Saturday , 12 April 2025
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সাংবাদিকদের
--ফাইল ছবি

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সাংবাদিকদের

অনলাইন ডেস্কঃ

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যেও এরই মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বেশির ভাগই বলেছেন, কমিশনের প্রতিবেদনে কিছু উদ্ভট প্রস্তাব রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন— কে সাংবাদিক হতে পারবেন আর কে পারবেন না তা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই।

সম্পাদক হওয়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম আগেই ছিল। প্রশ্ন হলো, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এই সিদ্ধান্ত কি কার্যকর করা যাবে? সাংবাদিক তৈরি হয় পেশার প্রতি তাদের মনপ্রাণ উজাড় করা অপ্রতিরোধ্য অসাধারণ জীবনীশক্তিতে ভর করে। একটি সার্টিফিকেট কি এক ‘অরাজক’ এবং ‘বিশৃঙ্খল’ অবস্থা থেকে সংবাদমাধ্যমকে মুক্ত করতে পারবে?দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য একটি ক্রান্তিকাল পার করছে। লাভজনক ব্যবসাই এখন লোকসান গুনছে।

পুরনোটা চালাতেই হিমশিম অবস্থা। কেউ নতুন বিনিয়োগেও আসছে না।সম্পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন গণমাধ্যমের বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার অর্থ হবে—ছোট ছোট সংবাদমাধ্যমকে গলা টিপে হত্যা করা। কিভাবে পেশাদার সাংবাদিক তৈরি করা যায়, কিভাবে একটি মানসম্পন্ন মিডিয়া তৈরি করা যায়, কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে বিদ্যমান একটি মিডিয়া হাউস আরো দক্ষ ও পেশাদার হবে, বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতা করতে পারবে—তার জন্য সরকার কী করতে পারে, নিয়ন্ত্রকরা কী করতে পারেন—প্রস্তাব হতে হবে এসব।

কেউ কেউ বলছেন, সংবাদমাধ্যমে বেতন কাঠামো কেন সরকার নির্ধারণ করবে? শুধু সরকারি বিজ্ঞাপনের সুযোগ নিয়েই কি এই সিদ্ধান্ত চাপানো হচ্ছে? সব গণমাধ্যম কী বৈষম্যহীনভাবে সরকারি বিজ্ঞাপন পায়? সেখানে কী স্বেচ্ছাচার, অনিয়ম নেই? আর কেবল সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়েই কি একটা সংবাদপত্র টিকে থাকতে পারে? এগুলো নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা কমিশন করেছে বলে মনে হয়নি।

বিভিন্ন মহল থেকে জোর দাবি উঠেছে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে, কমিশন সবার সঙ্গে আরো বৃহৎ পরিসরে কথা বলে, সার্বিক বিষয়টি পর্যালোচনা করে যা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ করবে। মূলত একটি পেশাদার মিডিয়া হাউস তৈরি করা, বিজ্ঞাপনের বণ্টন বৈষম্যহীন করা, বিজ্ঞাপনের হার বাড়ানো, পেশাদার সাংবাদিক তৈরি করতে, পেশার মান বাড়াতে, তাঁদের লেখনীর স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে সরকার ভর্তুকি বা বিশেষ বরাদ্দ দিতে পারে।

এখানে প্রতিযোগিতামূলক কৌশলও নিতে পারে। বরং এটিই হবে সাংবাদিকতাকে সত্যিকার অর্থে এগিয়ে নেওয়ার প্রকৃত উপায়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বসেরা একজন সম্মাননীয় ব্যক্তি। তিনি দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন ফেরানোর দায়িত্ব পেয়েছেন। আশা করা যায়, কমিশনের ভেতরে যে দুর্বলতাগুলো রয়েছে, সেগুলো তিনি নিজস্ব পর্যবেক্ষণে বিচার করে দেশের মিডিয়াকে বাঁচানোর পদক্ষেপ নেবেন। একমাত্র মিডিয়াই শত কষ্টের মধ্যেও এখনো সমানভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই মিডিয়াই জুলাই অভ্যুত্থানে অতন্দ্র প্রহরীর মতো ছাত্রদের সঙ্গে জীবন বাজি রেখে রাজপথে থেকে দায়িত্ব পালন করেছে। কেউ কেউ আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন। জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও দায়িত্ব পালন করে গেছেন। নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে অন্য সবার মতো সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের কারো পথ আগলে ধরেননি। আত্মসম্মানবোধ বজায় রেখে তাঁরা সরকারের ভালো কাজে পাশে থেকে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু আকস্মিক কমিশন হটকারী ও মিডিয়া ধ্বংসের যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে তাঁরা ক্ষুব্ধ, হতাশ ও বিস্মিত। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন মানে হাজারো সংবাদকর্মীর চাকরি হারানো। কর্মীরা এরই মধ্যে ভীত-সন্ত্রস্ত। এমনটি হলে হাজারো সংবাদকর্মীর রাস্তায় নামা ছাড়া গতি থাকবে না। এটি তাঁদের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত কি না এটাও ভেবে দেখা দরকার।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply