব অডিটরিয়ামে গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, জিয়াউর রহমানের কবর চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে সরানো হবে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে ‘দালিলিক প্রমাণ’ থাকায় জিয়ার মুক্তিযুদ্ধের খেতাবও বাতিল করা হবে। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হত্যা রোধে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় নকশাবহির্ভূত শুধু জিয়ার কবরই নয়, আরো যত কবর আছে বা অন্য কিছু অবৈধ স্থাপনা, সব অপসারণ করতে হবে। সংসদের মূল নকশার বাইরে কোনো কিছু থাকা উচিত নয়। তা আইনবহির্ভূত।’
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের লাশ পাওয়া যায়নি। সেই কফিনের মধ্যে কী ছিল, মানুষ ছিল, না অন্য কিছু ছিল, সেটা আল্লাহ মালুম; জানি না। একটা কাঠের বাক্স সেখানে দাফন করেছে। সেই কবরে যদি কোনো কিছু থেকে থাকে, তার ডিএনএ টেস্ট করে প্রমাণ করুন। যদি প্রমাণ হয় (জিয়ার লাশ রয়েছে), জাতির কাছে নাকে খত দিয়ে ক্ষমা চাইব।’