গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধানকাজ শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অনুসন্ধানে অভিযোগের প্রমাণ পেলে কিরণের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন আদালত। আর এ অনুসন্ধান কাজে দুদক সহযোগিতা চাইলে অন্যান্য বিবাদীদের সহযোগিতা দিতে বলা হয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দুই বাসিন্দার রিটে প্রাথমিক শুনানির পর আজ মঙ্গলবার রুলসহ আদেশ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রিটে। দুদকের চেয়ারম্যান, স্থানীয় সরকার সচিব, দুদক সচিব, বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারোয়ার আহমেদ, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আলী ও সাজ্জাদুল ইসলাম। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি।
আইনজীবী সারোয়ার আহমেদ বলেন, ‘রিট আবেদনকারী নজরুল ইসলাম গত বছরের ২২ জুলাই কিরণের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ দুর্নীতির অভিযোগ এনে দুদকে আবেদন করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কেনা, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতর অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানের আরজি ছিল সে আবেদনে। কিন্তু দুদক এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। পরে ‘কিরণের কেরামতিতে বেহাল গাজীপুর সিটি করপোরেশন’ শিরোনামে গত বছর ২১ আগস্ট একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওই প্রতিবেদনটি যুক্ত করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ও জিল্লুর রহমান চলতি সপ্তাহে হাইকোর্টে রিট করেন। আদালত রুল ও অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছেন।’
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গোপনে ধারণ করা জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে জড়িয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। এই অভিযোগের জেরে ওই বছর ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে টেন্ডারবাজি, অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ করার পাশাপাশি বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বরখাস্তের পর তিন সদস্যের মেয়র প্যানেল গঠন করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, তালিকার প্রথম ব্যক্তি ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তার অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় জন, পর্যায়ক্রমে তৃতীয়জন দায়িত্ব পালন করবেন। সে অনুয়ায়ী প্যানেলের প্রথম ব্যক্তি হন ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ। মেয়র প্যানেলের অপর দুই সদস্য হলেন- ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আব্দুল আলীম মোল্লা এবং ২৮, ২৯, ৩০ নম্বর (সংরক্ষিত ওয়ার্ড-১০) মহিলা কাউন্সিলর মোসা. আয়েশা আক্তার। বরখাস্তের তিন দিন পর অর্থাৎ ওই বছরের ২৮ নভেম্বর আসাদুর রহমান কিরণকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র এম এ মান্নান বরখাস্ত হওয়ার পর ২০১৫ সালের ৫ মার্চ থেকে ২০১৮ সালের ১৮ জুন পর্যন্ত ২৭ মাস ১৩ দিন ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন কিরণ।
এদিকে গত বছর ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুসারে ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থপরিপন্থী ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে জাহাঙ্গীর আলমের ক্ষমা ঘোষণা করে দলটি। পরে গত ২১ জানুয়ারি ক্ষমা ঘোষণার চিঠি পান জাহাঙ্গীর আলম।