কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা সেচ প্রকল্পের অধীনে কয়েক লাখ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া হতো। সেচের মাধ্যমে কুষ্টিয়াসহ ৫টি জেলার চাষীরা বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ করতো। কিন্তু জিকের অধীনে বিভিন্ন ছোট বড় খালের খনন কাজ না করায় তা ভরাট হয়ে গেছে। পানির অভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে মাঠের বোরা চাষসহ লক্ষাধিক একর ফসলের আবাদ। প্রতি বছর বোরো মৌসুমের প্রথমেই জিকে সেচ প্রকল্পের পানি ছাড়লেও এবার একটু দেরী করে ছেড়েছে। তারপরও শাখা খালগুলো খনন না করায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি সবখানে পৌছাচ্ছেনা। জিকে সেচ প্রকল্প মাঝে মধ্যে বিভিন্ন স্থানে খাল খনন করলেও নিয়মতান্ত্রিকভাবে খনন না করায় জিকের অধীনে আবাদকৃত জমিতে আগের মতো আর পানি পৌছায়না।সম্প্রতি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আইলচারা ইউনিয়নের বল্লভপুর -হাজী মোড় থেকে জিকের ক্যানেল খনন কাজ শুরু হয়েছে। বড় আইলচারা বাক্স ব্রীজ পর্যন্ত খনন কাজ সম্পাদনের পথে। কিন্তু সেখানে যেভাবে খনন করা হচ্ছে এতে সেখানে খনন করা আর না করা সমান। এর আগে জিকের প্রশস্থ ক্যানেলটি ভরাট করে ছোট করে ফেলানো হয়েছে। এখন ক্যানেলের মাঝখানে সরু একটু নালার মতো রয়েছে। একটি ঠিকাদারের মাধ্যমে যে মাটি খনন করা হচ্ছে এতে পাড়ের কিছু ঘাস ও মাটি কাটা হচ্ছে। ক্যানেলের দুপাড়ে না কেটে একপাড়ে কেটে দায়সারাভাবে কাজ সম্পাদন করা হচ্ছে। পাড়ের মাটি কেটে রাস্তার উপর যেগুলে রাখা হয়েছে এতে পথচারীদের আরো দূর্ভোগ বেড়েছে। রাস্তার উপর রাখা মাটিগুলো সমান না করায় বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। তাই দায়সারাভাবে কাজ সম্পাদন না করে ভালোভাবে খনন করার দাবী জানান স্থানীয়রা।জানা যায়, ১৯৬৯ সালে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও যশোর জেলার ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়ার জন্য সরকার ১৯৫৪ সালে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রীজ ও লালন শাহ সেতুর ১ কিলোমিটার ভাটিতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা জিকে সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু করে। ১ হাজার ৬’শ ৬৫ কিলোমিটার সেচ খাল দিয়ে বছরে দু’বার ১ লাখ ২০ হাজার কৃষককে সেচ সুবিধা দেয়া হতো। সে সময় জিকের ক্যানেলে প্রায় সময়ই পানি থাকতো। মানুষ গোসল করা থেকে শুরু করে সকল কাজে ব্যবহার করতো। সেচ প্রকল্পের অধীনে ১ লাখ ৪২ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পাচ্ছে না। প্রকল্পের ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান সেচ খাল ও ১ হাজার ৪ শত ৬২ কিলোমিটার শাখা খাল প্রায় পানি শূন্য। পানির অভাবে থমকে গেছে চাষীদের মাঠের চাষসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ।চলতি বোরো মওসুমে কুষ্টিয়া অঞ্চলের মাত্র ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা করলেও খাল ভরাট হওয়ায় তা ব্যাহত হবে বলেে আশংকা করছে। জিকের ছোট-বড় খালগুলো আর আগের অবস্থায় নেই। যে যার মতো ভরাট করে ব্যবহার করছে। এতে কৃষি আবাদসহ পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। জিকের জায়গা অবৈধ দখলদাররা দখল করায় এলাকার চাষীরা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।জিকের প্রধান খালসহ শাখাখালগুলো খনন না করায় সঠিকভাবে পানি পাচ্ছে না চাষীরা। এ কারণে প্রতি মৌসুমেই অনাবাদী থাকছে হাজার হাজার একর জমি। জিকে কর্তৃপক্ষ প্রধান খালসহ শাখাখালগুলো খনন ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে কৃষকদের পানির নিশ্চয়তাদান করবেন এটাই প্রত্যাশ্যা কুষ্টিয়াবাসীর। সেই সাথে আইলচারার জিকে ক্যানেলের যেসব জায়গায় খনন করা হচ্ছে। সে সমস্ত জায়গায় ভালোভাবে খনন করে পানি সেচ সুবিধা নিশ্চিত করবেন এ দাবী জিকের অধীনে আবাদকৃত সকল কৃষকদের।