গাজীপুর প্রতিনিধিঃ
সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থে অথবা গ্রামের জায়গা জমি বিক্রি করে ফ্ল্যাট কিনতে চান অনেকে। আর এ ফ্ল্যাট কেনাবেচার ক্ষেত্রে মালিক ও ক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য রয়েছে অসংখ্য মধ্যস্থতাকারী। কিন্তু ফ্ল্যাট ক্রেতারা হরহামেশা মধ্যস্থতাকারী নামধারী কিছু প্রতারকের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। কখনো অন্যের ফ্ল্যাট ক্রেতাকে দেখিয়ে বায়নার নামে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করছে। ভুক্তভোগীদের অনেকে ফ্ল্যাট কিনে পড়ছেন চরম বিপাকে। আর এভাবেই ফ্ল্যাট বিক্রির নামে প্রতারক চক্রগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। প্রতারিত হওয়ার পর টাকা ফেরত চাইলে অনেক ক্রেতাকে নির্যাতনসহ হুমকিও দিচ্ছে। সম্প্রতি গাজীপুরে ফ্ল্যাট কিংবা বাড়ি কিনে প্রতারিত হওয়া ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বললে বেড়িয়ে এসেছে একজন প্রতারকের বিষয়ে এসব তথ্য। অভিনব কায়দায় বাড়ি বিক্রির নামে প্রতারনার ফাঁদ পেতে বসেছেন গাজীপুর সিটির ২৭ নং ওয়ার্ড লক্ষীপুরা এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান নামের এক প্রতারক। সে মরহুম আবু তাহের এর সন্তান।
জানা গেছে, সাবেক ৪২ নং, হালে ৪৪ নং চান্দনা মৌজার খতিয়ান নং এসএ-৫৬, আরএস-১০৯, দাগ নং সিএস ও এসএ ১৬৭, আরএস-৩৪৫ নং দাগের চালা জমি ৪৫ শতাংশ , কাতে ০৪.৫০ শতাংশ জমির কাতে বায়নাকৃত জমি ০২.২৪ শতাংশ জমির উপর নির্মিত চার তলা ভবনের ২য় তলায় ১৯৬০ বর্গফুট এবং ৪র্থ তলায় ১৯৬০ বর্গফুট একুনে ৩৯২০ বর্গফুট আয়তনের দুইটি ফ্ল্যাট হাবিবুর রহমানের সাথে ঢাকা ক্যান্টনম্যান্ট আদর্শ পল্লী ইব্রাহিমপুর এলাকার মরহুম শামছ উদ্দিন এর ছেলে সাহাব উদ্দিনের সাথে ০৩/০৩/২০২১ সালে ৪০ লাখ টাকা বায়না নামে চুক্তি হয়। বায়না পত্রে নগদে ৫ লাখ এবং বাকি ৩৫ লাখ টাকা দেওয়ার পর বাড়ি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। পরবর্তিতে বায়না চুক্তির বাকি ৩৫লাখ টাকা বুঝিয়ে দিলেও রেজিষ্ট্রির নামে নানাভাবে গড়িমসি করেন প্রতারক হাবিবুর রহমান। একপর্যায়ে এই বাড়ি দেখিয়ে প্রতারক হাবিবুর রহমান আরো ২০-২৫ জনের কাছ থেকে প্রায় ৫কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা যায়। সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপরোল্লেখিত তফসিল ভুক্ত বাড়ি তার ছেলে মো: ইমতিয়াজ মাহমুদ (নিশান) ও মেয়ে হাবিবা ইসলাম নির্জনার নামে সমান ভাগে হেবাদলিল মুলে লিখে দেন। পরবর্তিতে গত ৬মাস পূর্বে উক্ত বাড়ি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের কাছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যে বিক্রি করে নগদে ৬০ লাখ টাকা নিয়ে বর্তমানে সে স্বপরিবারে পলাতক রয়েছেন বলে জানা যায়। এব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন বলেন, আমার মিরের বাজারের জমি বিক্রি করে আমি দালালের মাধ্যমে প্রতারক হাবিবকে টাকা দিয়ে আজ আমি নিঃস্ব। প্রতারক হাবিব আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমাকে পুরো বাড়ি দেওয়ার কথা বলে একটি ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিয়ে স্বপরিবারে লাপাত্তা হয়ে গেছে।
এবিষয়ে আরেক ভুক্তভোগী পত্রিকা ব্যবসায়ী ও ঢাকা নিবাসী সাহাব উদ্দিন বলেন, প্রতারক হাবিবুর রহমানের সাথে আমার ৪০ লাখ টাকা বায়না নামে চুক্তি হয়। বায়না পত্রে নগদে ৫ লাখ এবং বাকি ৩৫ লাখ টাকা দেওয়ার পর বাড়ি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। পরবর্তিতে বায়না চুক্তির বাকি ৩৫ লাখ টাকা বুঝিয়ে দিলেও রেজিষ্ট্রির নামে নানাভাবে গড়িমসি করেন প্রতারক হাবিবুর রহমান। একপর্যায়ে আমার সাথে বায়না করার পর প্রতারক হাবিবুর রহমান ওই বাড়ি ব্রাক ব্যাংক গাজীপুর শাখার নিকট বন্ধক রেখে ঋণের নামে আরো ৫৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে করেই অত্র এলাকায় প্রতারক হাবিবুর রহমান ও তার স্ত্রী সন্তানরা মিলে আরো ২০-২৫ জন সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৫কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বর্তমানে পলাতক রয়েছেন বলে জানান তিনি।