মনে সাহস আছে, তবুও কাঁপছে বুক। মন্ত্রী ফোন ধরেন, এটাই সাহস। কিন্তু এটুকু কাজের জন্য ওনাকে ফোন দেওয়া ঠিক হবে কিনা- এ ভয়ে কাঁপে বুক। মন্ত্রী ফোন ধরলেন, খোঁজ নিলেন।
কথামতো শুক্রবার বিকেলে টনকী গ্রামে এসে তিনি কৃষক শরীফ মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে সমস্যা কবলিত জমি দেখেন। কি করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব সেটিও জানতে চান। যে অনুযায়ি তিনি ওই কৃষকসহ উপস্থিত অন্যান্যদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
সেখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের কর্মমঠ খেলার মাঠের একটি নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন আইনমন্ত্রী। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি কৃষকের ফোন দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি জানান, এক মাসের মধ্যে কচুরিপানা সরিয়ে দেওয়া হবে। তিন মাসের মধ্যে খাল খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে, যাতে করে দ্রুতই কৃষকরা এখানে ফসল ফলাতে পারেন।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘আমার সঙ্গে যে দুইজন প্রার্থী আছেন তাদেরকে আমার মতো আপনারা চিনেন না। আপনারা ভাববেন না যে আমি ভোট চাওয়ার জন্য আপনাদের কাছে আসি। আমি সত্যিকারের এতিম। আপনাদের কাছে থেকে আমি সেই কষ্ট ভুলে যাই।’
তিনি জানান, যে কৃষক ওনাকে ফোন দিয়ে বলেছেন যে ১১০০ এর বেশি পরিবারের সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে তাকে তিনি চিনতেন না কিংবা তার ফোন নম্বরও ছিলো না।
এদিকে তিনমাসের মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনের ঘোষণা দেওয়ার পর মঞ্চে ছুটে যান কৃষক শরীফের বাবা আব্দুল জলিল। মঞ্চে উঠে তিনি মন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ সময় মন্ত্রীসহ মঞ্চে উপস্থিত অন্যান্যদেরকে বেশ হাসোজ্জল দেখাচ্ছিল।
এ বিষয়ে শরীফ মিয়া বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় সবার ফোন ধরেন বিধায় আমার সাহস ছিলো। তারপরও মনে হচ্ছিলো এ কাজের জন্য ফোন দিলে কি মনে করেন। আবার ভাবলাম আমার তো বিপদ। ওনাকে বিপদে পাশে পাবো ঠিকই। জলাবদ্ধতার বিষয়ে জেনে ওনি খোঁজ নিবেন বলে জানান। এরপরই আখাউড়া পৌরসভার মেয়র খোঁজ ও এলাকায় আসেন। আজ (গতকাল) মন্ত্রী নিজেই ছুটে আসেন। আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে জায়গাটি ঘুরে দেখেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।’
আব্দুল জলিল বলেন, ‘অনেকের কাছে ঘুরেও কোনো সমাধান না পাওয়া আমার ছেলেকে বলি মন্ত্রীকে ফোন দিতে। আমার এক আত্মীয় যাকে মন্ত্রী চাকরি দিয়েছেন তার কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে ছেলেকে দেই। মন্ত্রী আমার ছেলের ফোন ধরেন এবং পরে জানতে পারি তিনি নিজেই এলাকায় এসে বিষয়টি দেখবেন। আমার খুবই আনন্দ লাগছে একজন মন্ত্রী সাধারন মানুষের কথা শুনে এভাবে এলাকায় ছুটে এসেছেন।’
মনিয়ন্দ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো. খালেকুজ্জামান আলমগীর বলেন, ‘জনসভায় আসার আগে মন্ত্রী জলাবদ্ধতা এলাকা দেখেন। সেখানে থাকা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এর সমাধান সম্পর্কে জানতে চান এবং পরে সেটি সমাধানেরও আশ্বাস দেন।’
মনিয়ন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল আলম চৌধুরী দীপক বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় এলাকার মানুষের জন্য খুব আন্তরিক। একজন কৃষকের ফোন পেয়ে তিনি আমাদের এলাকায় ছুটে এসেছেন। তিনি বিষয়টি সমাধানও করে দিবেন বলেছেন।’
আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো. তাকজিল খলিফা কাজল বলেন, ‘কৃষকের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর মন্ত্রী মহোদয় আমাকে অবহিত করেন। পরবর্তীতে তিনি নিজেই আসবেন বলে আমাকে জানান। কথামতো তিনি এসে সমস্যা সমাধান করে দিবেন বলেছেন।’