কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
বর্তমানে কুষ্টিয়ার কৃষিপ্রধান অন্যান্য অঞ্চলের মতো কুষ্টিয়া জনপদের চিত্র একেবারেই অভিন্ন। এক সময় এখানকার বিল ও গ্রামীণ পলিবাহিত উর্বর এই জনপদের মানুষদের কাক ডাকা ভোরে ঘুম ভাঙত লাঙল জোয়াল আর হালের গরুর মুখ দেখে। এখন যন্ত্রের আধিপত্যে সেই জনপদের মানুষদের ঘুম ভাঙে ট্রাক্টরের শব্দে।জমিতে বীজ বপন অথবা চারা রোপণের জন্য জমির মাটি চষার ক্ষেত্রে হাল ব্যবহার করে আর ওই মাটি মাড়িয়ে সমান করার জন্য মই ব্যবহার করা হতো। কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত অন্যতম পুরনো যন্ত্র। এই কৃষিজমি আবাদের উপযোগী করার জন্য ষাঁড়, মহিষ প্রয়োজন হতো। লাঙল দিয়ে হালচাষ করতে কমপক্ষে একজন লোক ও এক জোড়া গরু অথবা মহিষ প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লাঙল জোয়াল, মই, গরু ও মহিষ।
স্থানীয় প্রকৃত প্রবীণ কৃষকরা জানান, এক সময় কুষ্টিয়ার প্রায় প্রতিটি বাড়ির প্রতিটি ঘরেই ছিল গরুর লালন-পালন। গরুগুলো যেন পরিবারের এক একটা সদস্যের মতো। তাদের দিয়ে একরের পর একর জমি চাষ করার কাজে ব্যবহার করা হতো। তাজা ঘাস আর ভাতের মাড়, খৈলের ভুসি ইত্যাদি খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করে তোলা হালের জোড়া বলদ দিয়ে জমি চষে বেড়াতেন কৃষক। কুষ্টিয়ার গ্রামীণ জনপদে থাকা জমিগুলোতে এই চাষাবাদ করা হতো। হালচাষের জন্য ‘প্রশিক্ষিত’ জোড়া বলদের মালিককে সিরিয়াল দিতে হতো জমি চষে দেয়ার জন্য। চাষের মৌসুমে তাদের কদর ছিল অনেক। কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার ইবি থানার উজান গ্রাম ইউনিয়নের গজনবীপুর গ্রামের কৃষ্ক মোহাম্মদ জাফর আলী মন্ডল বলেন, অনেকের জীবনের সিংহভাগ সময় কেটেছে চাষের লাঙল জোয়াল আর গরুর পালের সঙ্গে।
এক সময়ের হালচাষের দীর্ঘ স্মৃতি কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকে হালচাষের কাজ দেখভাল করতেন। বর্তমান সময়ে ট্রাক্টরের দাপটে এখন আর গরু দিয়ে হালচাষ হয় না বললেই চলে। গ্রামীণ সমাজের অনেকেই এখন গরু পালন ছেড়ে দিয়েছেন। এখন আমরা সেই পুরনো স্মৃতিগুলোকে আঁকড়ে ধরে কষ্টের দিনগুলোর কথা মনে করে সময় পার করছেন বলে জানান কৃষক হরফ আলী মন্ডল । গরু দিয়ে হালচাষের উপকারিতার কথা বর্ণনা করে এলাকার উপসহকারী কৃষি অফিসার আশরাফ সিদ্দিকি বলেন গরু দিয়ে হালচাষ করলে জমিতে ঘাস কম হতো, হালচাষ করার সময় গরুর গোবর সেই জমিতেই পড়ত। এতে করে জমিতে অনেক জৈব সার হতো, এ জন্য ফসলও ভালো হতো।
বর্তমানে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার কৃষি ক্ষেত্রে অনেক সাফল্য নিয়ে এসেছে স্বীকার করে কুষ্টিয়ার কৃষকেরা।