প্রাচীন কাল থেকেই মসলা ও ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহূত হয়ে আসছে আদা। মসলাজাতীয় ফসলের মধ্যে এটি অন্যতম। খাদ্যশিল্পে, পানীয় তৈরিতে, আচার, ওষুধ ও সুগন্ধি তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হয়। যেসব মসলা প্রথম এশিয়া থেকে ইউরোপে রপ্তানি করা হয়েছিল, তার মধ্যে আদা অন্যতম, যা মূলত বাণিজ্যের মাধ্যমে পৌঁছেছিল।
আমাদের দেশেও সম্ভবত এই নিয়ম প্রাচীন কাল থেকে ছিল। এ জন্যই হয়তো কেউ কোনো কাজ খুব গুরুত্বসহকারে বললে তাকে বলা হয়—আদাজল খেয়ে নেমেছে। এ কথার দ্বারা বোঝা যায় যে আদাজল শরীর ও মনকে চাঙ্গা করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বহু যুগ ধরে বদহজম ঠেকাতে, খাবারকে সহজপাচ্য করে তোলার কাজে বা ঠাণ্ডা লাগার মোক্ষম দাওয়াই হিসেবে আদার ব্যবহার হয়ে আসছে।
আদার ঔষধি গুণ বোঝানোর জন্যই অনেকে বলে ‘আদা সকল রোগের দাদা।’ কারণ আদায় রয়েছে পটাসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ, বি৬, ই, সি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এজেন্ট ইত্যাদি। যে কারণে সব বয়সী মানুষ আদা খেতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য আদা-মধুজল সুস্থ দেহ ও সতেজ মনের জন্য খুবই কার্যকর। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও আদার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশ বা চীনদেশের প্রাচীন সভ্যতায় আদার নানা অনুপানের ভূরি ভূরি উদাহরণ ছড়িয়ে আছে। নবীজি (সা.)-এর একটি হাদিসেও হিন্দুস্তানের আদার বিবরণ আছে। মুসতাদরাকে হাকেম নামক একটি হাদিসের গ্রন্থে উল্লেখ আছে, আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার হিন্দুস্তানের বাদশা নবীজি (সা.)-এর জন্য একটি কলসি উপহার পাঠান, যার মধ্যে কিছু আদা ছিল। তিনি সেগুলো সাহাবাদের টুকরা টুকরা করে খাওয়ান। সেখান থেকে আমাকেও এক টুকরা খাওয়ান। (মুসতাদরাকে হাকেম)
কিছু কিছু হাদিসবিশারদ এই হাদিসের সনদ দুর্বল বলেছেন। এই হাদিসের সনদ যদি দুর্বলও ধরে নেওয়া হয়, তার পরও এই হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে বহুকাল আগেও হিন্দুস্তানের আদা বা মসলার সুনাম আরবেও ছিল।
উল্লেখ্য, জান্নাতের শরাব দুনিয়ার শরাবের মতো ক্ষতিকর হবে না। তাতে মানুষ পাগলের মতো মাতলামো করবে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নেই তাতে দেহের জন্য ক্ষতিকর কোনো কিছু, আর তারা তাতে মাতালও হবে না।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ৪৭)