অনলাইন ডেস্ক:
‘একটা ঘর পেয়ে মানুষ যখন হাসে তখন আমার সব থেকে বেশি ভালো লাগে। জাতির পিতা এটাই তো চেয়েছিলেন। দুঃখী মানুষের মুখের এই হাসি দেখে আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে। সম্পদের পেছনে ছুটে নিজেকে মানুষের কাছে অসম্মানিত করার অর্থ হয় না। বরং মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলে সেটা বড় পাওয়া। ’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় ৩২ হাজার ৯০৪টি বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের হাতে বাড়ি তুলে দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের চারটি উপজেলা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন উপকারভোগীরা। প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের পোড়াদিয়া বালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের খাজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের খোকশাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারার বারখাইন ইউনিয়নের হাজিগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষ ঈদের আগে জমিসহ ঘর উপহার পাওয়ার আনন্দে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকার উপকারভোগীদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা তো দুঃখী মানুষের মুখেই হাসি ফোটাতে চেয়েছেন। এই বাংলাদেশ যেন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করছি। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। যে জাতি রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করে, সে জাতি পিছিয়ে থাকতে পারে না। জাতির পিতা শেখ মুজিব যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলছিলেন, তাঁর চলার পথ বাধাগ্রস্ত করতে অনেক চেষ্টা হয়েছে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে তাঁকে তো সপরিবারে হত্যাই করল। আমরা কিন্তু খুনি দুষ্কৃতকারীদের মুখে ছাই দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছি। সব বাধা অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে যাবই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি, দুঃখী মানুষের মুখের এই হাসি দেখে আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে। আপনারা তাঁর জন্য দোয়া করবেন। দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াবেন এবং তাঁদের মুখে হাসি ফোটাবেন। টাকা-পয়সা কোনো কাজে আসবে না। করোনায় তো প্রমাণ পেয়েছেন। ধন, সম্পদ, অর্থ কিছু না। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো শুধু তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) কন্যাই না, তাঁর আদর্শকে বিশ্বাস করি। কাজেই আমার কাছে ক্ষমতাটা হচ্ছে জনগণের সেবা দেওয়া, জনগণের জন্য কাজ করা। বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। একটি মানুষও যাতে গৃহহীন না থাকে এটাই ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সারা দেশে একটা সার্ভে করে দেখেছি সেখানে প্রায় আট লাখের ওপর মানুষ পেয়েছি যারা ছিন্নমূল। এই প্রতিটি মানুষকেই আমরা ঘরবাড়ি তৈরি করে দেব। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ফান্ড থেকে পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে একটা আলাদা ফান্ড তৈরি করে দিয়েছি। সেখানে আমাদের অনেক ব্যবসায়ী, ব্যাংকের মালিকসহ অনেকেই অনুদান দিয়েছেন। যার ফলে আমরা এখন শুধু খাসজমির খোঁজ করছি না, আমরা নিজেরাও জমি কিনে ছিন্নমূল মানুষের নামে জমি কিনে বিনা মূল্যে ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না, পৃথিবীর কোনো দেশে এ রকম কেউ উদ্যোগ নিয়েছে কি না? কিন্তু আমরা জাতির পিতার আদর্শের সৈনিক। ’
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাজীগাঁও প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, ফরিদপুর প্রান্তে ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান, সিরাজগঞ্জে ছিলেন সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হোসেন আলী হাসান, বরগুনায় ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, বরগুনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্কাদক জাহাঙ্গীর কবির।
প্রধানমন্ত্রীকে মাছ রান্না করে খাওয়াতে চাইলেন রুশা রানী : ঘর পেয়ে রুশা রানী মালো তাঁর স্বামীর ধরা মাছ রান্না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খাওয়াতে চান। ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার পোড়াদিয়া বালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া ১১০টি পরিবারের একটি রুশা রানী মালো ও তুষার মালো নামের জেলে দম্পতি।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে রুশা রানী বলেন, ‘বাবার বাড়িতে কষ্ট করে এসএসসি পাস করি। আমাদের নিজেদের কোনো বাড়ি ছিল না। স্বামী নৌকা চালিয়ে ও মাছ ধরে সংসার চালান। স্বামীর ধরা মাছ রান্না করে আপনাকে খাওয়াতে চাই। আপনি আমাদের এখানে বেড়াতে আসেন। ’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসতে হাসতে সেখানে যাওয়ার সম্মতি জানান।
প্রধানমন্ত্রীর জন্য কাঁথা সেলাই করেছেন রহিমা : চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রহিমা খাতুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়ে হয়েছেন স্বাবলম্বী। সেই ঘরে ফ্রিজ কিনেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য টিভি কিনেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়ার জন্য দুটি কাঁথা তিনি সেলাই করেছেন। অনুষ্ঠানে আনোয়ারা উপজেলার হাজীগাঁও থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি তাঁর বানানো কাঁথা প্রধানমন্ত্রীকে গ্রহণ করার অনুরোধ জানান।
রহিমা খাতুন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে সরাসরি দেইখ্যা কথা বলার মতো ভাগ্য আমার নাই। আমার চারটা মাইয়া নিয়ে ভাড়া বাসায় ছিলাম। অনেক বাসায় থাকার পর আপনার দেওয়া একটা বাড়ি পাইছি। বাসা এত সুন্দর, একদিকে পাহাড় আরেকদিকে সমুদ্র। বিল্ডিংটা দেখলে মনে হয়, ফাইভ স্টার হোটেলের মতো। ’
সূত্র: কালের কন্ঠ অনলাইন