এম.এ.রহমান সীমান্ত, ঘুমধুম সীমান্ত থেকে ফিরে….
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে দীর্ঘদিন সক্রিয় থেকে ইয়াবা কারবারে জড়িত ছিল বাপ-বেটা সিন্ডিকেট।পূর্বে ভাই-ভাই সিন্ডিকেট হিসেবে পরিচিতি থাকলেও এখন বাপ-বেটার সিন্ডিকেট, তা প্রকাশ হয়ে গেছে। প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে বাবা ছৈয়দ আলমের আস্কারায় পারিবারিক ভাবে সবাই চালিয়ে যেতো ইয়াবা ব্যবসা।ছৈয়দ আলমের মেঝ ছেলে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় একবার ইয়াবাসহ হাতেনাতে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।একাধিক মামলা থাকা স্বত্বেও ইয়াবা কারবারে বাবা-মা’র সহযোগিতায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে ছেলেরা।ধারাবাহিকতায় গড ২৭ জুলাই কক্সবাজারে রয়াব-১৫’র হাতে ৯ হাজার ২০০ পিস ইয়াবাসহ বড় ছেলে জকির নোয়া গাড়ীসহ আটক হয়।সে গাড়িতে বাবা ছৈয়দ আলম ও মাতা সোনা মেহেরও ছিল। কিন্তু বাবা-মা কোটবাজারে নেমে পড়ে অন্য গাড়িতে উঠার জন্য।ওই গাড়ী ভাড়া নিয়েছিল ‘মা’কে ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে যাবে বলে।
জানা গেছে,কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কে ৯ হাজার ২শ পিস ইয়াবাসহ ঘুমধুম সীমান্তের ভাই-ভাই সিন্ডিকেটের শীর্ষ ইয়াবা ডন,যুবদল নেতা জকির আহমদ জহির ৪ মাদক কারবারি সহযোগী সহ আটক হলেও সিন্ডিকেট সদস্য অধরাই থেকে গেল।বাইরে থাকা পারিবারিক সিন্ডিকেট সদস্যদের ইয়াবা কারবার থেমে নেই।
তাদের গত ২৭ জুলাই রাতে র্যাপিড একশ্যান ব্যাটালিয়ন র্যাব-১৫ আটক করে জেলে পাঠিয়েছে।আটক ৫ জনের মধ্যে ঘুমধুম সীমান্তের শীর্ষ ইয়াবা ডন,ভাই-ভাই ইয়াবা সিন্ডিকেটের প্রধান জলপাইতলী-খিজারীঘোনার ছৈয়দ আলমের মেঝ ছেলে জসিম উদ্দিনের অন্যতম ইয়াবা পাচারের সহযোগী, ঘুমধুম ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক বড় ভাই জকির আহমদ ওরফে জহির অন্যতম ইয়াবা কারবারি।
আটককৃত মাদক কারবারিদের মধ্যে টেকনাফের নুর আহমদের ছেলে আব্দুর রহিম (৫০)জকির আহমদের ৩য় স্ত্রী শাহানারা বেগমের তালই। জকিরের একই ইউনিয়নের জলপাইতলী এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে রুহুল আমিন প্রকাশ বাপ্পী (২৬)জকিরের পুরনো সহযোগী।বাপ্পী ইতিপূর্বেই আরো ২ বার ইয়াবা সহ গ্রেফতার হয়ে জেলে যায়।উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের মনখালী এলাকার মোঃ হাসানের পুত্র জয়নাল আবেদীন (২৩)এবং রাজাপালং ইউনিয়নের উয়ালাপালং এলাকার আবদুল মজিদের পুত্র মােঃ মনজুর আলম (গাড়ী চালক) (২৫) জকিরার ৩য় স্ত্রীর আত্নীয় এবং জকিরার ইয়াবা কারবারের অন্যতম পুরনো সহযোগী বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে।তাদের সহযোগী হিসেবে সক্রিয় ছিল টাইপালংয়ের আজিজ ড্রাইভার,পশ্চিম দরগাহবিলের ওসমান, থাইংখালীর সোহেল, আরো কয়েকজন উখিয়ার অনলাইন সাংবাদিক,উখিয়ার যুবদল-ছাত্রদলের শীর্ষ কয়েকজন নেতা। বান্দরবানের শীর্ষ এক যুবদল নেতা নাইক্ষ্যংছড়ির এক বিএনপি নেতা,সরকার দলের স্বেচ্চাসেবকলীগের শীর্ষ এক নেতা জকিরাদের পারিবারিক ইয়াবা সিন্ডিকেটের সুবিধা ভোগী রয়েছে।যারা জকিরার নিকট থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে সাফাই গাইতো।
র্যাব-১৫’র হাতে ৯ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা নিয়ে জকিরার সাথে আটক হওয়া সবাই একই সিন্ডিকেটের। তারা জকিরার আপন সহোদর ভাই জসিম উদ্দিনের জন্য চট্রগ্রামে মাসে অন্তত ৪/৫ টি বিপুল পরিমাণের ইয়াবার চালান পাঠিয়ে থাকে।তাদের সিন্ডিকেটের বহু সদস্য চট্রগ্রামে জেলে আছে, ইয়াবা নিয়ে আটক হয়ে।
জকিরা ৪ সহযোগী নিয়ে ইয়াবাসহ আটক হয়ে কক্সবাজার জেলে গেলেও তাদের পারিবারিক ভাই-ভাই সিন্ডিকেটের সদস্যরা ইয়াবা পাচারে থেমে থাকেনি।জেলের বাইরে থাকা জসিম-জকির সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঘুমধুম সীমান্তে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।ইতিমধ্যে প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে ইয়াবা কারবার করে যারা রাতারাতি কোটিপতি বনেছে, অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন তুমব্রু-পশ্চিমকুল লতিফিয়া জামে মসজিদ সংলগ্ন সৌদি প্রবাসী ছৈয়দ আলমের ছেলে জসিম উদ্দিন,তার বড় ভাই ইয়াবার চালান পাচারের অন্যতম সহযোগী জকির আহমদ। জকির জেলে।তাদের সদস্য জসিম-জকিরার মামা জনৈক লেডু।লেডু মুলত জসিম-জকির সিন্ডিকেটের ইয়াবার চালান পাচারের সহযোগী এবং টাকার লেনদেন করে থাকে।চট্রগ্রাম থেকে পাঠানো জসিমের টাকা বিকাশ থেকে উত্তোলন করে যেখানে যেভাবে পারে পৌঁছে দিয়ে থাকে।তাদের সহযোগীদের মধ্যে জলপাইতলীর,জনৈক বশর,মনোয়ারা বেগম,মনোয়ারার বেগমের ছোটভাই মধ্যম পাড়ার বাঁহা সুলতানের ছেলে মুজিবুল হক বাবু।বাবু গত বছর জুলাই মাসে ঘুমধুমে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত বার্মাইয়া ওক্কাট্রা শাহ আলমের অন্যতম সহযোগী ছিল।ওইসময় ৪০ হাজার ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধারের নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় ১ নং আসামী মুজিবুল হক বাবু।সেই বাবু প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও গ্রেফতারে পুলিশের কোন ভুমিকা নেই।নোয়াপাড়ার জাহেদ আলমের ছেলে আবদূর রহমান,জাহেদ আলম (জাহেদ আলম ইয়াবাসহ চট্টগ্রামে আটক হয়ে জেল খেটেছে),জলপাইতলী বার্মাইয়া ছৈয়দ আলমের ছেলে,ইয়াবা জসিমের বিশ্বস্থ পার্টনার শাহ আলম,সহোদর আজিজুল হক।আজিজুল হক সম্প্রতি সময়ে চট্রগ্রামে ৪০ হাজার পিস ইয়াবা সহ গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছে।যে ইয়াবা গুলো জকিরার ভাই জসিমের জন্য পাঠাচ্ছিল জকিরা।জসিম-জকিরার সহযোগী ইয়াবার চালান পাঠানদের মধ্যে মমতাজ মিয়ার ছেলে ইমাম হোসেন,জনৈক নুরু,ছৈয়দ নুর,মুজিবুল হক বাবু অন্যতম।
দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা গেছে ছাত্র বেশে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে কোটপতির খাতায় নাম লেখায় জসিম উদ্দিন। সে এখন ইয়াবা জগতে ঘুমধুম সীমান্তের আলোচিত নাম।বিগত ৭/৮ বছর ধরে প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে ইয়াবা ব্যবসা হরদম চালিয়ে যাচ্ছে।বর্তমানে তার জায়গা-জমি,দালান বাড়ি,দুই স্ত্রীর একাউন্টে লাখ-লাখ ছাড়াও নামে-বেনামে কোটি টাকা রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে।চট্রগ্রাম শহরে ফ্ল্যাট বাসা নিয়ে দ্ধিতীয় স্ত্রী শিমু চৌধুরীকে নিয়ে বিলাসী জীবনযাপন করছে জসিম।ঘুমধুমের পাহাড়পাড়ায় রয়েছে অর্ধকোটি টাকা মুল্যের টিনশেড বাড়িসহ ২ একর বাগান বাড়ি, পোল্ট্রি খামার।
বেতবনিয়াস্থ নুরুল হক হেডম্যানের বাড়ি সংলগ্ন জমি।গত দেড় বছর আগে পশ্চিমকুলে লতিফিয়া মসজিদের পশ্চিমে কোটি টাকায় নির্মাণ করেছে নতুন দালান বাড়ি,সেখানে রয়েছে নিজের ক্রয় করা ২ একরের বেশী জায়গা,বেতবনিয়াস্থ বাজারে রয়েছে বেনামে দুটি দোকান।
জসিমের ইয়াবা ব্যবসার পরিধি বেড়ে এখন বিদেশমুখীও হয়েছে।ভারত,সৌদি আরব দুবাই সফর করে থাকে ঘন-ঘন।।বর্তমানে চট্টগ্রামে অবস্থান করে চালিয়ে যাচ্ছে স্বর্ণের ব্যবসাও।এক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করছে সিন্ডিকেট সদস্যরা।জলপাইতলীতে রয়েছে সিন্ডিকেট সদস্যরা।তাদের মধ্যে বাবা ছৈয়দ আলম,মাতা সোনা মেহের,
ঢাকা-চট্রগ্রামে ইয়াবার চালান পাঠিয়ে প্রত্যেক্ষ দায়িত্ব পালন করে আসছে। জসিমের আপন সহোদর বড় ভাই জকির আহমদ জহির,তাদের পারিবারিক বিশ্বস্থ ইয়াবা ব্যবসার সহযোগী বড় ভাই জকির আহমদ ছিল জসিমের দেহরক্ষীর মত।চট্টগ্রাম থেকে পাহারা দিয়ে ঘুমধুমে নিজ বাড়িতে,কোটবাজারে ছোট বোন সুমীর বাড়িতে নিয়ে আসতো জসিম কে ।বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছে ঘুমধুম ক্যাম্প পাড়ার বাঁহা সুলতানের ছেলে মুজিবুল হক বাবু,সে ৪০ হাজার পিস ইয়াবা মামলার ১ নং আসামী।বাবু আত্নগোপনে থেকে জকির-জসিম সিন্ডিকেটের ইয়াবার চালান পাচার করছে।
আরেক সহযোগি মিয়ানমার পালানো কুতুপালং ক্যাম্পের আশ্রিত রোহিঙ্গা, ঘুমধুম পশ্চিম পাড়ায় ইটের বাড়ি তৈরি করে বসতি করা জনৈক রফিক সহ ১০ জনের নারী-পুরুষের সদস্যরা জসিমের জন্য ইয়াবার চালান পাঠিয়ে থাকে। জসিমের মাতা সোনা মেহের অসুস্থ্যতার অজুহাতে মাসে অন্তত ৪-৫ বার রিজার্ভ মাইক্রোবাস, নোয়াহ গাড়ী ভাড়া করে কৌশলে ইয়াবার চালান নিয়ে যেতো চট্টগ্রামে।একবার গাড়ী ভাটা ১৫/১৮ হাজার টাকা।জকিরার ৩য় স্ত্রী শাহানারা বেগম,বোন জোসনা আক্তার, ইয়াবা পাচারে সক্রিয় রয়েছে।জসিম-জকিরার বাবা ছৈয়দ আলম জসিমের পাঠানো ইয়াবার টাকা লোকের নিকট পৌঁছাতে সহযোগী হিসেবে কাজ করে।
নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তের তুমব্রু-পশ্চিমকুল লতিফিয়া মসজিদ সংলগ্ন বাড়ি হওয়ায় বিজিবির টহল দলের গতিবিধি লক্ষ্য করে মিয়ানমারের ফকিরা পাড়া থেকে পালানো কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মুন্নাইয়ার মাধ্যমে এসব বড়-বড় ইয়াবার চালান পাচার করে বাড়িতে স্বল্প সময়ের জন্য মজুদ করলেও মুহুর্তেই কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ,জলপাইতলী কিংবা কোটবাজারের ক্লাসা পাড়া বোনের বাসায় ও ইয়াবাসহ আটক চট্টগ্রাম জেলে থাকা আটক আজিজুল হকের শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যায়।সেখান থেকে জকির, বাবু ও রফিকের মাধ্যমে ট্রাক-পিকআপে যোগান দিয়ে অভিনব কায়দায় ঢাকা চট্রগ্রামের উদ্দ্যেশ্যে নিয়ে যেতো ইয়াবার চালান।জকির, আজিজুল হক জেলে থাকলেও অপরাপর সদস্য চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা কারবার।ঘুমধুম,কুতুপালং, কোটবাজার ও টেকনাফ থেকে পাঠানো ইয়াবার চালান চট্রগ্রামে পৌছার পর জসিমের সিন্ডিকেট সদস্যরা ছাড়াও মুন্নাইয়ার আপন সহোদর ভাই সেলিমের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর নিকট সরবরাহ করে থাকে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,পূর্বের মত তাঁরা ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। দিন-দিন বেপরোয়া ভাবে মরণ ঘাতক ইয়াবার চালান পাচার করাতে শংকিত হয়ে পড়েছে সচেতন সুশীল সমাজ। জানা গেছে বিগত কয়েক বছর পূর্বে চট্রগ্রাম শহরে পড়ালেখার অজুহাতে ইয়াবা কারবারে জড়ায় জসিমের পুরো পরিবার।জসিম-সাইফুদ্দিন শুরুতে করলেও পরে ২০১৫ সালের দিকে জকিরাও জড়িয়ে পড়ে।মা-বোন সবাই ইয়াবা কারবারে জড়ানোর পর এখন বাবা ছৈয়দ আলমও একই পথে দেদারছে নেমেছে।ঘুমধুম ইউপির ১ নং ওয়ার্ডের পাহাড় পাড়ায় পোলট্রি খামারের আড়ালে চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা কারবার।এখন বেশীর ভাগ ইয়াবার চালান সেখান থেকে কৌশলে গাড়ী যোগে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে থাকে।তাতে জসিম-জকিরার বাবা আড়ালে কোটি-কোটি টাকার ইয়াবার লেনদেন করছে,বলে সুত্রে জানা যায়।ইয়াবা কারবাররে জড়িয়েই তাদের আর পেছনে থাকাতে হয়নি,ইয়াবা ব্যবসায় সল্প সময়ে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান। আর এলাকায় বেপরোয়া জীবনযাপন করে এলাকার সুশীল জনসাধারণকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।মানুষের সাথে জসিম-জহিরদের পরিবার মিথ্যা মামলা-মোকাদ্দমায় যে কাউকে ফাঁসিয়ে দেয় ইয়াবার কালো টাকার জোরে।
ইয়াবা কারবারী জসিম ইয়াবা সহ আটক হয়ে তথ্য গোপন করে নাম ঠিকানা ভুঁয়া দিয়ে জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে।বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ালেও ঠিকই ইয়াবার বড়-বড় চালান সীমান্তের ঘুমধুম থেকে অভিনব উপায়ে ঢাকা, চট্রগ্রাম, বরিশাল, গাইবান্ধা ও গোবিন্দগঞ্জে সরবরাহ করে যাচ্ছে। ওই ইয়াবা সিন্ডিকেটে ঘুমধুম, জলপাইতলী, তুমব্রু, ছাড়াও মহেশখালী -কুতুবদিয়া ও চট্রগ্রামের অন্তত ১০ /১২ জন ইয়াবা কারবারি রয়েছে।
আর ওই ইয়াবা সিন্ডিকেটের প্রধান নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের খিজারী ঘোনার সৌদি আরব প্রবাসী ছৈয়দ আলমের ২য় পুত্র জসিম উদ্দিন নিজেই।তাঁর হয়ে ইয়াবার বড়-বড় চালান সরবরাহের দেখভালের দায়িত্ব পালন করছে আপন সহোদর বড় ভাই জকির আহমদ জহির।তাঁর বাড়ি সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় ইয়াবা সহ মাদকের বড় বড় চালান সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে নির্বিঘ্নে গন্তব্য স্থলে সরবরাহ করে যেতো ব্যবসায়ী জসিম বিগত ১৭/০১/২০১৫ইং তারিখ চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও থানাধীন ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ একাডেমী ভবন ২য় এর বিপরীতে বনফুল মিষ্টির দোকানের সামনে থেকে চান্দগাঁও থানা পুলিশের হাতে আটক হয়।
এ সময় বিপুল ইয়াবাসহ আটক হলেও তার সহযোগী সহ মাত্র ২শ ইয়াবা দিয়ে মামলা রুজু করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু জসিম উদ্দিন পিতা- ছৈয়দ আলম সাং- খিজারী ঘোনা ১ নং ওয়ার্ড ঘুমধুম ইউপি, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান প্রকৃত নাম ঠিকানা হলেও ভূঁয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। চান্দগাও থানায় আটক হওয়া মামলার তৎকালীন বাদী উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ আইয়ুব উদ্দিন বিপি নং- ৮৫১৩১৫৩১৪৮, জসিম উদ্দিনের স্বীকারোক্তি মতে নাম দিয়েছিলেন সাইফুল ইসলাম (২২), পিতা- রফিকুল ইসলাম, মাতা- জোসনা আক্তার সাং- হাজির পাড়া (সিদ্দিকের বাড়ী) থানা- উখিয়া, জেলা- কক্সবাজার। ঐ সময় জসিমের হাল সাং দেখানো হয় চাইল্লাতলী, হাজী পাড়া, থানা- বায়েজিদ বোস্তামী, জেলা- চট্টগ্রাম। তার সাথে আটক হওয়ায় অপর যুবক ইয়াবা ব্যবসার সহযোগী বান্দরবানের হলুদিয়ার হলেও সেও ভূঁয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে। তাতে তার নাম দেওয়া হয় মোঃ ওসমান গণি (২০), পিতা- জহির আহমদ, মাতা- মাবিয়া খাতুন, সাং- ভাটিয়ারী (জাফর চেয়ারম্যানের বাড়ি) থানা- সীতাকুন্ড , জেলা- চট্টগ্রাম। চান্দগাঁও থানার মামলা নং- ১৮/২০১৫, তারিখ- ১৭/০১/২০১৫ইং, ধারা- ১৯৯০ সনের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত/২০০৪) এর ১৯ (১) টেবিলের ৯ (খ)। জসিম উদ্দিন ভূঁয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে অনুমান ৩ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পায়। তার জামিনের নিযুক্ত আইনজীবি ছিলেন এডভোকেট মানিক দত্ত, জেলা ও মহানগর দায়রা জজ আদালত, চট্টগ্রাম, রুম নং- ৫১৭, আইনজীবি এনেক্স ভবন। আদালতের জামিনের জিম্মাদার ছিলেন জনৈক মোহাম্মদ জসিম, পিতা- রফিকুল সাং- চাইল্লাতলী, হাজী পাড়া, থানা- বায়েজিদ বোস্তামী, জেলা- চট্টগ্রাম। মামলাটি ৩য় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত চট্টগ্রামে বিচারাধীন ছিল। ষ্পেশাল ট্রাইবুন্যালের মামলা নং- এসটি ৩০১১/২০১৫। তৎকালীন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এসএম শহিদুল ইসলাম, চান্দগাঁও থানা, সিএমপি চট্টগ্রাম।
ভূঁয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ঘুমধুমের জসিম উদ্দিন কারাগার থেকে বেরিয়ে বর্তমানেও হরদম ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। গত বছর চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় জসিমের নামে আরেকটি মামলা রয়েছে।যে মামলা ছাড়াও জসিম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মোস্ট ওয়ান্টেড বলে জানা গেছে।তাঁর ইয়াবা ব্যবসা নিয়ে গত কয়েক বছরে একাধিকবার কয়েকটি প্রিন্ট ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশিত হয়।এর পর থেকে সে পৈতৃক বাড়ি ঘুমধুমে আসা যাওয়া করছেনা প্রকাশ্যে।
জসিমের ইয়াবার চালান গায়েবের অজুহাত তুলে ২০১৯ সালে ঘুমধুম জলপাইতলী এলাকার মৃত বার্মাইয়া ছৈয়দ আলমের ছেলে ট্রাক চালক আজিজুল হককে চট্রগ্রাম শহরে জসিমের নেতৃত্বে ব্যাপক মারধর করা হয়।এনিয়ে রক্তাক্ত আজিজুল হক ঘুমধুমে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় জসিমের নামে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিল।উক্ত অভিযোগ রহস্যজনক কারণে ধামাচাপা পড়ে।পরে জসিম আর আজিজুল হকের মধ্যে সমঝোতা হয়ে ইয়াবা কারবার চলতে থাকে।সেই আজিজুল হক জসিমের জন্য ইয়াবার চালান নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যেই চট্রগ্রামে ৪০ হাজার ইয়াবাসহ আটক হয়ে জেলে আছে।উক্ত ঘটনায় নোয়াপাড়ার নাগা আব্দুর নাতি জাহেদ আলমের ছেলে আবদূর রহমান ইয়াবা গুলো আজিজুল হকের মাধ্যমে পাঠিয়েছিলো জসিমের জন্য।এ কথা এলাকায় প্রচার পায়।
এনিয়ে আবদূর রহমান জসিমের নিকট থেকে ১০ লাখ টাকা,জনৈক নুরু ৫ লাখ টাকা পাওনা রয়েছেন বলে কথা উঠেছিলো। নুরু নামক এক ব্যক্তি জসিমের মাতা সোনা মেহের ও জকিরের নিকট থেকে টাকা গুলো চেয়ে বহুবার বিবাদে জড়ান।ঘুমধুম থেকে যেসব ইয়াবা জসিমের সিন্ডিকেটে পাঠানো হয়,ওইসব ইয়াবার টাকা মাতা সোনা মেহের,বাবা ছৈয়দ আলম,মামা লেডু এবং ভাই জকিরের নিকট পৌছানো হয়।তাঁদের কে টাকা গুলো দেওয়া এবং নেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন মুজিবুল হক বাবু।স্থানীয় ভাবে প্রশাসনের সাথে মাসোহারার বিনিময়ে সখ্যতা বজায় রেখে চলতো জকির আহমদ।
ইয়াবা ব্যবসার বদৌলতে জকিরার বাড়িতে রাত-বিরাতে উখিয়ার কতিপয় অনলাইন সাংবাদিক,বিএনপি, যুবদল ছাত্রদলের নেতা, নাইক্ষ্যংছড়ির সরকার দলের কয়েকজন নেতা ও প্রশাসনের কতিপয় লোকের গোপনে রুদ্ধদার বৈঠকও বসতো এক সময়। প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থার লোক নিদিষ্ট হারে টাকা নিয়ে যেতো জকিরের নিকট থেকে।জকিরের ১ম স্ত্রী শামিমা সোলতানার নামীয় যে পিকআপ রয়েছে, তা দিয়েও যোগানের মাধ্যমে বিশেষ কায়দায় ইয়াবা বহন করতো।তুমব্রুর আলমগীর নামের এক চালক উক্ত ইয়াবার চালান বিশেষ স্থানে পৌঁছে দিতো।এঘটনা লোকজন জেনে যাওযায় এবং টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে জকির এবং আলমগীরের মধ্যে বিরোধ হলে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেয়।জকির স্ত্রীর গাড়ি পরিত্যক্ত রেখে অন্য গাড়ি যোগে ইয়াবার চালান পাঠাতো।যেসব ইয়াবা কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা রফিক, বাবা ছৈয়দ আলম,মামা লেডু এবং বাবুইয়ার মাধ্যমে এখনো যাচ্ছে।
বর্তমানে বাবা-মা’র সরাসরি সক্রিয়তায় জসিম-জকিরার সিন্ডিকেট বিভিন্ন সময় স্থান পাল্টিয়ে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে।জসিম উদ্দিন কখনো কবি, কখনো লেখক, কখনো ছাত্র, কখনো ছাত্রনেতা বিভিন্ন ছন্দনাম, পদবী ও ঠিকানা ব্যবহার করে ঢাকা-চট্টগ্রামে বড় বড় ইয়াবার চালান পাচার করছে। তৎকালীন চান্দগাঁও ও বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ইয়াবা সহ আটক হওয়ার সময় জসিম উদ্দিন উখিয়ার যে নাম ঠিকানা ব্যবহার করেছিল তার অস্থিত্ব নাই উখিয়াতে।জকির এবং জসিমের মধ্যে ব্যবসায়ীক লেনদেন নিয়ে ২০১৬ সালে জসিমের মামলার নথিপত্র তুলে জকিরা নিজের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করে।
অল্প ক’দিনেই চট্টগ্রামে দোকান পাট, ঘুমধুমে জায়গা জমি দোকান পাট, ব্যাংক ব্যালেন্স, নগদ টাকা বিনিয়োগ সহ অন্তত কোটি-কোটি টাকার সম্পদ ও বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছে।জকিরাদের পারিবারিক দৃশ্যমান কোন ব্যবসা নেই।তাহলে কিভাবে কোটি টাকার সম্পদের মালিক হল? আর বৈধ ব্যবসা থাকলে সরকারকে কয় টাকা রাজস্ব ও আয়কর দিয়েছেন তা নিয়ে এলাকাবাসীকে ভাবিয়ে তোলেছে।
ঘুমধুমের তরুণ সমাজকর্মী ছৈয়দ আলম বলেন,মাদক কারবারি সমাজ,জাতি ও রাষ্ট্রের শত্রু।এরা যত বড় শক্তিশালী হউক নির্মুল করতে হবে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক ডাঃশাহ জাহান বলেন,জসিম-জকির বড় ইয়াবা সিন্ডিকেট।তাদের পরিবার বিএনপি, যুবদল,ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে কৌশলে ইয়াবা কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।
ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন,মাদকের বিষয়ে আমার নিকট ছাড় নেই।মাদকের কারণে নাইক্ষ্যংছড়ি আজ কলংকিত।মাদক কারবারিদের বয়কট করে জাতি বাঁচান শ্লোগানের জয় হউক।
ঘুমধুম তদন্ত পুলিশের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা যত বড় শক্তিশালী হউক না কেন তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হইবে। তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে পুলিশ বদ্ধপরিকর।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, মাদকের বিষয়ে কোন ছাড় নেই।নাইক্ষ্যংছড়িতে প্রায় প্রতিদিন মাদক বিরোধী অভিযান চলছে।আমার দায়িত্ব কালিন সময়ে বিপুল ইয়াবা আটক করতে সক্ষম হয়েছি।জড়িতদের গ্রেফতার করে জেলহজতে প্রেরণ করেছি।মাদক নির্মুলে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ বদ্ধ পরিকর।
জসিম-জকিরার ইয়াবা ব্যবসা ও অর্জিত সম্পদের তথ্য খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা, দূর্ণীতি দমন কমিশন সহ আইন শৃংখলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ঘুমধুমের সুশীল সমাজ।