নোয়াখালী প্রতিনিধি:: খ্রিস্টান অপবাদ দিয়ে মারধর, জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সাক্ষর নেয়া ও বাড়িঘর পুড়িয়ে উচ্ছেদের হুমকির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। বুধবার বেলা ১১টায় নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সহিদ উদ্দিন এস্কান্দার কচি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সেনবাগ থানাধীন ১ নং ছাতারপাইয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা, আব্দুল লতিফের ছেলে মো. সবুজ বলেন, আমি হেযবুত তওহীদ কর্মী। গত ১৬ এপ্রিল ধর্মীয় উগ্রবাদী আর অপরাজনীতিক চক্রের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ঘটনার ৫/৭ দিন আগে একই ইউনিয়নের চিলাদী গ্রামের মৃত তাফাজ্জল চৌকিদারের ছেলে ইমাম হোসেন তার নিকট থেকে হেযবুত তওহীদের ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম রচিত ‘ধর্ম ব্যবসার ফাঁদে’ বই কিনে একই গ্রামের সিলন মিয়ার বাড়ির জামে মসজিদের ইমামকে দেয়। মসজিদের ইমাম বইটিকে মুসলমানদের ঈমান বিধ্বংসী, ইসলাম ও আলেম বিরোধী বলে মন্তব্য করে এবং মো. সবুজ টাকার বিনিময়ে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান হয়ে গেছে বলে অপ্রপ্রচার চালিয়ে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এরপর ১৬ এপ্রিল উক্ত মসজিদের ইমাম ফয়জুর রহমান (২৮) নেতৃত্বে মো. শুভ (১৯), মো. জিহাদ (২০), রাজমিস্ত্রী জহির (৩৪), জুয়েল ড্রাইভার (৩৫), মনু (৩৪), মো. হানিফ (৪৫) সহ ২৫-৩০ জন সন্ত্রাসী বাঁশের লাঠি, লোহার রড ইত্যাদি নিয়ে “খ্রিস্টান মারো-ইসলাম রক্ষা কর” শ্লোগান দিয়ে মো. সবুজের বসত বাড়িতে আক্রমণের জন্য রওয়ানা হয়।
এসময় পথে চিলাদী গ্রামের মো. আলমগীরের চা দোকানের সামনে মো. সবুজকে পেয়েই তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি হামলা করে মারধর করে মারধরের একপর্যয়ে সবুজ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। খবর পেয়ে তার বৃদ্ধা মা লাইলী বেগম সন্তানকে বাঁচাতে ঘটনাস্থলে দৌড়ে গেলে আক্রমণকারীরা মারধর করে। এ সময় সিলন মিয়ার বাড়ির জামে মসজিদের ইমাম মো. সবুজের বৃদ্ধা মাকে বøাঙ্ক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে ছেলে নিয়ে যেতে বলে। স্বাক্ষর না করলে তারা সবুজের চোখ উপড়ে ফেলবে, হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। বৃদ্ধা মা ছেলেকে বাঁচাতে পঞ্চাশ টাকার নন জুডিশিয়াল বøাঙ্ক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর শেষে মো. সবুজের মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে লাইলী বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে খ্রিস্টান অপবাদ দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল। আমার ছেলে চোর-ডাকাত নয়। সে কোনো অপরাধ করেনি। তবু তারা আমার ছেলেকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে, আমাকেও নির্যাতন করেছে।
এসময় তিনি বলেন, আমি আমার ছেলেকে সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করিয়েছি। থানায় অভিযোগ করেছি। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলেও কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করেনি। আসামীরা থানার অভিযোগ তুলে আনতে বলছে। অভিযোগ তুলে না আনলে তারা আমার বসতবাড়ি আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবে, আমার ছেলেকে যেখানে পাবে হত্যা করবে, আমার স্বামীকে মারধর করবে, আমাদেরকে এলাকা থেকে উচ্ছেদ করবে ইত্যাদি বলে প্রকাশ্যেই হুমকি দিচ্ছে।
নির্মম নির্যাতনের শিকার মো. সবুজ ও বৃদ্ধামাতা লাইলী বেগম প্রশাসনের কাছে ঘটনার নেতৃত্ব দানকারী সহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এবং নিজ পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে সিলন মিয়া জামে মসজিদের ইমাম ইমাম হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।