অনলাইন ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমে হঠাৎ পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যাপক হারে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। টিকাস্বল্পতার কারণে সাত দিনের পরিবর্তে আপাতত এক দিন এ কর্মসূচি চলবে। শুধু ৭ আগস্ট দেশের ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ১৫ হাজার ২৮৭টি ওয়ার্ডে এক সেশনে দেওয়া হবে প্রথম ডোজ।
প্রতি ওয়ার্ডে ৩ শ করে ৪৫ লাখ ৮৬ হাজার ১০০ টিকা দেওয়া হবে। এসব কেন্দ্রের বিপরীতে আগাম রেজিস্ট্রেশনের ভিত্তিতে বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ, নারী, প্রতিবন্ধীরা সুযোগ পাবেন। ১৪ আগস্ট থেকে প্রাপ্তি সাপেক্ষে দেশব্যপী সাত দিনের গণটিকা কর্মসূচি ফের শুরুর সম্ভাবনা আছে।
বুধবার (০৪ আগস্ট) সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শনিবার ৭ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে গণটিকা কর্মসূচির আওতায় এক কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করেছিল তারা। কিন্তু হঠাৎ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করায় এ কর্মসূচি শুরুর আগেই হোঁচট খেল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার সংক্রমণ ও প্রাণহানি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক কাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে গণটিকাদান কর্মসূচির ঘোষণা সবাইকে আশাবাদী করে তুলেছিল। কিন্তু নতুন ঘোষণা তাদের শঙ্কা বাড়িয়ে দেবে বলে তারা মনে করছেন।
জানা গেছে, সরকারের কাছে বর্তমানে টিকার মজুদ আছে ৮৯ লাখ ডোজ। এখান থেকেই ৭ আগস্ট প্রথম ডোজ হিসাবে প্রায় ৪৬ লাখ দেওয়া হবে। বাকি টিকাগুলো বর্তমানে যেভাবে ও যেসব স্থানে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে ব্যবহার করা হবে। এরপর নতুন করে টিকা এলে কর্মসূচির পরিধি আবার বাড়ানো হবে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সব কিছুই নির্ভর করছে সময়মতো টিকা পাওয়ার ওপর। তিনি বলেন, শনিবার টিকা দেওয়া হবে। এতে জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংযুক্ত থাকবে। কর্মসূচির মূল লক্ষ্য বয়স্কদের টিকার আওতায় আনা। কারণ তাদের মধ্যে টিকা নেওয়ার প্রবণতা কম এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও বেশি। তবে বয়স্কদের পাশাপাশি অন্যরাও টিকা পাবেন।
তিনি বলেন, এখনই ১৮-ঊর্ধ্ব সবাইকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে না। বর্তমানে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ফ্রন্টলাইনার হিসেবে যারা কর্মরত, তাদের পরিবারের সদস্যরা টিকা পাবেন। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ২৫ বছর।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চায়না, ভারত, কোভ্যাক্স এবং রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের টিকার ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে। এ মাসেই আরো টিকা আসবে। বর্তমানে চায়না এবং কোভ্যাক্স থেকে আমরা নিয়মিত পাচ্ছি। এ মাসে সেরাম থেকে টিকা পাঠানোর ইঙ্গিত রয়েছে। আশা করছি, টিকাপ্রাপ্তিতে আর সমস্যা হবে না। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের মতো কোনো বিপত্তি ঘটলে সে ক্ষেত্রে কিছুই করার থাকে না।
জাহিদ মালেক বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, কোনো দেশে টিকাদানের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করতে হলে অবশ্যই ৮০ শতাংশ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দেশে ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
জানা গেছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চার দিন এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ছয় দিন ধরে এ কর্মসূচি চলার কথা ছিল। এ জন্য ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নেওয়া হয়েছে। ইপিআই কর্মীরা টিকা দেবেন সে প্রস্তুতিও প্রায় চূড়ান্ত, তাদের প্রশিক্ষণও শেষ দিকে।
এমন সময় কর্মসূচিটি সীমিত করে শুধু শনিবার একদিন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। এতে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৩ হাজার ৮০০ ওয়ার্ডে চার দিনে ৫৫ হাজার ২০০ সেশনে ২০০ ডোজ করে এক কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার টিকা দেওয়ার কথা ছিল তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
পৌরসভাগুলোর ১০৫৪টি ওয়ার্ডে চার দিনে ৪২১৬টি সেশনে ২০০ ডোজ করে ৮ লাখ ৪৩ হাজার ২০০ ডোজ এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৩৩টি ওয়ার্ডে ছয় দিনে ৭৭৯৪ সেশনে ২০০ ডোজ করে ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০ ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনাও একইভাবে পিছিয়ে গেল। হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল করায় এখন অর্ধেকেরও কম টিকা দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৫৬ হাজার মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ। এ পর্যন্ত নিবন্ধনের আওতায় এসেছেন ১৪ শতাংশ বা এক কোটি ৬৫ লাখ ২৩ হাজার ২৭০ জন। প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৯৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭৭৩ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৩ লাখ ৬৫ হাজার ৩৮৯ জন। অর্থাৎ প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৮ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন মাত্র ৪ শতাংশ। টিকাগ্রহীতার হার প্রথম ডোজ প্রতি ১০০ জনে ৫ দশমিক ৪৪ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ ২ দশমিক ৫২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড, চীনের তৈরি সিনোফার্মা, ফাইজার এবং মডার্নার টিকা এখন পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারা দেশে ৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪৩ ডোজ টিকা দিয়েছে। এদিন অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১১ হাজার ৮৯৮ জন। এখন পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৫৩ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৩ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৫ জন।
ফাইজারের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন এক হাজার ২৬ জন। সব মিলে ফাইজার দেওয়া হয়েছে ৫৪ হাজার ৪৪৯ ডোজ। মডার্নার টিকা এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে ৯ লাখ ২৬ হাজার ২৬৩ ডোজ, শুধু মঙ্গলবার দেওয়া হয়েছে ৮২ হাজার ৫৪ ডোজ।
এদিকে টিকা নেওয়া ছাড়া ১৮ বছরের উপরের কেউ বাইরে বের হতে পারবেন না বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের যে বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে, তা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নয়। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোথাও দেওয়া বা নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের দেওয়া ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এর আগে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, ১১ আগস্টের পর টিকা ছাড়া কেউ মুভমেন্ট করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আইন না করলেও অধ্যাদেশ জারি করে হলেও শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে।