কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনার টিকা নিতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। জেলায় দিন দিন করোনার টিকা নিতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। রোববার (১১ জুলাই) কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা টিকাদান বুথের সামনে দেখা যায় দীর্ঘ সারি। সেখানে জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। চাপ সামলাতে টিকাদান কেন্দ্রটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কলকাকলী স্কুলে।সরেজমিনে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনের তুলনায় টিকা নিতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। টিকা নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে মানুষকে। সকালে টিকা কার্যক্রম শুরু করার আগেই জড়ো হতে থাকেন হাজারো মানুষ। টিকা দেওয়া শুরু হয় সকাল ৯টায়। বেলা বাড়ার সঙ্গেই ধারণক্ষমতার অধিক মানুষ জড়ো হন হাসপাতালের সামনে। শেষে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টিকা কেন্দ্র পরিবর্তন করে পাশের কলকাকলী স্কুলে নেওয়া হয়।এদিকে মানুষের চাপ বাড়ায় টিকা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। মানা সম্ভব হয়ে উঠছে না সামাজিক দূরত্ব। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।অন্যদিকে টিকা নিতে আসা অনেকে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকা না পাওয়ার এবং ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। টিকা দেওয়ায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগও করেছেন তারা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মানুষের উপস্থিতির কারণে কিছুটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে টিকাদান কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।টিকা নিতে আসা কয়েকজন নারী-পুরুষ বলেন, ধারণক্ষমতার বেশি মানুষ টিকা নিতে এসেছে। কর্তৃপক্ষের নানা অব্যবস্থাপনা দেখা যাচ্ছে। জায়গা, বুথ ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব রয়েছে। যেকোনো সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।সরকারি এক চাকরিজীবী বলেন, এখানে টিকা নিতে এসেছি নাকি করোনাভাইরাস সঙ্গে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি বলতে পারছি না। হাসপাতালে সকাল থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এখন এক কেন্দ্র থেকে আরেক কেন্দ্রে এসেছি। এখনও টিকা পাইনি। হাজার মানুষ, অথচ কোনা প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ। অনেকের মুখে মাস্ক পর্যন্ত নেই। একজনের গা ঘেঁষে আরেকজন দাঁড়িয়ে আছেন সারিতে।জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, চার-পাঁচ হাজার মানুষের ভিড়। করোনার টিকা নিতে আসা লোকজনের মধ্যে কে করোনাভাইরাস বহন করছেন তা বলা মুশকিল। সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আগের তুলনায় টিকা গ্রহণে আগ্রহীর সংখ্যা বাড়ছে। মানুষের মনে যে শঙ্কা ছিল তা দূর হয়ে গেছে। তাছাড়া নতুন করে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরুর আগে নিবন্ধনের বয়সসীমা ৪০ বছর ছিল। এখন সেটা কমিয়ে ৩৫ বছর করা হয়েছে। এছাড়া এবার অগ্রাধিকার তালিকায় যুক্ত হয়ে কৃষক, শ্রমিক ও আইনজীবীরা টিকা পাচ্ছেন। এজন্য মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, সুশৃঙ্খলভাবে ধৈর্য ধরে দাঁড়ালে সবাইকে আমরা টিকা দিতে পারব। কিন্তু মানুষের ধৈর্য নেই। হাসপাতালের কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হচ্ছে সেখানে মানুষের ভিড় সামাল দেওয়া মুশকিল। আজ হঠাৎ করে চার-পাঁচ হাজার মানুষের সারি। আর হাসপাতালে আমাদের দুটি বুথে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। মানুষের উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে বুথের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। জায়গা সংকটের কারণে হাসপাতাল থেকে টিকাদান কেন্দ্র সরিয়ে কুষ্টিয়া কলকাকলী স্কুলে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।