ইমরান হোসেন, সিরাজগঞ্জঃ
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় কৃষি মাঠ জুড়ে এখন গমের ছরার দুলানি ৷ যেদিকে চোখ যায় শুধু আধা পাঁকা গমের ছরা বাতাসের ছোঁয়ায় দুলোনিতে দু’চোখ ভরে যায়৷ হলুদ আর সবুজের সমারহে এ এক মনোরম ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশ ৷ উপজেলার কৃষকরাও গত বছরের চেয়ে গমের ভালো ফলন পেয়ে এ বছর ব্যাপক ভাবে গমচাষ শুরু করেছে। যমুনা নদী বিধৌত ভাঙ্গান কবলিত জনপদের এই উপজেলায় প্রতি বছর হাজার হাজার আবাদি জমি কড়াল গ্রাসে হারিয়ে যায় রাক্ষসি যমুনার গর্ভে আবার উৎপাদিত ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। কৃষি জমি ও ফসল হারিয়ে কৃষক হয়ে পরেন দিশেহারা। সর্বস্ব খুইয়ে এক সময়ের জোতদার হয়ে পরে দিন মুজুর। ঋণ ও সুদের ঘানি টানতে গিয়ে মহাজনের পাওনা পরিষধে বিক্রি করতে হয় হালের বলদ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে মাঠ পর্যায়ে জনসচেতনতা মূলক কাজ করে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় কৃষি মাঠজুড়ে গমচাষে পাল্টে যাচ্ছে কৃষককের জীবন জীবিকা ও চাষাবাদের ধরণ। উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভাঙ্গা গড়া এ এলাকায় গমের ফলনকে টাগের্ট করে চাষাবাদের ব্যাপক সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
কৃষকদের গম চাষে আগ্রহ সৃষ্টি করতে গত বছর কৃষি অফিস একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এর ফলে গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ২৯৬ মেঃটন গম উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬০০ মেঃটন ৷ লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৫৫ হেক্টর বেশি, গড় ফলন ৩.২ মেঃটন ৷ প্রোনোদনা ও পূণর্বাসনের আওতায় গম বীজ সহ উপকরণ বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয় ১ হাজার ৪০০ কৃষকের মাঝে। লক্ষ্যে পৌঁছাতে ইতোমধ্যে কৃষি অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্প, পুষ্টি প্রকল্প, বীজ,সার,কীটনাশক সরবরাহ কারি বিভিন্ন কোম্পানির সাথে যৌথ ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা কৃষি অফিস। উপজেলা সদর ও দুর্গম চরাঞ্চলের গম চাষী কৃষক দল গঠন ও উৎপাদিত সঠিক মূল্যে বিক্রি করতে স্থানীয় পর্যায়ে কৃষক নতুন জাতের গমের প্রদর্শনি প্লট স্থাপন, দলভুক্ত কৃষক আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ, সুষম সারের ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান, বালাই দমনে কোয়ালিটি সমৃদ্ধ বালাই নাশক এবং হাইব্রিড জাতের বীজের সরবরাহ নিশ্চিতকরণের মতো কাজ করে যাচ্ছেন তারা। ফলে কৃষকের মধ্যে গম চাষের আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। এবছর রাজস্ব খাতের মাধ্যমে ২০ টি এবং আরও কিছু প্রকল্পের আওতায় নতুন হাইব্রিড জাতের গমের মাঠ প্রদর্শনী প্লট করা হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিসার, উপসহকারী কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে মাঠ পরিদর্শন এবং কৃষককের সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের করনীয় বিষয় পরামর্শ প্রদান করেন। মান সম্মত বীজ সরবরাহ করতে বিভিন্ন হাইব্রিড বীজ আমদানিকারক কোম্পানির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
কৃষককের মাঝে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে আইসিএম আইপিএম এর মাধ্যমে ফসল উৎপাদন উদ্ধকরণ চলছে। কৃষি অফিসের দায়িত্বশীল অফিসারদের পরামর্শে কৃষকরা এবার সুপার সাইন ২৭৬০ জাতের গমের বীজ রোপণ করছেন। কৃষি অফিস তথ্য মতে ২০২০/০২১ অর্থ বছরে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ৪০ টি প্রদর্শনি প্লট স্থাপন করা হয়।
চাহিদাও রয়েছে বেশ ভালো, অন্যান্য ফসলের চেয়ে দাম ও লাভের মুখ বেশি। উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের কৃষক
গম চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, গতবার কৃষি স্যারদের পরামর্শে গমের আবাদ করে আর সব ফসলের চেয়ে বেশি টাকা পাইছি। আমির হোসেন জানান, গমের ফলন ভাল পাই, কোন কিছুই ফেলতে হয় না, সবকিছু থেকেই টাকা আসে।
চৌহালী উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জেরিন আহমেদ বলেন, চৌহালী উপজেলা যমুনা নদী বিধৌত ভাঙ্গন কবলিত এলাকা হলেও গম চাষের জন্য উপযোগী। দাম ও ফলন ভাল পাওয়া যায় । নিবিড় প্রশিক্ষণ নিয়ে সঠিক সময়ে বীজ রোপণ করে গম চাষে লাভবান হয়েছে চৌহালীর কৃষকরা।