Thursday , 21 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

গণতন্ত্রকে ধুলায় মেশালেন ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক:

গণতন্ত্র নিয়ে আত্ম-অহংকারে মগ্ন যুক্তরাষ্ট্রের মাথা বিশ্ববাসীর সামনে অনেকটাই নত হয়ে গেল। মার্কিন গণতন্ত্রের ২০০ বছরের ইতিহাসে যা কখনো ঘটেনি, শেষমেশ তা-ই করে দেখালেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জো বাইডেনের বিজয় ঠেকাতে গণতন্ত্রকে ধুলায় মিশিয়ে নিজের কর্মী-সমর্থকদের দিয়ে মার্কিন কংগ্রেস ক্যাপিটলে হামলা চালালেন তিনি। এতে বাইডেনের বিজয় তিনি ঠেকাতে পারেননি, উল্টো চার ঘণ্টা ধরে চলা দাঙ্গা-হাঙ্গামায় প্রাণ হারাতে হয়েছে চারজনকে। কংগ্রেস ভবনে নজিরবিহীন এই হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিশ্বনেতারা।

এদিকে সহিংসতার পর এক যৌথ অধিবেশনে বাইডেনকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট এবং কমলা হ্যারিসকে ভাইস প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতি দিয়েছে কংগ্রেস। অন্যদিকে ‘নিয়মমাফিক’ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগের ব্যাপারে এখনো অটল আছেন তিনি।

ঘটনার সূত্রপাত

বাইডেনের বিজয়কে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে গত বুধবার দুপুরের দিকে মার্কিন কংগ্রেসে যৌথ অধিবেশন শুরু হয়। এর আগে হোয়াইট হাউসে কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থকের সামনে ভাষণ দেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলেন। আর কারচুপির ক্ষোভ জানাতে কর্মী-সমর্থকদের ক্যাপিটল হিলের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এর পরেই ট্রাম্পের সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলের দিকে অগ্রসর হয়। তারা ক্যাপিটল ভবনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। একপর্যায়ে কংগ্রেসের অধিবেশন চলার মধ্যেই ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়ে তারা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করে। কিন্তু ট্রাম্প সমর্থকরা এর মধ্যেই জ্বালাও-পোড়াও ও ভাঙচুর চালাতে থাকে। তখন পুলিশ অধিবেশন কক্ষে থাকা আইন প্রণেতাদের তাঁদের আসনের নিচ থেকে গ্যাস মাস্ক পরার পরামর্শ দেয়। মিশিগানের কংগ্রেস সদস্য হ্যালি স্টিভেন্স টুইটে লেখেছেন, ‘আমি আমার কার্যালয়ের এক জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছি। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমাকে এই কথাটি লিখতে হচ্ছে।’

সহিংসতা চলার সময় সমর্থকদের থামাতে ট্রাম্পকে আহ্বান জানান বাইডেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্র নজিরবিহীন হামলার শিকার হয়েছে। এটা নিয়মতান্ত্রিক কোনো আন্দোলন নয়, এটা দাঙ্গায় রূপ নিয়েছে, এটা রাষ্ট্রদ্রোহের সীমায় পৌঁছে গেছে। এই মুহূর্তে সহিংসতা বন্ধ হওয়া উচিত।’

এর কিছু সময় পর সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প টুইটারে লেখেন, ‘আমাদের শান্তি বজায় রাখতে হবে। তাই আপনারা এখন বাড়ি ফিরে যান। আমরা আপনাদের ভালোবাসি। আপনারা আমাদের কাছে খুবই বিশেষ কেউ।’

নিহত চার

প্রায় চার ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা। এরপর স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কংগ্রেস ভবনকে নিরাপদ ঘোষণা করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সহিংসতায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের মধ্যে এক নারীও রয়েছেন, যিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অ্যাশলি ব্যাবিট নামের ওই নারী সান দিয়াগো শহরের বাসিন্দা। তিনি ট্রাম্পের সমর্থক এবং বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। বাকি তিনজনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। তাদের মৃত্যুর কারণ কিংবা পরিচয় জানা যায়নি। হামলার পর বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শহরজুড়ে কারফিউ জারি করেন ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মিউরিয়েল বাউজার। এ ছাড়া ক্যাপিটল পুলিশকে সহায়তা করতে কংগ্রেস ভবনে ন্যাশনাল গার্ডের সেনা, এফবিআই এজেন্ট ও মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। কংগ্রেস ভবনে হামলা এবং কারফিউ ভঙ্গের অভিযোগে গতকাল পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নজিরবিহীন

ঐতিহাসিকরা বলছেন, বিগত ২০৬ বছরের মধ্যে ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনা ঘটেনি। সর্বশেষ হামলা হয় ১৮১৪ সালে। ১৮১২ সালের যুদ্ধের একপর্যায়ে ব্রিটিশ সেনারা ওই ভবনটি পুড়িয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্য ও তাদের মিত্রদের মধ্যে ওই যুদ্ধ হয়। তবে অভ্যন্তরীণভাবে ক্যাপিটলে হামলার ঘটনা এটিই প্রথম।

বাইডেনকেই স্বীকৃতি

সহিংসতার কয়েক ঘণ্টা পরেই পুনরায় কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন শুরু হয়। সেখানে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ঘোষণা দেন, ‘আগামী ২০ জানুয়ারি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিস শপথ নেবেন।’

নিয়ম অনুযায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স কংগ্রেসের এই যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হলেও কংগ্রেস ভবনে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। হামলাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘আপনারা এভাবে জিততে পারবেন না।’

অধিবেশনের শুরুতে বাইডেনের আরিজোনার জয়কে চ্যালেঞ্জ জানান রিপাবলিকান আইন প্রণেতারা। এর মধ্যে নিম্নকক্ষের ১২১ জন নির্বাচনের ফল নিয়ে আপত্তি তোলেন। কিন্তু সিনেটে যখন অভিযোগটি ওঠে, তখন এর পক্ষে ছিলেন মাত্র ছয়জন। এ ছাড়া কংগ্রেসে হামলার কারণে রিপাবলিকান দলের ছয় সিনেট সদস্য কারচুপির অভিযোগ তোলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ান। তাঁদের মধ্যে আছেন মিচ ম্যাককনেল। তিনি বলেন, ‘ভোটার, আদালত এবং বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করছে। আমরা যদি তাদের প্রত্যাখ্যান করি, তাহলে আমরা নিজ দলেরই ক্ষতি করব।’

ট্রাম্পের টুইটার সাময়িক বন্ধ

ঘটনার পর ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় ফেসবুক ও টুইটার। টুইটার জানায়, নিয়ম লঙ্ঘন করায় তারা ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট ১২ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে তারা। অন্যদিকে ফেসবুক জানিয়েছে, ট্রাম্প আগামী ২৪ ঘণ্টায় কোনো তথ্য বা ছবি পোস্ট করতে পারবেন না। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, দাঙ্গায় অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প যে ভিডিও পোস্ট করেছিলেন, সেটি এরই মধ্যে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ফেসবুকের মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রামেও ২৪ ঘণ্টা নিষিদ্ধ থাকবেন ট্রাম্প।

এদিকে ক্যাপিটলে হামলার ঘটনার পর হোয়াইট হাউসের চার কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা হলেন সহকারী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ম্যাট পটিঞ্জার, ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের দুই সহযোগী স্টেফানি গ্রিশাম ও রিকি নিসেটা এবং হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সারাহ ম্যাথিউস।

আগেই সরানো হতে পারে ট্রাম্পকে

নিয়ম অনুযায়ী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত হোয়াইট হাউসে থাকবেন ট্রাম্প। কিন্তু এর আগেই তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানো যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য। এ ক্ষেত্রে মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী ব্যবহার করা হতে পারে। ২৫তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভা যদি মনে করে যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মানসিক কিংবা শারীরিকভাবে দায়িত্ব পালনে অযোগ্য, তাহলে তাঁকে সরিয়ে দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভায় ভোটাভুটি হতে হবে।

সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন, এএফপি।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply