Thursday , 21 November 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ

কুড়িগ্রামে প্রাণিসম্পদের প্রণোদনার টাকা বিতরণে অনিয়ম উৎকোচ ছাড়া মেলেনি সহায়তা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে সরকারের বরাদ্দকৃত প্রণোদনার টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পছন্দের লোকজনের তালিকা করে উৎকোচ নিয়ে দেয়া হয়েছে বরাদ্দের টাকা। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থার
কারণে একই পরিবারে একাধিক সদস্যকে অর্থ দেয়ার পাশাপাশি ক্রাইটোরিয়া না মানায় অর্থের অপচয় করা হয়েছে। অপরদিকে প্রকৃত অনেক ক্ষতিগ্রস্তরা পায়নি সরকারের এই প্রণোদনা সেবা। প্রকৃত পশুপালন খামারী এই প্রণোদনার টাকা বিতরণের কোন তথ্য অদ্যবধি জানেন না। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোয় সরকারের সফল উদ্যোগ ভেস্তে যেতে
বসেছে সিন্ডিকেট চক্রের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে। এদিকে পশু পালন খামারীগণের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অফিসে গবাদি পশুর রোগ-ব্যাধি বিষয়ে গেলে কোন প্রকার সহযোগিতা কিংবা ঔষধ পাওয়া যায় না। সরেজমিন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে দেখা যায় একাধিক অনিয়মের অভিযোগ। এখানে চড়য়ারপাড় গ্রামে একই
পরিবারের ৩জন সদস্যকে দেয়া হয়েছে প্রণোদনার ৩১ হাজার ২৫০ টাকা। এর মধ্যে ছোলেবিবি গরুর খামারের জন্য ১০ হাজার টাকা, তার পুত্র সোলায়মান মুরগীর খামার দেখিয়ে ১১ হাজার ২৫০ টাকা এবং অপর পুত্র জাহাঙ্গীর খামারির জন্য ১০হাজার টাকা মোবাইলে পেয়েছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ছোলে বিবির ৩টি গরু রয়েছে। তিনি ৪হাজার টাকা উৎকোচ দিয়ে প্রণোদনার ১০হাজার টাকা পেয়েছেন বলে স্বীকার করলেন।
অপরদিকে ছেলে সোলায়মানের খামার থাকলেও সেখানে কোন মুরগী পাওয়া
যায়নি। এদিকে অপর ছেলে জাহাঙ্গীরের বাড়ীতে কোন গরু পাওয়া যায়নি।
তিনি কাউকে উৎকোচ দেননি বলে জানান। একই গ্রামের ময়না বেগম ও
তার ছেলের বউ মর্জিনা বেগম পেয়েছেন ২০ হাজার টাকা। তিনি সাংবাদিকদের জানান, তালিকায় নাম ওঠাতে এক হাজার টাকা এবং মোবাইলে টাকা আসার পর ৩হাজার টাকা সিন্ডিকেট চক্রকে দিয়েছেন। মর্জিনা বেগম জানান, অফিসের লোক তালিকা করার সময় ৩ হাজার টাকা নিয়ে তালিকায় নাম দিয়েছে। কিছুদিন আগে ১০ হাজার টাকা পেয়েছি। এই গ্রামের বৃদ্ধ শমসের আলী জানান, ‘বাহে কাকো কন না। এই গ্রামের কাফি ও শাহিনকে ৩হাজার টেকা দিবার কতা কয়া ১০ হাজার টাকা পাইছং। ওমাক ১০ টেকা চা খাওয়ার জন্য দিছং। ওমাক মুই ২হাজার টেকা দিবার চায়া সময় নিছং।’ করোনায় গরু, হাঁস, মুরগী খামারী
মালিকদের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের প্রণোদনা পেতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের খামারিরা। এই প্রণোদনার টাকা পেতে তালিকায় নাম লেখাতে স্থানীয় দালাল চক্রসহ সংশ্লিষ্টদের ২/৫হাজার টাকা উৎকোচ দিতে হয়েছে সুবিধাভোগীদের। যারা সিন্ডিকেট চক্রের স্মরণাপন্ন হননি তাদের ভাগ্যে জোটেনি সরকারের প্রণোদনার টাকা। স্থানীয় বাসিন্দা
মজিবর রহমান বলেন, উৎকোচের বিনিময়ে সরকারি চাকরিজীবী পরিবারের
সদস্যসহ সচ্ছল খামারীরা প্রণোদনা পেয়েছেন। আর যারা উৎকোচ দিতে
পারেনি তাদের প্রণোদনার তালিকায় নামই ওঠেনি। সিন্ডিকেট চক্রের
সদস্য আব্দুল কাফি উৎকোচ নেবার অভিযোগ অস্বীকার করলেও তার পিতা,
আত্মীয়-স্বজনসহ প্রায় ৪০জন প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন বলে জানান।
তিনি তালিকা প্রণয়নে কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করেছেন বলে
স্বীকার করেন। কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাংবাদিকদের
সুবিধাভোগীদের তথ্য দিতে রাজি হননি উলিপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ
কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল আজিজ। উৎকোচ নেবার বিষয়টি অস্বীকার করে
সিন্ডিকেট চক্রের নাম জানতে চান এবং লিখিত অভিযোগ পেলে খতিয়ে
দেখবেন বলে জানান তিনি। এই বিষয়ে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, প্রণোদনা দেয়া শুরু হয়েছে।
উপজেলার খামারিদের তালিকা সুপারিশ করেছি। আমার কাছে
সুপারিশকৃত তালিকাটি নেই উপজেলা প্রাণিসম্পদের কাছে রয়েছে।
উৎকোচ নেবার বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে
ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল হাই সরকার
জানান, উৎকোচ নেবার কোন সুযোগ নেই। আমরা তালিকা করার সময়
বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তালিকা করেছি। খামারিদের এনআইডি, মোবাইল
নম্বরসহ খামারির এবং পালিত প্রাণীর ছবি অ্যাপসে আপলোড করা
হয়েছে। তবে কেউ যদি অভিযোগ করে সেক্ষেত্রে বিষয়টি খতিয়ে দেখা
হবে বলে জানান তিনি। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সরকারের প্রণোদনার
জন্য জেলার ৯টি উপজেলার ৩৩হাজার ৫৪৫টি খামারির তালিকা অ্যাপস এর
মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। ৫টি ক্যাটাগরির মাধ্যমে সুবিধা ভোগীরা মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে তারা সরকারের এককালীন এই প্রণোদনা পেতে শুরু করেছেন ১৭ ফেব্রুয়ারি হতে। গরুর খামারীরা সর্বনিম্ন ২টি গরুর জন্য ১০ হাজার টাকা, ৬-৯টি গরুর জন্য ১৫ হাজার টাকা, ১০-২০টি গরুর জন্য ২০ হাজার টাকা। সোনালী মুরগী খামারীরা ১০০-৫০০টি মুরগির জন্য ৪,৫০০ টাকা, ৫০১-১০০০টি মুরগির জন্য ৬,৭৫০ টাকা, ১০০১টি মুরগির ঊর্ধ্বে ৯ হাজার টাকা। ব্রয়লার মুরগির খামারীরা ৫০০-১০০০টি মুরগির জন্য ১১,২৫০ টাকা, ১০০১-২০০০টি মুরগির জন্য ১৬,৮৭৫ টাকা এবং ২০০১টি মুরগির ঊর্ধ্বে ২২,৫০০টাকা। লেয়ার মুরগির খামারীরা ২০০-৫০০টি মুরগির জন্য ১১,২৫০ টাকা, ৫০১-১০০০ মুরগিতে ১৬,৮৭৫ টাকা এবং ১০০১টির ঊর্ধ্বে ২২,৫০০ টাকা। হাঁস খামারীরা ১০০-৩০০টি হাঁসের জন্য ৩,৩৭৫ টাকা, ৩০১-৫০০টি হাঁসে ৬,৭৫০ টাকা এবং ৫০১টির ঊর্ধ্বে ১১,২৫০ টাকা।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply