অনলাইন ডেস্ক:
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নৃশংসতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সিএমএইচে মৃত্যুশয্যায় থাকা নারী নেত্রী আইভি রহমানকে খালেদা জিয়া দেখে আসার পরপরই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাবেক নেত্রী আইভি রহমানের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের দিনে আমার আইভি চাচির কথাই বেশি মনে হচ্ছে। আর একটা অবাক কাণ্ড আপনারা হয়তো জানেন না, তাঁকে যখন সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) নিয়ে যাওয়া হয় আমরা ঠিক জানি না কখন কোন মুহূর্তে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁর ছেলে-মেয়েরা তাঁর কাছে ছিল। সে সময় তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাঁকে দেখতে যাবেন বলে তাঁর ছেলে-মেয়েরা যারা বেডের কাছে ছিল, তাদের একটা কামরার মধ্যে নিয়ে তালা মেরে রাখে।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় তিন-চার ঘণ্টা নাজমুল হাসান পাপন, বোন তানিয়া, ময়না এদের সবাইকে একটা রুমে তালা দিয়ে রেখে তারপর খালেদা জিয়া যান আইভি রহমানকে দেখতে। আর খালেদা জিয়া যখন দেখে ফিরে আসেন তার পরই মৃত ঘোষণা করা হয় আইভি রহমানকে। এই কথাটা অনেকেরই জানা নেই, আমি এটা জানিয়ে রাখলাম যে কত বড় নৃশংসতা এরা করতে পারে।’
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমান, যিনি ওই বছরের ২৪ আগস্ট মারা যান।
গতকাল সকালে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রের পরিকল্পনা বিভাগে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন। সেখানে দেওয়া বক্তব্যে আইভি রহমানকে স্মরণ করেন তিনি।
২১ আগস্টের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের নিষ্ঠুরতা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু হত্যার চেষ্টাই নয়, হত্যার পর লাশ নিয়েও তারা যে কর্মকাণ্ড করেছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মারা যাওয়ার পর অনেকের লাশ তারা দিতে চায়নি। লাশ আত্মীয়-স্বজনের কাছে তারা দেয়নি।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে দলের সমর্থক এবং যারা জীবিত তারা যেহেতু সাহায্য করতে যায় এবং সারা রাত তাদের চেষ্টার পর একে একে সেই লাশগুলো হস্তান্তর করে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লাশটা পর্যন্ত দিতে চায়নি। পারলে লাশটা গুম করে ফেলত, এই ছিল অবস্থা।’
শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসা প্রদানসহ তাঁদের সুবিধা-অসুবিধায় পাশে দাঁড়িয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, একে একে অনেকেই আজ ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের তিনি দেশে, ভারতে এবং অন্য দেশে পাঠিয়েও চিকিৎসা করান। যাঁদের অনেকেই আজ আর নেই, মারা গেছেন। অনেকেই পঙ্গু হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আহতদের আমরা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে সহায়তা দিয়েছি এবং সে সময় একটা আলাদা অ্যাকাউন্ট খুলে যে ফান্ড এসেছে, তা থেকে চিকিৎসাধীন প্রত্যেককে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি এবং এখনো আমরা দিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আহত যাঁদের চিকিৎসার প্রয়োজন তাঁদের সহায়তা দিচ্ছি। মাসোহারা দিচ্ছি, তাঁদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা, বিয়েশাদি যত রকমের সহযোগিতা দরকার আমি এখনো তা করে যাচ্ছি। যাঁদের খুব খারাপ অবস্থা ছিল আর্থিকভাবে তাঁদের সাহায্য এখনো অব্যাহত আছে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমানসহ সবার জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আইভি চাচিসহ যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের সবার জন্য দোয়া চাই।’
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে এক ডজনের ও বেশি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। এই হামলায় তিনি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও তাঁর শ্রবণেন্দ্রিয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলায় আইভি রহমানসহ দলের ২২ নেতা-কর্মী নিহত এবং অন্তত ৫০০ নেতা-কর্মী, পথচারী ও সাংবাদিক আহত হন।
কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের মান ধরে রাখতে হবে
বিদেশে কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কঠোরভাবে মান যাচাইয়ের পাশাপাশি পণ্যের মান ধরে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার কথা জানান। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বিদেশে কৃষিপণ্য পাঠাবেন, সেখানে দেশের মান-সম্মানের প্রশ্ন আছে। হাইজিনের প্রশ্ন আছে, বাজার ধরে রাখতে হবে। পণ্যের মান, স্ট্যান্ডার্ড আছে, সেটা ধরে রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন, সাবধানে মাল পাঠান, কিন্তু যত্ন করে পাঠান। হাইজেনিক আইন-কানুন মেনে পাঠান।’
বন্যাপ্রবণ এলাকায় কালভার্ট নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শুধু প্রাকৃতিক খাল বা ক্যানেল থাকলে সেখানেই কালভার্ট নির্মাণ করলে চলবে না, মাঝে মাঝে যেখানে প্রয়োজন কালভার্ট তৈরি করতে হবে। এতে পানির চলাচল বৃদ্ধি পাবে। জলাবদ্ধতা হবে না।’
একনেক সভায় আজ আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে অন্যতম কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসে স্থাপিত উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর প্রকল্প। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১৫৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
একনেক বৈঠকে আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নতুন প্রকল্প সাতটি আর একটি প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৪১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে তিন হাজার ৩৩৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ থেকে দুই হাজার ৬০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
প্রকল্পগুলো হলো বিদেশে সবজি রপ্তানিতে নিরাপত্তা ও গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রাখতে ঢাকার শ্যামপুরের কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসে স্থাপিত উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর করা। এ লক্ষ্যে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৬ কোটি ৩৬ কোটি টাকা। ৬৮৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে মাদারগঞ্জ-কায়রা- মনসুরগঞ্জ (কাজীপুর)- আবদুল্লাহ মোড় (সরিষাবাড়ী)-ধনবাড়ী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, তিন হাজার ২৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহে কেওয়াটখালী সেতু নির্মাণ প্রকল্প, ২০৯ কোটি টাকা ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা (তিন পর্যায়) প্রকল্প। এ ছাড়া ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০৬ কোটি ২৫ টাকা। দিনাজপুর জেলার ঢেপা, পুনর্ভবা ও টাঙ্গন নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৮০ কোটি টাকা আর বিদ্যমান গ্রিড উপকেন্দ্র ও সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতাবর্ধন প্রকল্পে ব্যয় হবে ৭৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া আরবান রেজাইল্যান্স প্রজেক্ট : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রকল্প ব্যয় ৬৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে।