অনলাইন ডেস্ক:
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আজ ২৬ দিন হলো। কবে তিনি বাসায় ফিরবেন, সে বিষয়ে দলটির কোনো পর্যায়ের নেতার কাছে কোনো তথ্য নেই। এমনকি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরাও এ বিষয়ে এক ধরনের নীরবতা পালন করছেন।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেও উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার লন্ডনে যাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আছে। বলা হচ্ছে, সরকার ও খালেদা জিয়ার মধ্যে হিসাব-নিকাশ মিললে তাঁর বিদেশে যাওয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে। তবে পুনরায় আবেদন করা হবে কি না, তা নির্ভর করছে ওই হিসাব এবং সরকারের ‘সবুজ সংকেতের’ ওপরই। খালেদা জিয়ার পাসপোর্টও মিলবে ওই সংকেতে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, ওই হিসাব-নিকাশের কারণেই হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। কারণ হাসপাতাল থেকে ‘সুস্থ’ হয়ে বাসায় চলে গেলে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ না-ও থাকতে পারে। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের নীরবতা এবং বিএনপির কৌশলগত অবস্থান এ কারণেই বলে জানা গেছে।
যদিও দলগতভাবে বিএনপি ওই উদ্যোগ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দূরে আছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। তবে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তৎপরতা রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। ওই সূত্র মতে, খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার ও বোন সেলিনা ইসলাম সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
ওদিকে লন্ডন থেকে বিষয়গুলো তদারকি করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাই তারেক রহমানের নির্দেশনা ছাড়া সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা এ বিষয়ে গণমাধ্যমে মুখ খুলছেন না। এমনকি ঈদের পরে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও এ বিষয়ে অন্ধকারে আছেন। প্রায় এক সপ্তাহ পর গতকাল শুক্রবার খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল গতকাল বলেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) স্বাস্থ্যের অবস্থা উন্নতির দিকে থাকলেও পুরোপুরি সেরে উঠতে তাঁর সময় লাগবে।’ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘ম্যাডামের ডায়াবেটিস রয়েছে। তাঁর হার্ট ও কিডনিতেও কিছুটা সমস্যা রয়েছে। তবে তিনি দ্রুত সেরে উঠবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’ তবে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে না দেওয়ার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাঁরা (সরকার) মনে করেন, বেগম জিয়া যদি বাইরে যান, তাহলে আবার তিনি তাঁদের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করবেন। ভয় কেন? ভয়টা এ কারণেই যে এ দেশের জনগণের নেতা খালেদা জিয়া।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ম্যাডামের স্বাস্থ্য ও বিদেশে যাওয়া, এর কোনোটির বিষয়েই জানা নেই। স্বাস্থ্যের বিষয়ে খবর নিয়েও কিছু জানতে পারিনি।’
দলীয় নেতাদের মধ্যে একমাত্র দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কয়েকবার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে এসেছেন। এর বাইরে হাসপাতালে নিয়মিত যাচ্ছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যিনি খালেদা জিয়ার চিকিৎসকদলের সদস্যও। তবে দুই দিন ধরে চেষ্টা করেও ডা. জাহিদ, ডা. এফ এম সিদ্দিকী ও ডা. মো. আল মামুনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গত ২৮ এপ্রিল গঠিত ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডে এই তিনজনও রয়েছেন। সর্বশেষ গত বুধবার এই তিনজনসহ চার চিকিৎসক তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যালোচনা করলেও তাঁরা কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক বলেন দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা ছাড়া তাঁরা কিছু বলতে পারবেন না। কবে নাগাদ খালেদা জিয়া বাসায় যেতে পারবেন-এ বিষয়েও ‘চিকিৎসকদের পক্ষে এখনই বলা সম্ভব নয়’ বলেও জানান তিনি।
এভারকেয়ার হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার ফুসফুস থেকে পানি (ফ্লুইড) বের করার জন্য একটি টিউব লাগানো হয়েছে। তবে তাঁর অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে এখন সামান্যই। হাসপাতালের চিকিৎসার মান নিয়েও বিএনপি সন্তুষ্ট। কিন্তু তা সত্ত্বেও দলটির পাশাপাশি খালেদা জিয়ার পরিবারও তাঁর আগের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর চিকিৎসা লন্ডনে নিয়ে গিয়ে করার পক্ষপাতী।
তবে লন্ডনে তারেক রহমান বসবাস করায় এ প্রশ্নে সরকারের ‘রাজনীতির হিসাব-নিকাশ’ থাকা স্বাভাবিক বলে বিএনপিও মনে করে। দলটির নেতাদের মতে, সরকারের পক্ষ থেকে নানা বিষয়ে খতিয়ে দেখাটা অমূলক নয়। কারণ এখন এক ধরনের সমঝোতা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া চলে গেলেও সরকারের কোনো সমস্যা না-ও থাকতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, তা নিয়ে সরকারের আগাম চিন্তা থাকা স্বাভাবিক বলে কেউ কেউ মনে করেন।
আবার খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা দ্রুত অবনতি হলে সে দায়ও সরকার এড়াতে পারবে না বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা। ফলে খালেদা জিয়ার প্রশ্নে সরকার ঝুঁকি না নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজিও হতে পারে-এমন আশাবাদ এখনো রয়েছে। আর পরিবারের পক্ষ থেকে চেষ্টা এ কারণে এখনো অব্যাহত রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।
এর আগে গত বছরের মার্চে পরিবারের সঙ্গে সমঝোতার কারণেই সাজা স্থগিত হওয়ায় খালেদা জিয়া কারামুক্ত হয়েছেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার সর্বশেষ গত ৫ মে আবেদনটিও করা হয়েছিল পরিবারের পক্ষ থেকেই। যদিও গত ৯ মে সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি না দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এখনো পর্দার আড়ালে যা কিছু করার পরিবারের পক্ষ থেকেই করা হচ্ছে বলে বিএনপির বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।
২৭ এপ্রিল থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত ৩ মে তাঁকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয় এবং এখনো তিনি সেখানেই আছেন।
মির্জা ফখরুল ছাড়াও খালেদা জিয়ার ভাই ও বোন এবং ভাইয়ের ছেলে অভিক এস্কান্দার ঈদের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। হাসপাতালেই বিবর্ণ ঈদ কেটেছে তাঁর।