ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪০ বছর আগে গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে জনসাধারণের জন্য চলাচলের রাস্তা নিজের দাবি করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার অভিযোগে আমেরিকান প্রবাসী পরিবারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলা দায়ের করা হয়। গ্রামবাসীর পক্ষে ভুক্তভোগী ৫টি পরিবার বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করে।
মামলার বাদিরা হলেন, সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ জগৎসার গ্রামের মৃত ইদ্রিস মিয়ার ছেলে খোরশেদ আলম, মৃত হাফেজ মিয়ার ছেলে আবু সায়েদ, মৃত জুহুর আলীর ছেলে জাকির হোসেন, আবুল হোসেনের ছেলে মলাই মিয়া এবং মৃত ধন মিয়ার ছেলে হামিদুর রহমান।
মামলায় একই গ্রামের মৃত আলী নেওয়াজের ছেলে সুমন খান, হাবিল খান, সুলতান খানের ছেলে দিপু খান, টিটু খান, টিপু খান এবং মৃত মস্তু খানের ছেলে সুলতান খানকে আসামী করা হয়েছে।
আদালত আদেশে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি আসামীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন।
আদালত জমা দেওয়া একহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ জগৎসার গ্রামে একটি সরু রাস্তা দিয়ে মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কবরস্থানে যাতায়াত ছিল গ্রামবাসীর। যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রায় ৪০ বছর আগে গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে সেই সরু রাস্তার দুইপাশের জমির মালিকদের কাছ থেকে জায়গা নিয়ে রাস্তাটি প্রসস্থ করে। এর দীর্ঘদিন পর স্থানীয় আমেরিকা প্রবাসী লিয়াকত খানের পরিবারের সড়কের দক্ষিণ পাশে সব জায়গায় ক্রয় করেন। তারা জায়গা ক্রয় করার পর ২০১৫ সালে গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমের তৈরি করা রাস্তাটি নিজেদের ব্যক্তিগত দাবি করে একই পরিবারের মৃত আলী নেওয়াজের ছেলে সুমন খানের নেতৃত্বে অন্যান্য আসামীদের নিয়ে সাধারণ জনগণের যাতায়াতের বাধা প্রদান করতে থাকেন। পাশাপাশি ওই রাস্তার উপর মুক্তিযোদ্ধার নাম ব্যবহার করে অবৈধ ভাবে তোরণ নির্মাণ করেন। সেই তোরণে পারিবারিক রাস্তা হিসেবে লিখে দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে গ্রামবাসী তৎকালীন ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের জন্য আদেশ দেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সেই অবৈধ তোরণ ৭দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন উপজেলা প্রশাসন। এরই জেরে গ্রামবাসীর সাথে ওই আমেরিকা প্রবাসী পরিবারের মারামারি হয়। পরে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে এক শালিসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় তোরণে ‘পারিবারিক সড়ক’ লেখাটি কেটে ফেলতে এবং রাস্তাটি ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ প্রদান করে। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সেই পরিবার এখনো ইউনিয়ন পরিষদে কোন প্রকার আবেদন করেনি। তারা নিজেদের রাস্তা দাবি করে তাদের ক্রয় করা জায়গার উত্তর পাশের জমি ও বাড়িঘরের সামনে দেয়াল নির্মাণ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যেন কেউ বাড়ি থেকে বের হতে না পারেন। এছাড়াও তাদের বাড়ির গরু কবর স্থান গুলোতে ছেড়ে রেখে পবিত্রতা নষ্ট করছে। এসব বিষয়ে কেউ বাধা দিলে হুমকি প্রদান করে। এই ঘটনায় অবশেষে আদালতে মামলা দায়ের করলেন ভুক্তভোগী পরিবার গুলো।
বাদি পক্ষের আইনজীবী মো. ইসমাইল মিয়া জানান, ‘আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে এবং এই ঘটনায় যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত না হয় এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি আদালত আসামীদের ‘কেন অবৈধ দেয়াল ও রাস্তা ভেঙে ফেলা হবে না’ এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।’
এই বিষয়ে মামলার এক বাদি হামিদুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ১৭ বছর আগে আমার ৬শতাংশ জায়গা বিক্রয় করেছি। জায়গা ক্রয় করা পরিবার বাড়ি নির্মাণ করলে তাদের যাতায়াতের রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে আমেরিকা প্রবাসী লিয়াকত খানের ভাতিজা সুমন খান।’
আরেক বাদি খোরশেদ আলম বলেন, ‘এই রাস্তার পাশে আমাদের ৬০ শতাংশ জায়গা রয়েছে। গত ৭ অক্টোবর আমার জায়গায় মাটি ফেলতে মিনি ট্রাক নিয়ে রাস্তায় উঠলে সুমন খান তার সঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে আমার গতিরোধ করেন। সে তখন বলে, এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবে না এবং হুমকি প্রদান করেন। আদালতে মামলা ছাড়াও ওই ঘটনায় আমি থানায় একটি অভিযোগ জমা দিয়েছি।