অনলাইন ডেস্ক:
দেশের প্রথম মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। ভায়াডাক্টের ওপর মেট্রোরেল চলাচলের পরীক্ষণের আনুষ্ঠানিক সূচনা এটি। রবিবার (২৯ আগস্ট) দুপুর পৌনে ১২টায় উত্তরায় মেট্রোরেলের জন্য নির্মিত ডিপো থেকে এই চলাচল শুরু হয়।
আনুষ্ঠানিক শুভ সূচনা করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় ঢাকা ম্যাস র্যাপিড কম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এন এম সিদ্দিক, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপান দূতাবাসের প্রতিনিধি, জাইকার বাংলাদেশ অফিস প্রধান ও মেট্রোরেলের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, আগামী বছর তিনটি মেগা প্রজেক্ট উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জুনে পদ্মাসেতু, পরে কর্ণফুলী টানেল, বছর শেষে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের মেট্রোরেল লাইন-৬ উদ্বোধন হবে।
মন্ত্রী বলেন, এটি একটি মাইলফলক। মেট্রোরেল এখন আর স্বপ্ন নয়, এটি দৃশ্যমান বাস্তবতা। সমালোচকরা সমালোচনা ও অপপ্রচার করবে, আমরা জবাব দেবো কাজে। শেখ হাসিনা সরকার কাজেই জবাব দেয়। আমরা মেট্রোরেল, পদ্মাসেতুসহ মেগা প্রজেক্ট দিয়ে জাবাব দিচ্ছি।
এ সময় কাদের জানান, মেট্রোরেল লাইন-৬ এর কাজ সার্বিক সম্পন্ন করতে ছয় মাস লাগবে। তাছাড়া ছয়টি মেট্রোরেল ২০৩০ সালে শুরু হবে। এরমধ্যে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কাজের ৬৮.২৯ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। উত্তরা থেকে মিরপুর পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ।
মন্ত্রী স্মৃতিচারণ করে বলেন, ডিপো উন্নয়ন কার্যক্রম দেখতে এসে ঝড়ের মুখে পড়ে বৃষ্টিতে ভেজার কারণে তিনদিন জ্বরে ভুগেছি। তবে আজ খুবই ভালো লাগছে, শেখ হাসিনার অবদান, মেট্রোরেল দৃশ্যমান।
বাংলাদেশের জন্য মেট্রোরেল সেবা এই প্রথম। যার পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হলো। তবে এই চলাচল যাত্রীবিহীন। রাজধানীর উত্তরা থেকে পল্লবী পর্যন্ত চারটি স্টেশনের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এই ট্রেন চলবে। এই চলাচলকে বলা হচ্ছে ‘পারফরম্যান্স টেস্ট’।
এর আগে ১১ মে উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেলের ডিপোর ভিতরে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সামনে এই বৈদ্যুতিক ট্রেন চালিয়ে দেখানো হয়। আর গত শুক্রবার উত্তরা দিয়াবাড়ী ডিপো থেকে মিরপুর ১২ নম্বর স্টেশন পর্যন্ত ভায়াডাক্টের ওপর দিয়ে প্রথমবারের মতো মেট্রোরেল চালিয়ে দেখানো হয়, যা ছিল আজকের ট্রায়ালের প্রস্তুতি।
বর্তমানে ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়ী মেট্রোরেলের ডিপোতে দুই সেটের মোট ১২টি কোচ পৌঁছেছে, যার প্রথম সেটের ছয়টি ২১ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় সেটের আরও ছয়টি কোচ ১ জুন ঢাকা পৌঁছায়।
মেট্রোরেলে প্রতিটি সেটে থাকবে চারটি যাত্রীবাহী কোচ, দুই দিকে দুটো ইঞ্জিন। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতি বর্গমিটারে আটজনের হিসাবে ব্যস্ততম সময়ে প্রায় ১৭০০ যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। ডিএমটিসিএলের অধীনে ঢাকা ও আশপাশে মেট্রোরেলের ছয়টি লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর প্রথমটি লাইন-৬। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়ামকে ২৪ সেট ট্রেন নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুই পাশে দুটি ইঞ্জিন আর চারটি কোচের সমন্বয়ে ট্রেনের সেটগুলো তৈরি হচ্ছে জাপানে।
ডিএমটিসিএলের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার লাইনের সমন্বিত অগ্রগতি হয়েছে ৬৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার লাইনের অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। ২০২৪ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত শেষ করার নতুন লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।