কুষ্টিয়া :- দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে বাড়ছে নিত্যপন্য চালের দাম। কুরবানীর ঈদের আগে দাম স্থিতিশীল থাকলেও ঈদের পর কয়েক দফায় চালের বাজার ফের বেড়েছে। সব থেকে বেশি দাম বেড়েছে মোটা চালের।মিল গেটেই কেজি প্রতি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়। যা ঈদের আগেও ছিল ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা। আর মিনিকেট (সরু), আঠাশ, পায়জাম, কাজললতা ও বাসমতি চালের দামও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। মিল মালিকরা বলছেন ধানের দাম বাড়ায় ঈদের পর কেজি প্রতি সব চাল ১ থেকে ২ টাকা বেড়েছে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা আরও বেশি দামে বিক্রি করছেন। তবে চাল আমদানির খবরে কেনাবেচা কমে গেছে। বিপুল পরিমান চাল প্রতিটি মিলে স্টক হয়ে পড়ে আছে। এতে মিল মালিকদের লোকসান হচ্ছে।মিল মালিক, কৃষক ও খাদ্য কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রমজানের মধ্যে সারা দেশে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়। নতুন ধান মিলগুলোতে আসায় চালের বাজার ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ঈদের আগ পর্যন্ত মিনিকেট, কাজললতা, বাসমতি, আঠাস ও মোটা পারিজা জাতের চালের বাজার কেজিতে মিল গেটে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত কমে যায়। তবে ঈদের পরের চিত্র মিল গেটে একেবারে আলাদা। তবে এ চিত্র দ্রুত বদলে যেতে শুরু করে। রমজান থেকে কুরবানীর ঈদের আগ পর্যন্ত ৪ দফায় দাম বেড়ে যায়। নতুন করে ঈদের পর আরেক দফা বেড়েছে।
দাদা রাইস মিলের মালিক ও জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান জানান,ঈদের পর একদফা দাম বেড়েছে। কারন মনপ্রতি ধানের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এ কারনে মিল মালিকরাও দাম বাড়িয়েছেন। তবে চাল আমদানির খবরে সবাই শঙ্কিত। এ কারনে কেনাবেচা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আমার মিল থেকে যেখানে ১০ ট্রাক চাল বাইরে যেত এখন মাত্র ২ ট্রাক যাচ্ছে। মিলে প্রতিদিন চাল স্টক হচ্ছে। এখন সব মিলিয়ে ১০০ ট্রাকের ওপরে চাল স্টক হয়ে পড়ে আছে। এমন অবস্থা খাজানগরের সব মিলে।
খাজানগরের একাধিক মিল মালিকের সাথে কথা হলে জানান, সরকারের আমদানির সিদ্ধান্তের কারনে ব্যবসায় কিছুটা প্রভাব পড়ছে। ঢাকা ও চট্রগ্রামের যারা বড় ব্যবসায়ী তারা চালের অর্ডার দিচ্ছেন না। এতে করে প্রতিটি মিলে প্রচুর চাল স্টক হয়ে গেছে। অনেকে মিল বন্ধ করে দিয়েছেন। নতুন ধান বাজারে না আসা পর্যন্ত অনেকেই আর ব্যবসা করবেন না।
পৌর বাজারের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঈদের পর মিল মালিকরা সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়েছেন। এখন ভাল সরু চাল কেজিপ্রতি তারা ৫২ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি করছেন। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪৫ টাকায়। ঈদের আগেও এসব চালের দাম কম ছিল। আর বাসমতি ৬২ টাকায় বিক্রি করছেন।
লিয়াকত রাইস মিলের মালিক হাজি লিয়াকত হোসেন বলেন, ধান ও চালের সংকট নেই। তবে ধানের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ার কারনে চালের বাজারও বাড়ছে। নতুন ধান উঠলে সেক্ষেত্রে বাজারে প্রভাব পড়তে পারে।
ফ্রেস এগ্রোফুডের এমডি হাজি ওমর ফারুক বলেন, মিলগেটে আঠাশ ও কাজললতা চাল প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) ৪ হাজার ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাসমতি প্রতিকেজি ৫৮ থেকে ৫৯ টাকা আর মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। ঢাকা ও বাইরের ব্যবসায়ীরা মিল গেট থকে আরো ৪ থেকে ৫ টাকায় বেশি বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, উত্তর ও দক্ষিনবঙ্গের আড়তে আজ পর্যন্ত সরু ধান প্রতিমণ ১ হাজার ২০০ টাকা, কাজললতা ও আঠাশ ১ হাজার ১০০ টাকা ও বাসমতি ১ হাজার ২৫০ টাকায় কিনতে হয়েছে। খরচ যোগ করে মিল গেটে আসতে আরো ৫০ টাকা যোগ করতে হয়। এতে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে গেছে। বেচাকেনা কমে যাওয়ায় অনেক মিলে উৎপাদন কমে আসার পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় আইলচারা ধানের হাটে গত সপ্তাহের তুলনায় ধানের দাম মনে আরো মান ভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। শুকনা ধান গড়ে এক হাজার থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কৃষক আলম মালিথা ও হাসিবুর রহমান জানান, কৃষকদের ঘরে এই মুহুর্তে তেমন ধান নেই। বড় কৃষকদের ঘরে এখনো কিছু ধান আছে। তারা ভাল দাম পাচ্ছেন। প্রতি মন শুকনা ধান স্থানীয় বাজারগুলো প্রায় ১ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।