গাজীপুর প্রতিনিধি : গাজীপুর রিকশা চালিয়ে এবং নিজের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে করোনাকালে গ্রামের কর্মহীন মানুষদের পাশে দাড়ায় রিকশা চালক সোহরাব হোসেন। গ্রামের মানুষদের সহযোগিতা করা এলাকার মাতাব্বর শ্রেণীর কিছু লোক তাকে রিকশা চুরির অভিযোগ এনে হয়রানি করছে। স্থানীয় পুলিশও তার রিকশাটি দেড় মাস ধরে আটকে রেখেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোক এলাকায়। চুরির অপবাদ থেকে রক্ষা পেতে এবং রিকশাটি ফেরত পেতে সোহারাব কাজ বাদ দিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বোড়াচ্ছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কাপাসিয়ার টোক এলাকায় সোহরাব নামের এক রিকশা শ্রমিক নিজের বাড়িতে ঘর বানানোর সঞ্চিত টাকা দিয়ে বাজার থেকে চাল, ডাল, তেল কিনে সহযোগিতা করেন গ্রামের অসহায় কর্মহীন মানুষদের। আর এ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা হয়। অন্যরকম ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন রিকশা শ্রমিক সোহরাব। খবর পেয়ে কাপাসিয়া উপজেলা প্রশাসান ওই রিকশা শ্রমিক সোহরাবকে সরকারিভাবে একটি ঘর বানিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু জনদরদি হতদরিদ্র সোহরাব সরকারের দেয়া ঘর না নিয়ে গ্রামের মানুষদের চলাচলের জন্য একটি সড়ক নির্মাণ করে দিতে ইউএনওর নিকট দাবি করেন। ত্রাণ দেয়া ও ঘর না নিয়ে সড়ক বানানোর বিষয়টিই যেনো কাল হয়ে উঠেছে রিকশা শ্রমিক সোহরাবের জীবনে। গ্রামের কিছু মাতাব্বরের চক্ষুসূর হয়ে উঠে দরিদ্র সোহরাব। তাদের ধারণা আগামী দিনে সোহরাব নেতা বনে যাবে। সামনে নির্বাচন হয়ে যাবে ইউপি মেম্বার। তাই এখনই আটকাতে হবে সোহরাবকে। আর যেই কথা সেই কাজ। এলাকার মাতাব্বররা সোহরাবের পিছনে লেগে যায়। লেলিয়ে দেয় পুলিশ। অপবাদ দিতে থাকে সোহরাব চোর। রিকশা চুরির সাথে সোহরাবের সংযোগ রয়েছে। সোহরাবকে রিকশা চোর বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে প্রতিপক্ষরা। কাপাসিয়ার টোক ফাঁড়ির পুলিশ গত দেড় মাস আগে সোহরাবের ব্যবহৃত অটো রিকশা আটক করে। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও আটককৃত অটো রিকশার মালিক হিসেবে কাউকে দাঁড় করাতে পারেনি পুলিশ। এলাকার ওই মাতাব্বররা বিষয়টি মোটা অংকের বিনিময়ে রফাদফা করতে চাপ দিচ্ছে সোহরাবকে। আর পুলিশের হুমকি-ধমকির ভয়ে সোহরাব এখন বাড়ি ছাড়া। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে সোহরাবের স্ত্রী-সন্তানদের।
অটো রিকশা চালক সোহরাব হোসেন বলেন, অটো রিকশা কিনার কাগজপত্র দেখালেও পুলিশ গাড়ি আটকে রেখেছে। আমাকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি ধমকি দিচ্ছে। রিকশা চালাতে না পেরে অভাবের মধ্যে জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
টোক এলাকার এশাধীক বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, টোক ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের নারি-পুরুষ বলছে দরিদ্র রিকশা চালক সোহরাবকে ফাঁসানো হচ্ছে। এ সময় এলাকাবাসী দাবি করেন, রিকশা শ্রমিক সোহরাব নিজের থাকার ঘর বানানোর সঞ্চিত টাকা দিয়ে অসহায় খেটে খাওয়া মানুষদের ত্রাণ বিতরণ করেছে। ত্রাণ দেয়ার পর থেকে এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচিত হয়ে উঠেন সোহরাব। আর এ কারণে গ্রামের কিছু মাদবর বলাবলি শুরু করেন রিকশাওয়ালা নেতা হয়ে যাচ্ছে, তাকে থামাতে হবে। সুলতানপুর গ্রামের বাবুল হোসেন, ফারুক হোসেন, দুলাল মিয়া, মো. মোবারক ও নজরুল ইসলাম নামের কয়েজন ব্যাক্তি মিলে টোক পুলিশ ফাঁড়ির ক্যাম্প ইনচার্জকে জানায় সোহরাব অটো রিকশা চুরির ব্যবসা করেন। তাকে আটক করলে মোটা অংক পাওয়া যাবে।এলাকার ইউপি সদস্য আলাল উদ্দিন বলেন, খেটে খাওয়া রিকশা শ্রমিক সোহরাবের মতো একজন অসহায়কে এভাবে হয়রানির সুষ্ঠু বিচার চাই। সোহরাব নিজের সঞ্চিত টাকা দিয়ে সাধারণ মানুষকে একটু ত্রাণ দেয়ায় এলাকার কিছু মাতাব্বররা এখন হিংসায় জ্বলছে।
কাপাসিয়ার টোক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, সোহরাব একজন গরীব খেটে খাওয়া মানুষ। তার সততায় আমরা মুগ্ধ হয়ে তাকে ওয়ার্ড শ্রমিকলীগের সভাপতি করেছি।
দেড় মাস যাবত ফাঁড়িতে আটকে রাখা অটোরিকশার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন টোক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সিদ্দিকুর রহমন।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. ইসমত আরা বলেন, ঘর বানানোর টাকা দিয়ে ত্রাণ দিয়েছে জেনে সোহরাবকে সরকারিভাবে ঘর দেয়ার প্রস্তাব দেই আমরা। সোহরাব ঘর না নিয়ে উল্টো আমাকে প্রস্তাব দেয় তার এলাকায় একটি সড়ক নির্মাণ করে দিতে।
গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমানত হোসেন খান বলেন, রিকশা শ্রমিক সোহরাব নিজের টাকায় অসহায়দের সহযোগিতা করে নিজেই ফেসে গেলেন।কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা তদন্ত করছি আটককৃত অটো রিকশা চুরির কিনা।